Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় যমুনায় মাছের আকাল

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : এক সময়ের মাছের খনি নামে খ্যাত যমুনা নদীর রসনাতৃপ্ত পাঙ্গাশ ও বাঘা আইড় মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছে। দেশখ্যাত যমুনার ২০-৩০ কেজি ওজনের পাঙ্গাশ আর ৮-১০ মণ ওজনের বাঘা আইড় মাছের কথা এখন আর চিন্তাই করা যায় না।
যমুনা ও শাখা নদীতে নদীর পানি প্রবাহ অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ফলে জেলেদের অভাবনীয় দুর্দিন চলছে। প্রয়োজন হয়ে পড়ছে সুদমুক্ত ঋণের।
বর্ষা মৌসুমের তুলনায় বর্তমানে মাছের উৎপাদন কমেছে ৫৭ শতাংশ। এতে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মিলে প্রায় ৩ হাজার জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবন-জীবিকাও। ফলে অনেকেই এ পেশা বদলের চিন্তা-ভাবনা করছে। অপরদিকে এ অবস্থায় সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে যমুনা নদী খননের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, বাঁধ ও তীর সংরক্ষণের মতো নদীশাসন প্রকল্প নিয়েই শুধু পড়ে থাকলে হবে না। মৎস্য সম্পদ রক্ষাসহ নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে হলে যমুনা নদী খনন করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যমুনা নদীতে ২ হাজার ৯৭৭ জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব জেলের মধ্যে ২ হাজার ৪৮১ জন সরকারিভাবে নিবন্ধিত এবং বাদ বাকি ৪৯৬ জনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। যমুনা নদীতে বছরে ৪৭০ টন মাছ পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে পাওয়া যায় ২৭০ টন, শুষ্ক মৌসুমে তা ২০০ টনে নেমে আসে। তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে পানিপ্রবাহ সবচেয়ে কম থাকায় মাছের উৎপাদন আরও কমে যায়। যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকার জেলেরা জানিয়েছেন, বর্তমানে নদীর অনেক স্থানে জাল ফেলার মতো পানি নেই। জেলে পল্লীর বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, যে দু’এক জায়গায় পানি আছে সেখানে জাল ফেললে ১০০ টাকার মাছও পাওয়া যায় না। একই পল্লীর বাসিন্দা হবিবর রহমান জানান, কাক্সিক্ষত মাছ না পাওয়ায় তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় জেলেদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে তাদের দুর্ভোগ- দুর্দশা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
সদর উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা জানান,পানির অভাবে মাছের  উৎপাদন কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের নদীর স্বল্প পানিতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের তিন থেকে চার মাস খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। জেলেরা জানিয়েছেন, খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে যে পুঁজির দরকার, সরকারিভাবে তা পাওয়া না গেলে তাদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে পেশা পরিবর্তন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম জানান, শুষ্ক মৌসুমে যেন কর্মহীন থাকতে না হয় সে জন্য নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত জেলেদের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নদীর যে অংশে পানি আছে সেখানে নেট দিয়ে ১০০ বর্গফুট (১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও  ১০ ফুট প্রস্থ) এলাকা ঘিরে খাঁচা তৈরি করে তাতে মাত্র ৪ মাসে ১২ প্রজাতির মাছ চাষ করা সম্ভব।
মৎস্য কর্মকর্তা  আব্দুস সালাম বলেন, আমি জেলেদের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। মাছের পোনা কোথায় পাওয়া যাবে সেটাও আমি তাদের জানিয়েছি। একটি খাঁচায় ৪ মাসে মাছ চাষ করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। যদি কেউ আগ্রহী হয় তাহলে আমরা তাদের প্রক্রিয়াগত সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি। মৎস্য অফিসের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান নামে এক জেলে বলেন, খাঁচা পদ্ধতি ভালো। কিন্তু সেটা তৈরি করতে এবং মাছের পোনা কিনতে তো টাকা লাগবে। তা কে দেবে। যদি সরকারিভাবে ঋণ দেয়া হতো তাহলে আমরা সুবিধা পেতাম।
জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন জনউদ্যোগ-এর সমন্বয়ক কে জি এম ফারুক বলেন, নদীর নাব্য ফেরানোর পরিকল্পনা না নিলে চরাঞ্চলে এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। তাই বাস্তবমুখী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জরুরীভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ