Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেকুঠিয়া সেতু নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে গেছে

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : চীনা অনুদানে চট্টগ্রাম-লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল-পিরোজপুর-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়ার কাছে কঁচা নদীর ওপর বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতু নির্মাণে বৈদেশিক তহবিলের সংস্থান চূড়ান্ত হলেও ডিপিপি অনুমোদন না হওয়াসহ নানামুখী জটিলতায় মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরুর অনিশ্চয়তা বাড়ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মিত হলে দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম,বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মধ্যে সংক্ষিপ্ত ও সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাও সহজতর হবে। এমনকি বরিশাল ও খুলনা বিভাগীয় সদরের মধ্যে সড়ক পথে ফেরিবিহীন দূরত্ব মাত্র ১০৫ কিলোমিটারে নেমে আসবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সড়ক পথও অনেক সহজতর হবার পাশাপাশি দূরত্বও  হ্রাস পাবে।
চার লেন প্রশস্ততায় প্রস্তাবিত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতুটি দেশের অন্যতম বৃহৎ সেতু। সেতুটি নির্মাণে গত বছর চীন সরকারের সাথে অনুদান চুক্তি সম্পাদনের পরে এর সরেজমিন জরিপ ও চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চীন সরকার সেতুটি নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগও সম্পন্ন করছে। মূল অবকাঠামো নির্মাণে সরকারী নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে বাছাই প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
কিন্তু সেতুটির জন্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণে ত্রিমুখী জটিলতায় প্রকল্পটির কাজ শুরু যথেষ্ট পিছিয়ে পড়ার আশংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে বলে জানা গেছে। অথচ গত মাসেই চীন সরকার প্রকল্প এলাকায় জমি দিতে বলেছিল। চলতি মাসেই সেতুটি নির্মাণে ওয়ার্ক শেডসহ কর্মীদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ কাজও শুরু করতে চেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান। আগামী এপ্রিলের মধ্যে চীন সরকার সেতুটির বাস্তব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরুর বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।
কিন্তু সেতুটির সংযোগ সড়কসহ নির্মান কর্মীদের বাসস্থান ও ওয়ার্ক শেড-এর জন্য ৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ ত্রিমুখী জটিলতায় আটকে গেছে। বেকুঠিয়া সেতু প্রকল্পের জন্য এখনো ‘উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাব-ডিপিপি’ অনুমোদিত না হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা পিরোজপুর জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয় অনুমোদন করতে পারছে না। সরকারী বিধি অনুযায়ী কোন প্রকল্পের পরিকল্পনা কমিশন বা একনেক চূড়ান্ত অনুমোদন না করলে তার বিপরীতে ভূমি হুকুম দখলের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের এখতিয়ার নেই জেলা প্রশাসনের। আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ও অননুমোদিত ডিপিপি’র কোন প্রকল্পের অনুকূলে ভূমি হুকুম দখলের অনুমোদন প্রদান করে না।  
অথচ বেকুঠিয়ায় ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর সড়ক ও সেতু বিভাগের সচিবের সাথে চীনা চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স-এর ‘মিনিটস অব মেমোরেন্ডম বা এমওএম’ স্বাক্ষরিত হয়। এরপরে গত বছর ফেব্রুয়ারীতে ‘লেটার অব এক্সচেঞ্জ’ও স্বাক্ষরিত হয়। চীনা প্রেসিডেন্ট-এর বিগত ঢাকা সফরকালে বেকুঠিয়ায় ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ৩শ’ মিলিয়ন ইউয়ান অনুদানের চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
কিন্তু সড়ক অধিদফ্তর এতদিন প্রকল্পটির ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনেই পাঠাতে পারেনি বলে জানা গেছে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত সপ্তাহেই সড়ক অধিদফতরের সেতু নকশা জোন থেকে প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ এ প্রকল্পটির ডিপিপি অধিদফতরের পরিকল্পনা সার্কেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সেতু নকশা জোনে সদ্য যোগদানকৃত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বেকুঠিয়া সেতুর ডিপিপি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠান সম্ভব হবে। সেখান থেকে সব যাচাই বাছাই শেষে চলতি মাসের মধ্যেই ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তবে প্রকল্পটির ব্যাপারে খুব দ্রুত সবকিছু হলেও এপ্রিলের আগে তা একনেক’এর চূড়ান্ত অনুমোদনের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ করে আগামী জুলাই-এর আগে তা চীনা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করতে পারছে না সড়ক অধিদফতর। ততদিনে বর্ষা মওসুম শুরু  হয়ে যাবে। ফলে চীনা নির্মাণ কর্মীদের বাসস্থানসহ ওয়ার্কশেড নির্মাণ যথেষ্ট অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগসহ প্রকল্প এলাকায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটির মূল অবকাঠামোর কাজ শুরুর বিষয়টি ডিসেম্বর পর্যন্ত পেছাতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর সড়ক বিভাগের বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী ও বরিশাল সড়ক সার্কেলে সদ্য যোগদানকারী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, ডিপিপি একনেক-এর অনুমোদন লাভ করলেই যতদ্রুত সম্ভব বেকুঠিয়ায় প্রস্তাবিত সেতুটির জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চীনা প্রতিষ্ঠানকে জমি বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে, সে প্রশ্নের জবাবে পুরো বিষয়টি ডিপিপি অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ