Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘এক ব্যক্তির’ স্বার্থের কারণে দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঢাকায় ৫ হাজার সিসি ক্যামেরা বসাতে একনেকে সায়; ৩,৬৮৪ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন : কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে ময়নামতি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ‘একজন ব্যক্তির স্বার্থে আঘাত লাগায়’ মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। পরে তাদের বাদ দিয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়।
রায়ে বিচারক বলেছেন, এই মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।
প্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ওই ‘মিথ্যা অভিযোগের’ পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন।
“একটা ব্যক্তির স্বার্থে আঘাত লাগল বলে, সেই ব্যক্তি দেশের এত বড় একটা মূল্যবান প্রোজেক্ট... যা হলে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হতে পারত...।”
শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশউরাও জড়িত ছিলেন।
সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকে ছিলেন নোবেল জয়ী বাংলাদেশউ মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।
গতকাল শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ করা হয়েছিল বা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদের কাজের গতিকে ব্যাহত করতে যারা তৎপর ছিল... সেটাও যে মিথ্যা, তা প্রমাণিত হয়েছে। ওই সময়ও আমি বলেছি, এখন আন্তর্জাতিকভাবে এটা প্রমাণিত।”
নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হলে এতদিনে তা শেষ হয়ে যেত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যা প্রবৃদ্ধি আছে, তা আরও এক ভাগ বেশি হতে পারত।
“আমরা ৮ ভাগে চলে যেতে পারতাম। সে সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে দিয়েছিল,” বলেন তিনি।
দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওই মামলায় কারাগারেও যেতে হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের প্রতি মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল। তাদের এই মিথ্যা অভিযোগে আমাদের একটা সচিবকে অযথা একটা বছর জেল খাটতে হয়। এর থেকে আর লজ্জাজনক কিছুই নাই। একটা মানুষ জীবনে কতটা আঘাত পেতে পারে?”
“একজন সচিব তার জীবনে যে মূল্যবান সময় নষ্ট করল, তার সেবা থেকে দেশকে বঞ্চিত করা হলো, একটা মিথ্যা অভিযোগ থেকে... অহেতুক একটা মিথ্যা অপবাদ দেয়া।”
দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে। সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নিজের নয়, দেশের ভাগ্য গড়তে এসেছে। তাই শুরু থেকেই বাংলাদেশ বলেছে, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। একজন ব্যক্তির স্বার্থে আঘাত না লাগলে, এতদিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটত।
একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সড়কগুলোতে ৫ হাজার সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে; তার সঙ্গে লাগানো হবে ৪০ হাজার নতুন এলইডি বাতি। এজন্য ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এলইডি সড়কবাতি, সিসিটিভি ক্যামেরা, সিসিটিভি কন্ট্রোল সেন্টার সরবরাহ ও স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক।
প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে প্রায় ৩৫৪ কোটি টাকা দেয়া হবে। বাকি ৮৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার জোগান দেবে সিটি করপোরেশন।
এটিসহ ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প গতকালের বৈঠকে অনুমোদন পায়। সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানিয়েছেন। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৮৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সংস্থান হবে; বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৯৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বিদ্যমান সড়ক বাতিগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় রাতে পথচারীরা অনেক সময় সমস্যায় পড়েন। এখন পথচারীদের নির্বিঘœ চলাচল এবং পথচারীদের সুবিধার্থে ৪০ হাজার সর্বাধুনিক এলইডি সড়ক বাতি লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”
এ প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটির ইন্টার সেকশনসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা এবং কেন্দ্রীয় সিসিটিভি কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপন করা হবে।
“এ কার্যক্রমের ফলে ঢাকা উত্তরের জনগণ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে মোবাইল টিম থাকবে। ফলে ক্রাইম ও যানজট কমে আসবে,” বলেন মুস্তফা কামাল।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু সেবা প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৯৮০ কোটি টাকা। আলীকদম-জালানীপাড়া-করুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৪ কোটি ১ লাখ টাকা। গোপালগঞ্জ এবং বাগেরহাট পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নতকরণ প্রকল্প। এর ব্যয় ১৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। কোর্ট হতে রাজশাহী বাইপাস সড়ক পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
বৃহত্তর নোয়াখালী, ফেনী ও ল²ীপুর জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের সংশোধিত প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ঢাকা কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। সাভার সেনানিবাসে মিলিটারি পুলিশ সেন্টার ও স্কুল নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এখন থেকে যেখানে রেল ক্রসিং থাকবে সেখানে ওভারপাস নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রাস্তা তৈরির মাধ্যমে সীমান্ত চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে ‘ময়নামতি’
এদিকে প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের নাম ‘ময়নামতি’ হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা বিভাগের জন্য ওই নামই তাকে বলেছেন।
কুমিল্লা-১০ আসনের সাংসদ কামাল বলেন, “আজকে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, কুমিল্লা বিভাগের নাম ময়নামতি রাখা হবে। ভবিষ্যতে কোনো জেলার নামে আর বিভাগ হবে না। নতুন নামকরণ করা হবে।”
প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী দেশে বর্তমানে আটটি বিভাগ রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও বরিশালের পর ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিভাগের চার জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় অনুমোদন পায়।
তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সেদিন জানিয়েছিলেন, ঢাকা বিভাগ ভেঙে ফরিদপুর নামে একটি বিভাগ এবং কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলা নিয়ে আরেকটি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তও সরকারের রয়েছে।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরই সংসদে বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বিভাগ ভেঙে কুমিল্লাকে আলাদা বিভাগ করা হলে ফেনীকে কোন বিভাগে দেবেন, তা নিয়ে তিনি সমস্যায় রয়েছেন।
দেশের নবম বিভাগ হিসেবে ময়নামতি বিভাগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তও নিকারের অনুমোদন পেতে হবে। কোন কোন জেলা, আর কত আয়তন নিয়ে নতুন এই বিভাগ হবে, তা চূড়ান্ত হবে তখনই।



 

Show all comments
  • নাসির উদ্দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫৭ পিএম says : 0
    আমার মতে বিভাগের নাম কুমিল্লা রাখলেই ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আশিক ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:০৮ পিএম says : 0
    ইউনুস সাহেবের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোন ভিত্তি আছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:০৯ পিএম says : 0
    কেউ যদি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে থাকে তাহলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ফারজানা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:১০ পিএম says : 0
    যে যা-ই করুক না কেন আমরা তো কলঙ্কমুক্ত হলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • ওয়াদুদ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:১৩ পিএম says : 0
    সিসি ক্যামেরাগুলো যেন সব সময় সচল থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ismail hossain ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৪:৪১ পিএম says : 0
    আমার মতে বিভাগের নাম কুমিল্লা রাখলেই ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ