Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে উন্নয়নের সাথে খুলছে বাণিজ্যের স্বর্ণদুয়ার

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মংলা বন্দর গতিশীল চলছে রেল লাইনের কাজ : দু’টি এলাকাকে অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা : পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ শিগগির
আবু হেনা মুক্তি : বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে খুলছে বাণিজ্যের স্বর্ণদুয়ার। ধীরে ধীরে লাগছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পদ্মাসেতু এখন সূর্যের মতো বঞ্চিত এই জনপদকে আলোকবর্তিকা ছড়ানোর অপেক্ষায় যেন অপেক্ষমাণ। খুলনায় দুটি সংযোগ সড়ক (নিরালা এভিনিউ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এভিনিউ) নির্মাণ প্রকল্পে ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি গত মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়।
এ সম্পর্কে ওইদিন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খুলনা শহর যেহেতু দিন দিন বড় হচ্ছে সে জন্য পুরো শহরকে সংযোগ সড়ক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আর উন্নয়নের পূর্বশর্ত মংলা বন্দর ফুলে ফলে সুশোভিত হবে এমন প্রয়াসই চলছে। নেপাল ও ভুটান মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলযোগে পণ্য আমদানি-রফতানি করতে পারবে। সে লক্ষ্যে শিগগিরই ভারত বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে। অন্যদিকে দ্রুত গতিতে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদার দু’টি এলাকাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সে লক্ষ্যে কাজও চলছে দ্রুত। এছাড়া শেষ পর্যায়ে খুলনার আধুনিক রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ। সম্প্রতি  খুলনা সফরকালে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতলকে দ্রুত পূর্ণতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সাথে সাথে এগিয়ে চলছে ওয়াসার আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজ।  ফলে খুলনাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে পানি। আর পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে খুলনার ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্জীবিত হচ্ছে।
সূত্র মতে, খুলনার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পদ্মা সেতু হবে ভবিষ্যতের মাইলফলক। সেতুর কাজ এখন দৃশ্যমান। ফলে ব্যবসায়ীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বিনিয়োগকারীদের যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তার পিছনে রয়েছে পাইপ লাইনে গ্যাস। খুলনার আড়ংঘাটায় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি:-এর নিজস্ব ল্যান্ডিং স্টেশনে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে। পেট্রো বাংলা সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ বলেন, দিনক্ষণ নয় খুব শিগগিরই গ্যাস সংযোগ হচ্ছে। গ্যাস আসলে প্রথম গ্যাস সংযোগ হবে খালিশপুরের ২২৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ইতোমধ্যে ভেড়ামারা ও ভোলাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ হয়েছে। এদিকে, মংলা বন্দরের মালামাল যাতে চট্টগ্রামের মতো সহজে এবং দ্রুততার সাথে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায় সে লক্ষ্যে খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ কাজ চলতি বছরেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। খুলনা মংলা রেল লাইন প্রকল্পের কাজ যাতে যথাসময়ে সমাপ্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রকল্পকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি কাজ করতে গিয়ে অন্যটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় কিম্বা অযথা সময় ক্ষেপণ না হয় সে দিকটি মাথায় রেখেছে প্রকৌশলীরা। রেল সেতু, রেল লাইন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংÑ এই তিন ভাগে বিভক্ত করে প্রায় ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র খুলনা থেকেই ৪০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৩ একর এবং বাগেরহাট জেলা থেকে ২৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে খুলনা মহানগরীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। পাশাপাশি যখন পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন হবে তখন এই রেললাইনকে ঘিরে এ অঞ্চল হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ ইকনোমিক জোন।
এদিকে, এক সময়কার শিল্প ও বন্দর নগরী বলে খ্যাত খুলনার জৌলুস ফিরিয়ে আনতে খুলনায় দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত করতে পারলে তা আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বেজা এ লক্ষ্যে খুলনার বটিয়াঘাটার তেতুঁলতলা এবং তেরখাদার কোলাকে বেছে নিয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং নতুন বিনিয়োগ ছাড়াও এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আর এর সাথে যুক্ত হবে আশীর্বাদ হিসেবে পদ্মা সেতু।
অপরদিকে, যানজট ও দুর্ঘটনা কমানো এবং যোগাযোগ ও পরিবহন সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে খুলনায় দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করবে সরকার। এজন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা যা গত মঙ্গলবার একনেকের সভায় পাস হয়েছে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করবে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, খুলনা শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন এবং এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারি অর্থায়নে নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করা হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানটি ২০০১ সালে সরকার অনুমোদন দেয়। এই পরিকল্পনায় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সরেজমিনে বিভিন্ন সড়কের অবস্থান চিহ্নিত করেছে। উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে শহরকে দক্ষিণ এবং পশ্চিমদিকে সম্প্রসারিত করা, পরিকল্পনা অনুযায়ী শহরের উন্নয়ন করা, শহরের যানজট কমানো, রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং সর্বোপরি কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের সুযোগ-সুবিধা দেয়া ইত্যাদি
এছাড়া,  বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দরের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার উন্নয়নের পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াবে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতির চাকা। মংলা বন্দরসহ সারা বছরই গোটা সুন্দরবনও থাকবে দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত। পর্যটন খাতে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে  জানান এখাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার ৫৯টি উপজেলায় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতাধীন জেলাগুলো হচ্ছেÑ খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা। যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।





 

Show all comments
  • ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৩৮ পিএম says : 0
    বটিয়াঘাটার নতুন রাস্থা থেকে বরনপারা পর্যন্ত বেরিবাধ নির্মান।আর ৩ গংগারামপুর ইউনিয়ন এর উননয়ন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ