Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তাবানী বেভারেজ চালু করতে দরপত্রে সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বহনকারী প্রাচীন তাবানী বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড আট বছর ধরে চালু করা হচ্ছে না। বন্ধ থাকা কোমল পানীয় কোকা-কোলা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তাবানী বেভারেজ কোম্পানি এবার চালু করার জন্য পুন: দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। প্রাণ ডেইরি লিমিটেড ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা ভাড়াসহ ২০ কোটি টাকা নিরাপত্তা জামানত প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি অন্যতম লাভজন প্রতিষ্ঠান বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৫তম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।
সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তাবানী বেভারেজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা চেষ্টায় অনেকাংশেই সফল হয় বিএনপি জোট সরকার। আট বছর আগেও বিএনপি সরকারের আমলে তাবানী বেভারেজ ছিল একটি লাভজনক ও কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান। এরই ফলে ২০০০-০১ অর্থবছরেও যে প্রতিষ্ঠানটি ১৮ কোটি টাকা লাভ করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টাভিত্তিক মূল প্রতিষ্ঠান (মাদার কোম্পানি) কোকা-কোলা ফারইস্ট কোম্পানির পক্ষ  থেকে বারবার প্লাস্টিকের পেট বোতল প্ল্যান্ট স্থাপন, বর্জ্য শোধনাগারসহ অবকাঠামো পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি সরকার। এমনকি চুক্তির মেয়াদ ২০০৮ সালের ৩০ জুন শেষ হলেও তা নবায়ন করার  হয়নি। এ কারণে  কোকা-কোলা আটলান্টা ২০০৮ সালের ২৪ জুন থেকে তাবানী বেভারেজে কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে তাবানী  বেভারেজকে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয় এবং একনেক থেকে ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। কিন্তু কোকো-কোলা আটলান্টার সঙ্গে সৃষ্ট নানা মতবিরোধের কারণে তার বাস্তবায়ন বন্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। এ ছাড়া নতুন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোকা-কোলা আটলান্টার ৫১ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাবে (মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে লভ্যাংশের ১০ শতাংশ দিতে  চেয়ে, তাবানীকে নয়) এতে বিপাকে পড়ে সরকার। পরে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ক্রমে কোকা-কোলা কোম্পানি কর্তৃক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধাস্তে তাবানী বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড়ের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি বাতিলের সেটেলমেন্ট অ্যান্ড রিলিজ অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।  
কমিটির কার্যপত্রে বলা হয়, পরবর্তীতে ফারইস্টের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাণ কোম্পানির গোপন একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রাণ কোম্পানি তাদের নিজস্ব শিল্পাঞ্চল ঘোড়াশালে কোকা-কোলা উৎপাদনের জন্য অত্যাধুনিক পেট প্লান্ট নির্মাণ করে। এমনকি আটলান্টা থেকে কোক-কোলার মূল উপাদান ‘কনসেনট্রেট’ আমদানিরও উদ্যোগ নেয়। কিন্তু চুক্তির বিষয়টি জানাজানি হলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ অন্যান্য ইউনিটের মুক্তিযোদ্ধারা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়। মামলায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে রায় হলে প্রাণের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় কোকা-কোলা কোম্পানি। প্রতিবেদনে বলা হয়, তাবানী বেভারেজ ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ১৮  কোটি টাকা, ২০০০-০১ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৫০ লাখ, ২০০১-০২ অর্থবছরে চার কোটি ২৪ লাখ, ২০০২-০৩ অর্থবছরে তিন কোটি ৫০ লাখ ও ২০০৩-০৪ অর্থবছরে তাদের দুই কোটি টাকা লাভ হয়। কিন্তু ২০০৪-০৫ অর্থবছরে তিন কোটি, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছয় কোটি ছয় লাখ এবং ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়।
কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, তাবানী বেভারেজকে মৃতপ্রায় রেখে সামান্য লাভের আশায় নতুন করে চিন্তা করছে সরকার। প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত চালু করতে না পারলে ট্রাস্টের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এ ক্ষেত্রে মেশিনপত্র, গাড়ি, ব্যবসায়ীসহ দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কুলিং চেইন এবং বিপণন নেটওয়ার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে, কারখানা সংশ্লিষ্ট জনবল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়ার আগে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, প্রাণ ডেইরি লিমিটেড কম টাকা প্রস্তাব করেছে, এ জন্য আমরা পুনরায় দরপত্র আহ্বানের জন্য সুপারিশ করেছি। এর চেয়ে বেশি পাওয়া গেলে তাকে দেয়া হবে।
কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মো. আফছারুল আমীন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কলাণ ট্রাস্টের অধীন মোট ৩২টি প্রতিষ্ঠান আছে এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে ফেলা হয়েছে, সাতটি প্রতিষ্ঠান হতে পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধো কলাণ ট্রাস্টের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কীভাবে আরো লাভজনক করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।
তাবানী বেভারেজের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, কোকা-কোলা আটলান্টার সহযোগিতায় তাবানী বেভারেজ একসময় লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল।  এ প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের চিকিৎসা, শিক্ষা, বিবাহ ও বিনোদন ভাতার জন্য বছরে ১৬  কোটি টাকা দেয়া হতো। কিন্তু কারখানা বন্ধের কারণে এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না। অথচ কারখানা চালু থাকলে এবং কোকা-কোলা বাজারজাত হলে ঢাকা বিভাগে ৪৫টি ও রাজশাহী বিভাগে ৮০টি পরিবেশকের কাছে বকেয়া পাওনা টাকা গুলো আদায় করা যেত।
জানা গেছে, ১৯৬২ সাল তাবানী বেভারেজটি প্রতিষ্ঠত হয়। পরবর্তীদে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে নেয়া হয়। তাবানী কারখানাটি রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে নিজস্ব ৭ দশমিক ২৫ একর জমির কারখানায় ১১৩টি গাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। অসংখ্য বোতল ও ট্রে মাটির সঙ্গে মিছে রয়েছে। এ ছাড়া ছাড়া মূল্যবান মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন অচল থাকায় মরিচায় ঢেকে পড়ে। ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রমিকরা জানালেন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বহনকারী প্রাচীন কারখানাটি ধুঁকে ধুঁকে মরলেও চালু করার দায়িত্ব যেন কারো নেই। অথচ এ সরকার মুক্তিযোদ্ধের সরকার। তারা এ নিয়ে রাজনীতি করছে।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ