Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চমেকে জন্মগত বিরল রোগের চিকিৎসায় সাফল্য

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো : পৃথিবীর আলোতে আসার দ্বিতীয় দিনেই হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট। নীল পুরো শরীরের রং। বুকের দুধ খাওয়াও বন্ধ। কন্যা সন্তান জন্মের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হলো। দরিদ্র দিনমজুর হারুনুর রশিদ ও গৃহিনী হামিদা বেগমের দিশেহারা অবস্থা। নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে তারা ছুটেন হাসপাতালে।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল গ্রামে ২৮ ডিসেম্বর ওই শিশুটির জন্ম। পরদিন তার জটিল সমস্যা দেখা দিলে নেয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সেখানে তাকে অক্সিজেন দিয়ে স্থানান্তর করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে।
চমেকের শিশু সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আকবর হোসেন ভূঁইয়ার অধীনে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন নবজাতকটি কনজেনিটাল ইভেনটেশন অব ডায়াফ্রাম নামে মারাত্মক জন্মগত বিরল রোগে আক্রান্ত।
এ রোগের লক্ষণ বুক ও পেটের মাঝখানের পর্দা বুকের ভেতরে উঠে যাওয়া। বিরল এ সমস্যায় নবজাতকের খাদ্যনালী উপরে উঠে গিয়ে ফুসফুস ও হৃদপিন্ডে চাপ সৃষ্টি করে। এতে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি একটি জটিল রোগ। এতে নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি খুব বেশী। উপযুক্ত চিকিৎসার পরও জন্মগত এ সমস্যায় নবজাতকের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
এ অবস্থায় শিশু সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের নেতৃত্বে গত ১০ জানুয়ারি শিশুটির উপর অস্ত্রোপচার করা হয়। জটিল অস্ত্রোপচারের পরপরই নবজাতকটিকে কৃত্রিম শ্বাস দিতে হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশের অধীনে জটিল অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস চালনাকারী যন্ত্রের সংযোগ দেয়া হয়। এর সাথে চলে আনুষাঙ্গিক সকল চিকিৎসা।
টানা চার দিন যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে তার জীবন বাঁচিয়ে রাখা হয়। এরপর অন্য একটি যন্ত্রের সাহায্যে আরও তিন দিন তার শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চালিয়ে নেয়া হয়। এ সময় নবজাতকটির অবস্থার উন্নতি দেখে নবজাতক বিভাগের চিকিৎসক ও সেবিকারা হতভাগ হয়ে যান। তারা সবাই দরিদ্র পরিবারের এ নবজাতকের পাশে এসে দাঁড়ান। টানা সাত দিন কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালনার পর এসব যন্ত্র সরিয়ে নিয়ে তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। বর্তমানে নবজাতক অক্সিজেন ছাড়াই স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে।
চিকিৎসকেরা জানান, সে এখন পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত। চিকিৎসা শেষে খুব শিগগির সে বাড়ি ফিরে যাবে। হাসপাতালের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয় বহন করেছেন বিভাগের চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন নবজাতকের। শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আকবর হোসেন ভূঁইয়া ও নবজাতক ওয়ার্ডের ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ মনে করেন, দু’টি বিভাগের চিকিৎসক-সেবিকাসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় বিরল এ চিকিৎসায় অসাধারণ সাফল্য মিলেছে। তারা জানান, শিশুটির মা-বাবা এতটাই হতদরিদ্র যে তার ওষুধপথ্য কেনার সামর্থও তাদের নেই। জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া এ নবজাতকের সাহায্যে সবাইকে হাত বাড়ানোর আহŸান জানান তারা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে এ ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা হচ্ছে নিয়মিত। ৩২ বেডের স্থলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় ১০০ বেডে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু আছে। প্রতিদিন এখানে শতাধিক মুমূর্ষ নবজাতক চিকিৎসা পাচ্ছে। এ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নবজাতকের চিকিৎসার একমাত্র এবং শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে এ বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেন বিভাগের চিকিৎসকেরা। তারা বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতকের চিকিৎসা পেতে সেখানে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা গুনতে হয় সেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও এ বিভাগে অতি সহজে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
নবজাতকের স্বজনরা বলছেন, সরকারি হাসপাতাল নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। তবে বিরল ও জটিল জন্মগত রোগে আক্রান্ত একটি নবজাতককে সারিয়ে তুলতে দু’টি ওয়ার্ডের চিকিৎসক-সেবিকারা যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা নজির হয়ে থাকবে।



 

Show all comments
  • আরিফুর রহমান ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৮ এএম says : 0
    সকল ডাক্তারকে অভিনন্দন............
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৯ এএম says : 0
    সবই মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Santa ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫০ এএম says : 0
    বিরল ও জটিল জন্মগত রোগে আক্রান্ত একটি নবজাতককে সারিয়ে তুলতে দু’টি ওয়ার্ডের চিকিৎসক-সেবিকারা যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা নজির হয়ে থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Harun ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫৫ এএম says : 0
    We always respect those type of Doctor
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫৬ এএম says : 0
    আল্লাহ এই ডাক্তারদের দীর্ঘ হায়াত দান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ