পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বসন্ত শুধু ঋতুরাজই নয়, এই বসন্তের সঙ্গে বাঙালিদের স্মরণীয় ইতিহাসও জড়িত। রাজনীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বসন্ত ঋতুতে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ’৭১ সালের মার্চ মাস এই সাক্ষ্য দেয়।
তাই বিশিষ্টজনরা মনে করেন বসন্ত ঋতু বাঙালিদের ভালবাসায় উত্তাল করে না। উদ্বুদ্ধ করে আন্দোলন সংগ্রামেও। বসন্তকে নিয়ে যেমন আছে নানা ধরনের কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান, নাটক, চিত্রাঙ্কন, তেমনি একুশ নিয়ে আছে এসব রচনা। সব মিলিয়ে বাঙালিদের সংস্কৃতি। তবে ভাষা-আন্দোলন শুধু ১৯৫২ সালের বিষয় নয়। এর প্রেক্ষাপট সুদূর বিস্তৃত। যার সূচনা হয়েছিল ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে। আর শেষ পরিণতি লাভ হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে। এর ফলে বাঙালি জাতি পেয়েছিল বাংলাকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা ও একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে। তবে কেবলমাত্র ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদের ভাষার দাবি করেই থেমে থাকেনি। এর পরেই শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন। যে বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার দাবি ওঠে, সে বছর পুরোটাজুড়েই ছিল কেবল ভাষা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে আলোচনা ও প্রতিশ্রæতি। বাংলা ভাষার দাবিতে পালিত হয়ে একাধিক কর্মসূচি। এর মধ্যে ছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার দাবিতে একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে বের হওয়া মিছিলে পুলিশ বাহিনী হামলা চালায় এবং মিছিল থেকে শামসুল হক, কাজী গোলাম মাহবুব, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহমদসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ১৫ মার্চ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর পূর্ব পাকিস্তান সফরের প্রাক্কালে বিস্ফোরোন্মুখ পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাজা নাজিমুদ্দিন স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটির সাথে একটি বৈঠকে বসেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটি অঙ্গীকার নামায় সই করেন।
এর কিছুদিন পর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ‘স্টুডেন্টস রোল ইন নেশন বিল্ডিং’ শিরোনামে ভাষণ প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একটি এবং সেটি হবে উর্দু। কারণ একমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের মুসলিম পরিচয়কে তুলে ধরে।’ এর ঠিক দু’দিন পরে ২৬ মার্চ জিন্নাহ ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে ভাষার বিষয়ে বৈঠক করেন এবং বৈঠকে তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে তার অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন। সেই সাথে ১৫ মার্চ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটির সাথে খাজা নাজিমুদ্দিনের বাংলাকে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির অঙ্গীকারনামা বাতিল ঘোষণা করেন।
২৮ মার্চ ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে এক রেডিও ভাষণে জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে তার মনোভাব পুনর্ব্যাক্ত করেন। ৬ এপ্রিল খাজা নাজিমুদ্দিন ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেমবিøতে বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা এবং ডাক টিকেট, ট্রেন টিকেট, স্কুলসহ সর্বত্র উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব করা হয়। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপূরুষ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন করে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব করেন। কিন্তু ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সংশোধনী বাতিল করে খাজা নাজিমুদ্দিনের মূল প্রস্তাবটি প্রাদেশিক গণপরিষদের গৃহিত হয়। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পুনরায় দানা বাদে। লিয়াকত আলী আগমন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একটি সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অন্যান্য দাবি দাওয়ার পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা ও ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেমবিøতে গৃহীত প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়ন করার দাবিতে একটি দাবিনামা প্রস্তুত করা হয়। দাবি নামাটি তৈরি করেন আব্দুর রহমান চৌধুরী। দাবি নামা প্রস্তুতের সাথে জড়িত ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুবসহ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটির নেতৃবৃন্দ। এভাবেই শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের দাবিতে প্রথম দিকের প্রস্তুতি। আর গড়ে ওঠে বাংলা ভাষার দাবিতে জনসমর্থন। সচেতন হতে থাকে বাঙালি বীর সন্তানরা। ভাষার দাবিতে সোচ্চার ছাত্র-জনতা বায়ান্নর ফেব্রæয়ারিতে নেমে আসে রাস্তায় ঢেলে দেয় বুকের তাজা রক্ত। যার ফলে আজ বাংলাকে একটি ভাষা হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। আর এই ভাষার মাস ফেব্রæয়ারির স্মরণে বাংলা একাডেমীতে আয়োজন করা হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।