Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গাদের বিরান, অনুন্নত ও বসবাসের অনুপযোগী ঠেঙ্গারচরে পাঠাবেন না -এইচআরডব্লিউ

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নোয়াখালীর  ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর সরকারি পরিকল্পনা অবিলম্বে বাতিল করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল বুধবার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে ঠেঙ্গারচরকে বিরান, অনুন্নত ও বসবাসের অনুপযোগী হিসেবে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংগঠনটির অভিযোগ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে ঠেঙ্গারচরে নিয়ে যাওয়ার মানে হলো মুক্তভাবে চলাফেরা, জীবনমান, খাদ্য ও শিক্ষার অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা।
রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তর করা হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার লঙ্ঘন হবে বলেও সতর্ক করেছে এইচআরডব্লিউ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা  রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৩ থেকে ৫ লাখ। এর মধ্যে বেশির ভাগই নিবন্ধিত নন। কেবল গত বছরের অক্টোবর থেকেই প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তর করা নিয়ে সরকার হাস্যকর কথা বলছে। যে দ্বীপটিতে একেবারেই সুযোগ-সুবিধা নেই, যেটি উঁচু ঢেউয়ে প্লাবিত হয় এবং বর্ষা  মৌসুমে তা পানিতে নিমজ্জিত থাকে সেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ প্রস্তাবটি একই সঙ্গে নিষ্ঠুর ও অকার্যকর এবং এটি বাতিল করা উচিত।
ব্রাড অ্যাডামস আরো বলেন, এই নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিকভাবে দেখতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। তবে সরকারের একারই সব দায়িত্ব নয়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বন্যা উপদ্রুত দ্বীপে ছুড়ে না ফেলে বাংলাদেশ সরকারের উচিত তাদের জন্য দাতাদের সহায়তা চাওয়া। সেই সঙ্গে এখন যে অবস্থায় রোহিঙ্গারা আছেন, সেখান থেকে তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটানো।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে জনশূন্য ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়  দেয়ার প্রথম প্রস্তাব উঠেছিল। সেই সময় থেকেই এর বিরুদ্ধে মানবাধিকার কর্মীদের সমালোচনার মুখে পদক্ষেপটি তখন বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম  ঘোষণা করেছেন, মানবিক কারণে দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কক্সবাজারে অবস্থানরত ও নিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিকদের নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর চরম নির্যাতনের শিকার এমন  রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথাও সাংবাদিকদের জানান তিনি।
মানচিত্র অনুযায়ী, নোয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার, উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচর উপজেলা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার, হাতিয়া উপজেলা থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং দ্বীপ উপজেলার পশ্চিম উপকূল হতে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত ঠেঙ্গারচর প্রায়ই প্লাবিত হয় জোয়ার-ভাটায়। এই ঠেঙ্গারচরের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৪.৫ কিলোমিটার (প্রায় ১০ হাজার একর)।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ