পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশ্বব্যাংক ও ড. ইউনূসের তীব্র সমালোচনা
বিশেষ সংবাদদাতা : পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের তোলা অভিযোগ কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। একইসঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক ও ড. মোহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় বিশ্বব্যাংক চপেটাঘাত খেয়েছে। দুর্নীতির নামে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উপর একটি কলঙ্কের বোঝা চাপানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। ড. মোহাম্মদ ইউনূস সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। এজন্য তারা ড. ইউনূসের বিচারের দাবি তোলেন। সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাংককেও ক্ষমা চাইতে বলেন তারা। একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে জানা গেছে এ তথ্য।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়েও কথা হয়। বর্তমান সরকারের অবস্থান ছিল পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, যদি তারা দুর্নীতির কথা বলে তবে তাদেরকেই তা প্রমাণ করতে হবে এবং তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ভাবমর্যাদা আন্তর্জাতিক পরিমÐলে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে, সেজন্য মন্ত্রিসভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে পদ্মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্ব ব্যাংককে মাফ চাইতে বলেছেন। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও কেউ কেউ তুলেছেন। এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না, সেখানে শুধু আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, এডিবির একটা স্টাডি হচ্ছেÑ পদ্মা সেতু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এখন (জিডিপি) ৭ দশমিক ১ শতাংশের আশপাশেই থাকে। যদি পদ্মা সেতু আরও আগে হত তাহলে প্রতি বছর ১ দশমিক ২ শতাংশ করে ৮-৯ শতাংশ গ্রোথ হত, এটা থেমে গেছে।
বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে না গেলে অনেক আগেই এ সেতু হত মন্তব্য করে শফিউল বলেন, ২০১৪ নাগাদ হয়ত পদ্মা সেতুর বড় অবয়ব দেখতে পেতাম, এতদিনে ব্রিজটি বাস্তবে পেয়ে যেতাম। কিন্তু ওই স্ক্যান্ডালের কারণে উন্নয়নটা অনেক পিছিয়ে গেছে। ২০১৬ সালে আমরা পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যেতে পারতাম, সেটা পিছিয়ে গেছে; সরকারের ভাবমর্যাদাও নষ্ট হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পুরনো অবস্থানটাই। উনার চ্যালেঞ্জ ছিল বিশ্ব ব্যাংক যেহেতু অভিযোগ তুলেছে, তাদেরই প্রমাণ করতে হবে যে আমরা দুর্নীতি করেছি। আমরা প্রমাণ করেছি যে আমরা কোনো দুর্নীতি করিনি। বিশ্ব ব্যাংক প্রমাণ দিতে পারেনি। কানাডার আদালতের রায়েই প্রমাণ হয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে কি নাÑ এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করলে করতে পারেন।
বিশ্বব্যাংকের কথায় সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি Ñপ্রধানমন্ত্রী
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের কথায় তখন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্ব ব্যাংকের কথায় এ সময় অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যা সঠিক হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে যোগ করে বলেন, বিশ্ব ব্যাংক তখন একেক বার একেকজনকে বাদ দিতে বলে। একে বাদ দিলে, ওকে জেলে নিলে সব হয়ে যাবে বলতে থাকে।
সূত্র জানায়, এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তার যে দৃঢ় অবস্থান ছিল, তিনি তার সেই দৃঢ়তা আবারও সভায় প্রকাশ করেন। তবে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে ছোট করার যে চেষ্টা হয়েছিল তার জন্য তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সত্যের পক্ষে থাকলে অবশ্যই এক সময় বিজয়ী হওয়া যায়। আজ সেটাই হয়েছে। আমরা যে মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সত্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম সেই সত্যাটাই প্রমাণ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আমাকে, আমার পরিবারকে, সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হোম অফিসে আমার ছেলে-মেয়েকে পর্যন্ত ডেকে নিয়ে হয়রানি করা হয়। একজন মন্ত্রীকে বাদ দেয়া হলো, সচিবকে গ্রেফতার করে জেলে দেয়া হলো; এতে তারাও তখন হেয় হয়েছিলেন। আসলে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে টাকাই ছাড় দেয়নি, তাহলে দুর্নীতি হবে কী করে?
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানুষের ‘মান-মর্যাদা’ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের মানুষের মান-সম্মান ক্ষুণœ করতে পারে এমন কোনো কাজ শেখ মুজিবের পরিবার করবে না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি এতটুকু বলতে পারি, আমাদের কারণে বাংলাদেশের মানুষ এতটুকু লজ্জায় পড়তে পারে বা বাংলাদেশের মানুষের কোনো রকম মান-সম্মান ক্ষুণœ হবে অন্তত সেই কাজ আমাদের পরিবার, শেখ মুজিবের পরিবার এটা কোনো দিনও করবে না। কারণ আমরা দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি আর মানুষের জন্য রাজনীতি করি, দেশের মানুষকে ভালো রাখার নিয়ত নিয়ে রাজনীতি করি।
সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে রাখার জন্য তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি বলেছি, ৬০ বছর চাকরির বয়স পার হয়ে গেছে, তারপরও উনি ওই ব্যাংকের এমডি ছিলেন। এখন আমরা আর কী করতে পারি? এরপর থেকেই তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আমার সরকারকে হেয় করতে এই মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দেন। অথচ আমাদের ’৯৬ সালের সরকারের সময় ড. ইউনূস ব্যাংকের অর্থ সংকটের কারণে দেখিয়ে সরকার থেকে ৪শ’ কোটি টাকা নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করেছেন। এক্ষেত্রে নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নামও এসেছে। তাদের নির্দেশেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করা বন্ধ করেছে। সে সময় মিথ্যা অপবাদের সঙ্গে কিছু টকশো ব্যক্তিত্বরা বিশেষজ্ঞরা সুর মিলিয়েছেন। এখন আমি প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টার সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুরে বলবো, এদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।