ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মাহমুদ ইলাহী মন্ডল : এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করে যাচ্ছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, সারা বিশ্বেই এক প্রকার আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ ৭টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশটিতে সই করেন তাতেই বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও মার্কিন কোর্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। কিন্তু তারপরও বিষয়টি কত দিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে বলা মুশকিল। কারণ এ পর্যন্ত ট্রাম্পের একের পর এক যেসব গোয়ার্তুমি লক্ষ্য করা গেছে তাতে একটি বিষয় অন্তত পরিষ্কার যে, ট্রাম্প আসলেই নাছোরবান্দা। তিনি যা ভাবেন তা করেই তবে ছাড়েন। শোনা যাচ্ছে, তিনি অনুরূপ একটি আদেশ জারি করবেন। নির্বাচন দৌড় থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়েই ট্রাম্প নিজের চিন্তা-চেতনাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিয়েছেন। অন্যেরটা মানতে রাজি হননি। এমনকি নিজ দলীয় রিপাবলিকান নেতাদেরও তিনি পাত্তা দেননি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে দল থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সেই রিপাবলিকান দলের কেউই তাকে চিনতেন না বা তাকে রাজনীতি করতে দেখেননি। তাহলে কীভাবে ট্রাম্পের মতো একজন লোক যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে হঠাৎ করে নির্বাচনে গিয়ে একেবারে প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন? বিষয়টি আশ্চর্যের মনে হলেও একটু গভীর চিন্তা করলে একেবারে পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। আরো একটু পেছনের দিকে তাকাই। এই তো বেশি দিনের কথা নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের একেবারে শেষের দিকে আমল। সোভিয়েত প্রায় দুর্বল হয়ে পড়ল। খুব ঘন ঘন নেতার পরিবর্তন হতে লাগল। কিন্তু কেউই আর বেশি দিন নেতৃত্বে থাকতে পারছিলেন না। চেরনেনকে, কিভিলেনকো সব বয়োবৃদ্ধ নেতা খুব দ্রæতই নেতৃত্ব হারাচ্ছিলেন। কোনো কথা নেই, বার্তা নেই হঠাৎ করেই মিখাইল গর্বাচেভ নামে এক নেতার আবির্ভাব ঘটল। প্রথমে খুব কড়া মনে হলেও পরে সবার ভুল ভাঙলো। তার নেতৃত্বেই শক্তিশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন শুরু হলো। এমন সুকৌশলে তিনি কাজটি করলেন যে, পশ্চিমা বিশ্ব তাকে একেবারে নোবেল শান্তি পুরস্তারও প্রদান করল। পরবর্তীতে একটি দুর্বল রাশিয়ার জন্ম হলো। বলতে গেলে রাশিয়া তখন থেকেই দুর্বল। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একক কর্তৃত্ব নিল। রাশিয়ার নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটতে থাকলেও দুর্দশা আর যায় না। সর্বশেষ ভøাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাশিয়ার কপাল থেকে দুর্যোগের ঘনঘটা একটু একটু করে কাটতে লাগল। এ কথা সত্য যে, পুতিন রাশিয়ার হাল ধরার ফলে রাশিয়া তার পূর্বসুরি সোভিয়েত ইউনিয়নের রূপ প্রায় ধারণ করেছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়া আবার নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে দাঁড় করাতে শুরু করেছে। বিশ্ব যেন পুনরায় স্নায়ুযুদ্ধের যুগে ফিরে যাচ্ছে। এর একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করলাম মার্কিন নির্বাচনে। আসলে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই এরকম একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যেমন দীর্ঘদিন সুযোগের অপেক্ষার পর একজন মিখাইল গর্বাচেভকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ঠিক তেমনি রাশিয়াও দীর্ঘদিন সুযোগের অপেক্ষার পর একজন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসিয়েছে। যাকে ভাবা যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গর্বাচেভ’ হিসেবে। যিনি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রকে সেই পুরনো সোভিয়েত কায়দায় ভাঙনের পথটি পরিষ্কার করতে পারেন। আসলে পুতিন দীর্ঘদিন সুযোগের অপেক্ষায় থাকার পর এবারের মার্কিন নির্বাচনে তার সেই মোক্ষম সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েছেন। আর তারা এবার এমন একজন লোককে বেছে নিয়েছেন যিনি আর কারো কথাই শুনবেন না একমাত্র পুতিন ছাড়া। আর বাস্তবেও একেবারে সব মিলে যাচ্ছে ঠিকঠিক। সুতরাং সারা বিশ্বে যতই বিক্ষোভ চলুক না কেন কলকাঠি যে পুতিনই নাড়ছেন, সেটাই মনে হচ্ছে। গর্বাচেভ এখনো বেঁচে আছেন। তিনি যে মুখ টিপে হাসছেন সে কথা বলাই বাহুল্য। কারণ এতদিনে তিনি বন্ধু ট্রাম্পকে খুঁজে পেয়েছেন। পুতিন যে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক তা আবারও প্রমাণ হলো। এতদিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাল্টা প্রতিশোধ নিলেন তিনি। আসলে মার্কিন রাজনীতিকরা রাশিয়ার এই চালাকিটা বুঝতেই পারেননি। একেবারে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া এমন একটি মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগাল তা ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান দুই দলেরই ঝানু রাজনীতিকরা একেবারে বড়শির টোপের মতো গিলে ফেলেছেন। তারা এ কথা বুঝতে পারেননি যে, ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান তারা যে পরস্পর কেউ কারো শক্র নয় বরং তাদের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী যে মূলত রাশিয়া তারা এ কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন। স্নায়ুযুদ্ধ যে আদৌ শেষ হয়নি এ কথা রাশিয়া বুঝলেও যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারেনি। আর সে জন্যই তো তারা হিলারি ক্লিনটনকে গ্রহণ না করে গর্বাচেভরূপী ডোনাল্ড ট্রামকেই বেছে নিয়েছেন। ভাগ্যের এটাই নির্মম পরিহাস। এখন দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।
লেখক : কবি ও সাবেক কর্মী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, আইসিডিডিআরবি, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।