পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : নির্বিঘেœ বিমান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি করে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেললে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ৫ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ২০১৭’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত বছরের ২৯ ফেব্রæয়ারি বেসামরিক বিমান চলাচল আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে নতুন করে বিভিন্ন অপরাধের জন্য সাজার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৬০ সালের ‘দ্য সিভিল এভিয়েশন অর্ডিন্যান্স’ হালনাগাদ করে এই খসড়া তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে সাজাও বাড়ানো হয়েছে এ খসড়ায়। যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করেন, যাতে নির্বিঘœভাবে বিমান পরিচালনায় অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং মানুষের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তবে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দেয়া হতে পারে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, আইনে নতুন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
‘এয়ার নেভিগেশন অর্ডার’ অর্থাৎ, বিমান চালানোর অনুমতির বিধান লঙ্ঘন বা সনদ জাল করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড, সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিমানের নেভিগেশনের সঠিক আলো ও সংকেতের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে। আইন অনুযায়ী বিমানের নেভিগেশনে হস্তক্ষেপ বড় ধরনের অপরাধ।
কেউ বিমান ভ্রমণের সময় বিপজ্জনক পণ্য বহন করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদন্ডের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার মুখে পড়বেন এই আইন হলে।
বিপজ্জনক পণ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘এমন কোনো দ্রব্য বা বস্তু, যা স্বাস্থ্য, সম্পত্তি বা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে অথবা এসবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যেসব পণ্য বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোও এই তালিকায় থাকবে। এ আইন পাস হলে অবৈধভাবে বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের জন্য তিন থেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে বলে জানান শফিউল আলম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনাও নতুন প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে।
পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের উন্নয়নে বস্ত্রনীতির অনুমোদন
বস্ত্র শিল্পের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে উচ্চমূল্যে শুল্কমুক্ত রফতানি এবং অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ‘বস্ত্রনীতি-২০১৭’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯৫ সালের বস্ত্রনীতি হালনাগাদ করে নতুন করে আনা হয়েছে। এতে ১১টি বিষয় নতুন সংযুক্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভিশন-মিশন, বিস্তারিত উদ্দেশ্য, সংজ্ঞা, উপখাতবিষয়ক বর্ণনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, রাজস্ব ও আর্থিক প্রণোদনা, বস্ত্রনীতি বাস্তবায়ন কৌশল, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন অনুচ্ছেদ রয়েছে।
বস্ত্রনীতির উদ্দেশ্য হলো, কর্মসংস্থানের জন্য বস্ত্র ও পোশাক খাত গড়ে তোলা, বস্ত্র শিল্পের অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগ পূরণ এবং মধ্য ও উচ্চমূল্যের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তাঁত ও বস্ত্র শিল্পের অধিকতর উন্নয়ন। এছাড়াও বস্ত্র খাতের সুষম উন্নয়নের জন্য স্পিনিং, নেটিং, ডায়িং, প্রিন্টিং, শেয়ারিং ইত্যাদির জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন উন্নয়ন করা। বস্ত্রখাত সংশ্লিষ্ট উৎপাদিত পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার স্বীকৃতি আদায়, যাতে সবদেশে প্রবেশাধিকার লাভ করে।
পরমাণু শক্তি কমিশন আইনের অনুমোদন
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন, ২০১৭-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন অর্ডারকে বাংলায় অনুবাদ করে আপডেট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন চেয়ারম্যান ও অনধিক চার জন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠন হবে। কমিশন সদস্য এবং চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্ত দিয়ে নিয়োগ হবেন। চেয়ারম্যান হবেন প্রধান নির্বাহী। কমিশনের কাজের মধ্যে রয়েছে খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পরিবেশের ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির নকশা তৈরি এবং ব্যবহারিক সামগ্রীর উন্নয়ন, শিক্ষা ও সেবাবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা; পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন; গবেষণা ও উন্নয়ন; তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপাদন, উত্তোলন ও বাজারজাত সম্পর্কিত অনেকগুলো কাজ আছে। এছাড়াও কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন
মন্ত্রিসভায় ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৭’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যাক্ট পরিমার্জনা করে এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
এর কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে বিভিন্ন গবেষণা; প্রয়োজনীয়সংখ্যক গবেষণাগার ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা; নতুন জাত ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ, দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া নতুন জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা।
একটি পরিচালনা বোর্ড থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মহাপরিচালক হবেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। বার্ক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে সদস্য নিয়ে বোর্ড গঠিত হবে। গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণ, নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রদানসহ নয় ধরনের কাজ করবে বোর্ড।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের নীতিগত অনুমোদন হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাজশাহী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের আদলে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া
বাইরে থেকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের সহযোগিতা দরকার। মালয়েশিয়া সরকার বাইরে থেকে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদেরকে ত্রাণ হিসেবে সাহায্য পাঠিয়েছে। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তি উদ্যোগে এ সাহায্য পাঠিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, একটি জাহাজ কুতুবদিয়ার বহির্নোঙ্গরে নোঙর করেছে। ওখান থেকে লাইটারেজ জাহাজে কক্সবাজারে নিয়ে এসে সরাসরি ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
কী পরিমাণ পাঠানো হয়েছে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমরা এখনও জানি না। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাহায্য পাঠিয়েছে তারা। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের সংবাদ কাভারের জন্য সাংবাদিকদের সহায়তা চেয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
তিনি বলেন, আপনাদের প্রত্যেকের সহযোগিতাটা হলো, এটিকে হাইলাইট করা, যেখানে অবস্থান নেয় তারা। সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা যে, মালয়েশিয়ান সরকার রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।