Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের আগ্রাসী পানি প্রত্যাহার নীতি নদী মাতৃক বাংলাদেশ মরুভূমি হবে -কমরেড খালেকুজ্জামান

বগুড়া থেকে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে বাসদের রোড মার্চ

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বাসদ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের উদ্যোগে দুইদিনব্যাপী রোড মার্চ বগুড়া থেকে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে রওয়ানা হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় বগুড়ার সাতমাথায় বাসদ বগুড়া জেলা শাখার আহŸায়ক অ্যাডঃ সাইফুল ইসলাম পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক পথ সভার পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে রোড মার্চের উদ্বোধন করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান কর্তৃক উদ্বোধনের পরপরই রোড মার্চ এর যাত্রা শুরু হয়। রোডমার্চের উদ্বোধনকালে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, “নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের হুমকির মুখে। উজানে একতরফা পানি সরিয়ে নেয়ার ভারতীয় আগ্রাসী তৎপরতা ও দেশের ভিতরে সরকারের নতজানু, ভ্রান্তনীতি ও দখল-দূষণে ১ হাজার ২শ’ নদীর সংখ্যা কমে ২শ’ ৩০ এ নেমে এসেছে এবং বড় বড় নদ-নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তায় এবারে শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। চলতি বছর ২০ জানুয়ারি তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ইতিহাসে সর্বনিম্ন মাত্র ৪শ’ কিউসেক। তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে যে সেচ সুবিধা প্রদান করা হত তা কমতে কমতে ইতিমধ্যে বন্ধ হওয়ার পথে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “শুধু তিস্তা নয় ভারত থেকে আগত ৫৪টি নদীতে ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে সকল প্রকার আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি লংঘন করে পানি প্রত্যাহার করছে। ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা সকলের জানা আছে। সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীর উজানে বরাক নদীর টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে ভারত জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে কার্যত সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আন্তঃনদী সংযোগের খড়্গ মাথায় ঝুলছে। ভারতের এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে এবং ভারতের আগ্রাসী পানি প্রত্যাহার নীতি নদীমাতৃক সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ অনিবার্যভাবে মরুভূমিতে পরিণত হবে।”
তিনি আরো বলেন, “ভারতের শাসকগোষ্ঠী তাদের হীনস্বার্থে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কখনো পানি সমস্যাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। কখনো সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নামে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। একইভাবে বর্তমান সরকারসহ অতীতের সকল সরকার নির্লজ্জভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থেকে কার্যত ভারতের আগ্রাসী পানি নীতিকে সমর্থন যুগিয়েছে। শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেকাংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। ভারত একের পর এক নদীর পানি প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশের সরকার কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাসদসহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলসমূহের পক্ষ থেকে বার বার দাবি জানানো সত্তে¡ও ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কেউই কর্ণপাত করছে না। জোট-মহাজোটের ভোটের রাজনীতির কাছে দেশ, জনগণ, নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোন কিছুই গুরুত্ব পায় না।”
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নওগাঁ জেলা বাসদ সমন্বয়ক কমরেড জয়নাল আবেদিন মুকুল, বাসদ সিরাজগঞ্জ জেলা আহŸায়ক কমরেড নব কুমার কর্মকার, বাসদ রাজশাহী জেলা আহŸায়ক কমরেড দেবাশীষ রায় প্রমুখ। উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে রোডমার্চটি তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে সাতমাথা থেকে শহর প্রদক্ষিণ করে মাটিরডালি পর্যন্ত মিছিল করে যায়। পথিমধ্যে রোডমার্চ মহাস্থানগড়, মোকামতলা, ফাঁসিতলা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, শঠিবাড়ীতে সমাবেশ করে রংপুরে রাত্রীযাপন করবে এবং ১৬ ফেব্রæয়ারি সকাল ১০টায় রংপুর প্রেসক্লাব থেকে মেডিকেল মোড়, পাগলাপীর, তারাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জলঢাকায় তিস্তা ব্যারেজ গিয়ে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এবং সমাপনী সমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ