পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল পদ্মা ওয়েল কোম্পানী (ডিপো) থেকে সরবরাহকৃত বিমানের জ্বালানি তেল চলে যাচ্ছে চোরাকারবারীদের আস্তানায়। বিক্রি নিষিদ্ধ বিমানের তেল চুরির বাণিজ্য করে গোদনাইল এলাকার টোকাইরাও বনে গেছে কোটিপতি। ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ পদ্মা ডিপোতে কর্মরত অর্থলোভী কর্মকর্তাদের সাথে গোপন আঁতাত করে কোটি কোটি টাকার বিমানের তেল চুরি করছে চোরাকারবারী চক্র। বিমানের চোরাইকৃত তেল নিজস্ব উদ্যোগে ভেজাল পেট্রোল ও ডিজেল বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। পদ্মা ডিপোকে ঘিরে গোদনাইল বার্মাশীল এলাকায় পল্টি ঘর হিসেবে পরিচিত অর্ধশতাধিক আস্তানায় প্রকাশ্যে চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা চললেও রহস্যজনক কারণে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বার্মাশীল এলাকায় অবস্থিত পদ্মা ওয়েল কোম্পানী থেকে ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ পদ্মা ডিপোতে দৈনিক গড়ে ৯ লাখ লিটার বিমানের জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। নির্দিষ্ট করা ১২৭টি ট্যাংক লরি এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এসব ট্যাংক লরির চালক ও হেলপাররা চুরি করে পথে পথে তেল বিক্রি করছে চোরাকারবারীদের কাছে। ডিপো থেকে তেল লোড করে গাড়িগুলো চলে যায় রাস্তায় রাস্তায় গড়ে উঠা পল্টি ঘর হিসেবে পরিচিত চোরাকারবারীদের আস্তানায়। একেক চালক একেক পল্টি মালিকের কাছে তেল বিক্রি করে। একেকটি গাড়ি থেকে সর্বনিম্ন ৪ টিন (৮০ লিটার) থেকে ১ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল চুরি করা হয়। এভাবে মাসে আনুমানিক ৩/৪ লাখ লিটার বিমানের তেল চুরি করা হচ্ছে। যার মূল্য কমপক্ষে ২ কোটি টাকা। বিমানের তেল বাহিরে বিক্রি করা নিষিদ্ধ থাকলেও চোরাকারবারীদের আস্তানায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। রাস্তায় তেল চুরি করলেও ট্যাংক লরী চালকদের কুর্মিটোলাস্থ ডিপোতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, মাপে যে পরিমাণ তেল কম হয়, সে হারে উৎকোচ দিলেই তেল বুঝে রাখার দায়িত্বে থাকা কুর্মিটোলা ডিপোর কর্মকর্তারা হিসাব মিলিয়ে নেয়। এতে সরকারের ক্ষতি হলেও লাভবান হচ্ছে চোর চক্র ও অসাধু কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোদনাইল ও কুর্মিটোলা ডিপোর কর্মকর্তা এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে বিমানের তেল চুরির রমরমা বাণিজ্য। পল্টি ব্যবসা হিসেবে পরিচিত চোরাই তেলের ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারের জন্য একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। চোরাই তেল ব্যবসায়ীরাই এসব সন্ত্রাসী লালন পালন করছে। তেল চুরি চাঙ্গা রাখতে গোদনাইলে বিভিন্ন নামে তেল চোরদের একাধিক সংগঠন গড়ে তুলা হয়েছে। বড় বড় তেল চোররাই এসব সংগঠনের নেতা। তেমনি একটি সংগঠন বাংলাদেশ ট্যাংক লরী অনার্স এসোসিয়েশন গোদনাইল শাখা। যার সভাপতি আনোয়ার হোসেন মেহেদী। গোদনাইল ২ নং ঢাকেশ্বরী মিলের সাধারণ একজন শ্রমিক বার্মাশীল এলাকার মৃত আফির উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন মেহেদী। দুই বোন ও ৬ ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী চতুর্থ। অভাবের তাড়নায় এক সময় চাচাতো ভাই শাহিনের বাড়িতে কাজের ছেলে হিসেবে কাজ করতো মেহেদী। ওই বাড়ীতে কাজ করেছে ১ টানা ৫ বছর। অথচ এখন কোটি কোটি টাকার মালিক মেহেদীর কাজ করছে বহু কর্মচারী। আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মত স্বশিক্ষিত মেহেদী তেল চুরিতে জড়িয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। মেহেদী কোটি পতি বনার আড়ালে রয়েছে তেল চুরিসহ নানা অপকর্ম। আনোয়ার হোসেন মেহেদীসহ আরো কয়েকজন শীর্ষ তেল চোরাকারবারী তাদের নিজস্ব ট্যাংকলরী দিয়ে বিমানের তেল সরবরাহ করছে। তেল চোরদের গডফাদার মেহেদী এখন তার ছেলা চামচাদের কাছে ব্যবসা বুঝিয়ে দিয়ে বেশীরভাগ সময় ঢাকায় আমোদ ফুর্তি করে দিন কাটাচ্ছে। মেহেদী ছাড়াও বার্মাশীল এলাকার জসিম, আলমগীর, জাহিদসহ পদ্মা ডিপো থেকে বের হওয়ার পর ১ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় মোঃ শাহ জালাল, শাহ আলম, বাচ্চু, রুবেল, নূরা, হাফেজ, রমজান, আমির হোসেন প্রধান, জাহাঙ্গীর, মামুন, মারুফ, মজিবুর, সিরাজ ভান্ডারী, আরিফ, সালেহ আহম্মদ, মোক্তার, নূর আলম, সিরাজ, খোকা, নূরুল হক, আলামিন ভূঁইয়া, শহিদ ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীর, শাজাহান, দুইক্ষ্যা বাবুল, সায়েদ আলী, আকরাম, মানিক, জালাল, হিন্দু বাচ্চু, কবির ভূঁইয়া, আউয়াল, রিপন, জুয়েল, কাশেম, ফয়সাল, অহিদ, মাই¹া শাহিন, নাইম, ওয়াসিম, রমজান, টিটু ও রনির তেল চুরির আস্তানা রয়েছে। এসব আস্তানাকে স্থানীয়ভাবে ‘পল্টি ঘর’ বলা হয়। এছাড়াও এসও এলাকায় মেঘনা ডিপোকে ঘিরেও ঘড়ে উঠেছে তেল চোর চক্র। এস.এম আসলাম ওরফে ফুর্তি আসলাম, আশরাফসহ অর্ধশতাধিক তেল চোর এসও এলাকাতেও রয়েছে। বিমানের তেল ছাড়াও পদ্মা ও মেঘনা ডিপোকে ঘিরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার তেল চুরি হচ্ছে। এসব তেল চোরাকারবারীদের মধ্যে অনেকেই এক সময় ছিল টোকাই। ওই সব টোকাইরাও এখন কোটি পতি বনে গেছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ চোরাই তেল ব্যবসায়ী পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন থেকে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল কেনাবেচার লাইসেন্স সংগ্রহ করেছে। তারা এসব লাইসেন্স দিয়ে ডিপো থেকে পেট্রোল ও অকটেন কিনে তাদের পল্টি ঘরে বেচাকেনা করছে। চক্রটি বিমানে চোরাই তেল পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেনের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পগুলোতেও সরবরাহ করছে। অন্যান্য জ্বালানি তেলের চেয়ে বিমানের তেলের দাম অনেক কম হওয়ায় চোরাকারবারীরা ভেজাল করছে। সূত্রটি জানায়, চোরাকারবারীরা ৪৫ টাকা দরে বিমানের তেল কিনে অকটেনের সাথে মিশিয়ে ৮৫ টাকা লিটার বিক্রি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্যাংক লরি চালক জানায়, চুরি করে তেল বিক্রি করা ছাড়া চালক হেলপারদের কোন উপায় নেই। কারণ ট্যাংকলরি মালিকরা আমাদের কোন বেতন দেয় না। তাছাড়া টাকা না দিলে কুর্মিটোলা ডিপোতে তেল বুঝে রাখার সময় কম দেখানো হয়। কম হলেও টাকা দিলে কোন সমস্য হয় না।
এ ব্যাপারে গোদনাইল পদ্মা ডিপোর ব্যবস্থাপক সিদ্দিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে তেল কিছু কম বেশি হয়। ডিপোর ভিতরে তেল চুরির কোন সুযোগ নেই। বাহিরে রাস্তায় কি হচ্ছে তা আমার দেখার বিষয় না। তবে চালকরা রাস্তায় তেল বিক্রি করে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।