পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : এবার যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে ব্যারিকেড দিয়ে চলমান গাড়িগুলোতে থামতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের ওপরে বাস দাঁড়ানোর জন্য আছে ৭টি স্টপেজ। আছে উপরে ওঠার ৭টি সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ উঠছে। একটার পর একটা বাস ও টেম্পো দাঁড়াচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। চলতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রাইভেটকারসহ অন্য যানবাহনগুলো। ভুক্তভোগীদের মতে, এ যেন টাকা দিয়ে যন্ত্রণা কিনে নেয়া। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড (যাত্রাবাড়ী) কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু অভিযোগ করেন, তার স্বাক্ষর ও প্যাড জালিয়াতি করে অরিয়ন গ্রæপ সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে ফ্লাইওভারের ওপরে বাস দাঁড়ানোসহ সিঁড়ি লাগানোর অনুমোদন নিয়েছে।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি (নং-১০৮৯, তাং ১৩/১১/২০১৬ ইং) করেছেন। একই অভিযোগে ডিএসসিসি অঞ্চল-৫ এর কর্মকর্তাও পৃথক জিডি করেছেন। কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু জানান, তিনি পবিত্র হজে থাকাকালে অরিয়ন গ্রæপ তার প্যাড ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জনস্বার্থে ফ্লাইওভারের ওপর বাস দাঁড়ানো ও জনগণের উপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি লাগানোর ব্যবস্থা করার আবেদন করে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ এর অনুমোদন দেয়। হজ থেকে ফিরে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। কাউন্সিলর জানান, জিডি করা ছাড়াও তিনি বিষয়টির তদন্ত চেয়ে ডিএসসিসির মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। ফ্লাইওভারে বাস দাঁড়ানোসহ উপরে ওঠার সিঁড়ির প্রসঙ্গে দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, এ ধরনের ভৌত অবকাঠামোতে বাস দাঁড়ানো বা উপরে ওঠার সিঁড়ি করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ তা করেছে। তার অর্থ হলো তারা টাকা ইনকামের জন্য যা খুশি তাই করছে। জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ধরে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার পর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় রাস্তার ওপর আড়াআড়িভাবে দেয়া হয়েছে হলুদ রঙের ব্যারিকেড। চলমান গাড়িগুলো ওই ব্যারিকেডের সামনে এসে গতি কমানোর পর লাল পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মীরা গাড়িগুলোকে ধীরলয়ে যেতে সঙ্কেত দিচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই এ অবস্থা চলছে। প্রথম দেখায় যে কেউ মনে করতে পারেন হয়তো রাস্তার ওপর কোনো কাজ চলছে। কিন্তু আসলে তা নয়। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার ওপর সবগুলো বাস যাতে দাঁড়ায় সে জন্যই এ ব্যবস্থা। এতে বাস ও টেম্পো বাদে সবগুলো যানবাহনের গতি কমানোসহ ওই স্থানে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। গত বছর চালু হয়ে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে আবারো বাস স্টপেজ চালু করা হয়েছে। ফ্লাইওভারের ওপরে ৭টি স্থানে বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব স্পটে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। উপরে বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করায় এখন ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে লোকাল বাসই বেশি চলে। সেগুলো কিছুদূর পর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। পেছনের গাড়িগুলো তখন যানজটে আটকা পড়ে। এ নিয়ে অনেকেই বিরক্ত হলেও কারো কিছু করার নেই। এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বললে তারা জানান, ফ্লাইওভারের এসব অনিয়ম দেখে সহ্য হয় না। কিন্তু আমাদের কথা কে শুনবে? ভাবখানা এমন যেন ওরা নিজের জমিতে ফ্লাইওভার বানিয়ে এখন যা খুশি তাই করছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে ফ্লাইওভার দিয়ে চলতে গিয়ে সময়ও বেশি লাগছে জ্বালানিও বেশি খরচ হচ্ছে। আর কিছু দূর পরপর গাড়ি থামানোর ঝামেলা তো আছেই। এ যেন টাকা দিয়ে যন্ত্রণা কেনার মতো অবস্থা। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যারা নিয়মিত চলাচল করেন তাদের মতে, এখন ফ্লাইওভাবে প্রতিনিয়ত যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে তার জন্য কর্তৃপক্ষই দায়ী। কারণ তারা জেনেশুনে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। একটি গাড়ি টাকা দিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠে দ্রæত সময়ের মধ্যে পারাপার হওয়ার জন্য। তাতে সময় কমবে, জ্বালানি ও সময় সবই কমবে। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে জ্বালানিও বেশি পুড়ছে, সময়ও বেশি লাগছে। আর ফ্লাইওভারের টোল তো আছেই। কয়েকজন চালকের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর এখন মানুষজন হাঁটাহাঁটি করে। মানুষ দৌড় দেয়। ডিভাইডার টপকে পার হয়। এগুলো সবই ঝুঁকিপূর্ণ। চলন্ত গাড়ি থেকে এগুলো খেয়াল করতে হয়। একটু বেখেয়ালি হলেই ঘটে দুর্ঘটনা। এত বড় একটা ফ্লাইওভারে এরকম অনিশ্চয়তা রাখা ঠিক হয়নি। শুধু তাই নয়, ফ্লাইওভারের ওপর এখন যানজট নিত্যসঙ্গী। শনিরআখড়া থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠলেই গতিসীমার সাইনবোর্ড। সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কিলোমিটারের (আগে ছিল ৬০ কি:মি:) দুইশ’ গজ পরই ‘থামুন’ লেখা লাল সাইনবোর্ড। বাস ও টেম্পো দাঁড়ায় এখানেই। একই স্থান দিয়ে আবার লোকজন এপাড় থেকে ওপাড়ে যায়। সে জন্য লাল পতাকা হাতে দু’জন নিয়মিত ডিউটিও করে। আগে এখানে লাল পতাকা দেখিয়ে চলন্ত গাড়িগুলোকে থামিয়ে লোকজন পারাপার করা হতো। এখন দেয়া হয়েছে আড়াআড়ি ব্যারিকেড। ব্রারিকেডে যেকোনো গাড়ি থামতে বাধ্য। এই সুযোগে বাস ও টেম্পোগুলো যাত্রী ওঠানামা করার সুযোগ পাচ্ছে।
জানা গেছে, চালু হওয়ার পর থেকে ফ্লাইওভারের ওপর গত তিন বছরে দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অপব্যবহারের কারণে দিন দিন যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে হানিফ ফ্লাইওভার। এ নিয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এবং ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে নীরব। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, ফ্লাইওভার একটি দ্রæতগতির অবকাঠামো। এখানে গণপরিবহন দাঁড়ানো বা যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য বাস স্টপেজ বানানোর জন্য পিএসসিসির কোনো অনুমোদন নেই বলে আমার ধারণা। তিনি বলেন, একটা পিপিপি প্রজেক্টে কোনো পক্ষই এককভাবে কিছু করতে পারে না। আমার মনে হয় ফ্লাইওভারে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব আছে। জালিয়াতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধরে নিলাম একজন কাউন্সিলর জনস্বার্থে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাই বলে সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ফ্লাইওভারে সিঁড়ি বা বাস স্টপেজ করার কোনো সুযোগ নেই। ডিএসসিসি কোনোভাবেই তাতে অনুমোদন দিতে পারে না। কারণ এখানে জননিরাপত্তা জড়িত। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, জনগণের পক্ষে যদি আবেদন করা হয় যে, আমরা ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করব। তাহলে কি সরকার তার অনুমতি দেবে? যদিও সরকার জানে মানুষ ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।