Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তুলকালাম-হাতাহাতি

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিরোধী দলীয় নেতা আব্দুল মান্নান হাসপাতালে
ইনকিলাব ডেস্ক : নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মধ্যে বাক-বিত-া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায়। পরিস্থিতি জটিল হবার পর বিরোধী দলনেতাকে বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। এ নিয়ে শাসক ও বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে কার্যত হাতাহাতি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আব্দুল মান্নান বিধানসভা ত্যাগ করতে না চাইলে মার্শাল ডেকে তাকে বের করার নির্দেশ দেন স্পিকার। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিরোধী দলনেতা। এরপর তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসিজির পর ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আব্দুল মান্নানের হার্টে ব্লকেজ রয়েছে। আপাতত তাকে আপৎকালীন পেসমেকার দিয়ে রাখা হয়েছে।
বাজেট অধিবেশন চলছে বিধানসভায়। গতকাল অধিবেশনের শুরুতেই সম্পত্তি রক্ষা বিলের প্রতিবাদে গায়ে পোস্টার সেঁটে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আব্দুল মান্নান। ২০০০ সালে বিরোধী পক্ষে থাকাকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধানসভা অভিযানের ছবি গায়ে সেঁটে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তিনি। বিলের বিরোধিতায় নোটিশ আনেন তিনি। কিন্তু তা খারিজ করে দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পিকার মান্নানকে পোস্টার খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। ‘জ্যাকেট খুলে ফেলুন। পোস্টার খুলে নিন গা থেকে,’ মান্নানকে বলেন, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু স্পিকারের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেন বিরোধী দলনেতা। এরপরই আব্দুল মান্নানকে সতর্ক করে স্পিকার বলেন, ‘এটা কিন্তু চ্যালেঞ্জিং অ্যাটিটিউড।’ এর মধ্যেই বিরোধী দলনেতার সঙ্গে প্রবল বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একে অপরের উদ্দেশে হুশিয়ারি দিতে থাকেন শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়করা। এরপরই বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্পিকারের নির্দেশে আরও ক্ষেপে যান বিরোধী বিধায়করা। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী স্পিকারকে অনুরোধ করেন নির্দেশ প্রত্যাহার করতে। কিন্তু ততক্ষণে বিরোধী ও শাসকদলের বিধায়কদের মধ্যে কার্যত হাতাহাতি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসেন। কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজককে পাঁজাকোলা করে বের করে দেয়ার সময় তার শাড়ি খুলে যায় বলে অভিযোগ। চক্রবুহের মধ্যে মান্নানকে ঘিরে রাখেন বিরোধী বিধায়করা।
এর জেরে মার্শাল ডাকার নির্দেশ দেন স্পিকার। কিন্তু, হাউজ ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন বিরোধী দলনেতা। এরপরই তাকে কক্ষ ত্যাগে উদ্যোগী হন মার্শাল। কিন্তু অসুস্থ হয়ে সংজ্ঞা হারান আব্দুল মান্নান। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গোটা ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা।
এদিকে গোটা ঘটনা নিয়ে বিধানসভায়তেই প্রতিক্রিয়া দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মান্নান সাহেবের এত অধঃপতন হয়েছে, ভাবতে পারছি না। স্পিকারকে অসম্মান করা হচ্ছে। এই বিল নতুন নয়। আগে চিৎকার করেননি কেন? এগুলো লোকদেখানো পাবলিসিটি। বাংলায় আইন-শৃঙ্খলা সবচেয়ে ভালো। মিডিয়া-পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর মেনে নেব না’। এরপর তৃণমূল বিধায়ক মানস ভুঁইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মান্নান সাহেবকে দেখে আসবেন’। পিএসি’র চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মানস ভুঁইয়ার সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল। যার জেরে দলত্যাগ করে তৃণমূলে আসেন সবংয়ের বিধায়ক। তাকে মান্নানকে দেখতে যেতে বলায় বিধানসভায় শাসকদলের বিধায়কদের মধ্যে হাসির রোল ওঠে।
এদিকে পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গোটা ঘটনায় বিরোধীদের সমালোচনা করেছেন। তার অভিযোগ, বিরোধী বিধায়কদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীরা। হুলুস্থুল কা-ের মধ্যেই সম্পত্তি রক্ষা বিল পেশ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিরোধীশূন্য অবস্থায় পাস করা হয় বিলটি। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ