Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নতুন যন্ত্রণা মোটরচালিত রিকশা

রাজধানীতে চলছে প্রায় এক লাখ : নেপথ্যে প্রভাবশালী রাজনীতিক কদমতলীতে কমিউনিটি পুলিশের সেক্রেটারির নেতৃত্বে সিন্ডিকেট

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর নতুন যন্ত্রণার নাম মোটরচালিত রিকশা। এমনিতে রাজধানীতে অবৈধ রিকশার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে মোটরচালিত রিকশা। নগরীর অলিগলিসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় মোটর গাড়ির মতোই দাপট নিয়ে চলা এসব রিকশার কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনা, যানজট। বেশির ভাগ রিকশার রিচার্জেবল ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে। সে কারণে বিদ্যুতের অপচয়ও ঘটছে। অবৈধ ক্ষমতা বলে মোটরচালিত রিকশা চালানোর নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, যাদের অধিকাংশই সরকারি দলের নেতাকর্মী। টাকা দিয়ে তারা পুলিশকে ম্যানেজ করে। ডিএমপির ট্রাফিক আইনে এসব রিকশা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও পুলিশই সেগুলো চলাচলের ব্যবস্থা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলা এসব মোটরচালিত রিকশার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। কিন্তু কার কাছে অভিযোগ করবে তারা। যাত্রাবাড়ী থানার দনিয়া এলাকার একজন ভুক্তভোগী বলেন, মোটরচালিত রিকশার কারণে দনিয়া এলাকার রাস্তায় হাঁটাই যায় না। শিশুদের স্কুলে যাওয়া-আসাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এসব রিকশার কারণে সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন রাজধানীতে যেসব দুর্ঘটনায় মানুষ আহত হচ্ছে, তার বেশির ভাগই ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার কারণে। গত এক মাসে আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নেয়ার তালিকায় বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীও আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রæত গতিতে চালানো, অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ও অদক্ষ চালক এবং সংখ্যায় বেশি হওয়ায় এগুলোতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
রিচার্জেবল ইলেকট্রিক ব্যাটারির মোটরচালিত রিকশা রাজধানীতে চলছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। নগরীর এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে এই রিকশা নেই। অথচ ডিএমপির ট্রাফিক আইনে এগুলো চলাচল নিষিদ্ধ। ঢাকায় রিকশার সংখ্যা এমনিতেই ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ বৈধ রিকশার সংখ্যা মাত্র ৮৫ হাজারের মতো। বাকি সবই অবৈধ। এই অবৈধ রিকশার সাথে নতুন যুক্ত হওয়া মোটরচালিত রিকশার যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে বর্তমানে এই রিকশার সংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি। নগরীর রিকশার বাণিজ্য রিকশা শ্রমিকলীগ নামধারী কতিপয় সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করলেও মোটরচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকাভিত্তিক কতিপয় প্রভাবশালী। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। সরকারি দলের নেতাকর্মী হওয়ায় তাদের এই ব্যবসায় কেউ বাধা দেয়ার সাহস করে না।
জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান, বাড্ডা, বেরাইদ, মানিকনগর, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় মোটরচালিত রিকশার বাণিজ্যের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। এসব এলাকার মধ্যে উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় মোটরচালিত রিকশার সংখ্যা বেশি। আবার কদমতলীর দনিয়া, পাটেরবাগ, মুরাদপুর, জুরাইন, শনিরআখড়া, জিয়া সরণী এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার মোটরচালিত রিকশা চলছে। দিন দিন এর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, দনিয়া এলাকার যে কোনো রাস্তায় হাঁটার মতো আর অবস্থা নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কদমতলী থানা এলাকায় মোটরচালিত শত শত রিকশার হোতা দেলোয়ার নামে এক ব্যক্তি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আত্মীয় দেলোয়ারের দাপটের কাছে পুলিশও অনেকটা অসহায়। পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয় বলে দেলোয়ারের অবৈধ কাজে কেউ বাধা দেয়ার সাহসও করে না। এলাকার লাখ লাখ মানুষ মোটরচালিত রিকশার কাছে জিম্মি হয়ে আছে। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু কে তার প্রতিবাদ করবে। মানুষ কার কাছে অভিযোগ করবে?
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কদমতলী থানা কমিউনিটি পুলিশের সেক্রেটারি দেলোয়ারের সাথে যোগ দিয়েছে মনির তালুকদার, পলাশ, ভাগিনা বাবুল, ফারুক, বাদশা, আল-আমীনসহ আরো কয়েকজন। এরাই মিলেমিশে একে একে সব রিকশাতে মোটর লাগিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করছে। জানা গেছে, কদমতলী থানা এলাকায় চলাচলরত পাঁচ শতাধিক মোটরচালিত রিকশার ব্যটারি রিচার্জ করা হয় পাটেরবাগ, মুরাদপুর, জুরাইন, রায়েরবাগ, দনিয়া, দোলাইরপাড়সহ আশপাশের এলাকার কয়েকটি গ্যারেজে। যেগুলোতে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে। বিদ্যুতের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎচোর সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের হোতা নাসির। ২০১৫ সালে বিদ্যুৎ বিভাগের টাস্কফোর্স কোদারবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭২টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল। যার বেশির ভাগই ছিল এই নাসিরের।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, মোটরচালিত বা ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো কোনো নিরাপদ পরিবহন নয়। বেপরোয়া চলে বলে এগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং সহজেই উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। বিআরটিএ সচিব বলেন, সাধারণত এসব রিকশা অবৈধ বিদ্যুতে চলে। এসব যানবাহন বন্ধের বিষয়ে আদালতেরও নির্দেশনা আছে পুলিশ ও বিআরটিএর উপর। এসব যানবাহন যাতে না চলতে পারে, সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ