Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সশস্ত্রবাহিনীর সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সশস্ত্রবাহিনীসহ সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চায় না- দেশে এমন কিছু ঘটুক, যাতে চলমান উন্নয়নে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধশালী ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কাজেই আমরা চাই না, এমন কিছু ঘটুক- যাতে আমাদের চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ২০১৬-১৭ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। সকালে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স, ডিএসসিএসসি, মিরপুর সেনানিবাসে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এখন বিশ্বব্যাপীই একটি উদ্বেগজনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে তার সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে পৃঃ ২ কঃ ৪
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সশস্ত্রবাহিনীর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে সরকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদসদেরও এই গণসচেতনতা সৃষ্টির কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্রবাহিনীরও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সমাজের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন নিজ নিজ সন্তান সন্ততির দিকে ঠিকমতো খেয়াল রাখেন, যাতে করে কেউ আর এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদকাশক্তির পথে পা বাড়াতে না পারে। সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সশস্ত্রবাহিনীসহ সকলকে কর্তব্যনিষ্ঠভাবে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেই বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমরা সবসময় মাথা উঁচু করে চলব, মাথা নিচু করে নয়। কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে, বিশেষ করে নবীন অফিসারদের।
সশস্ত্রবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবেলায়ও প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা, গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ পুনর্গঠন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের সাফল্যে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের এই স্টাফ কলেজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত।
আমাদের জলসীমায় ‘ব্লু-ইকোনমি’র সম্ভাবনা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি প্রক্রিয়ায় জয়লাভ করে বিশাল সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্মোচিত হয়েছে ব্লু- ইকোনমির সম্ভাবনাময় দুয়ার।’ আমরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও আমাদের নৌবাহিনীর সাবমেরিন ছিল না। সাম্প্রতিক অত্যাধুনিক সাবমেরিন যুদ্ধ জাহাজ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়ে আমাদের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়েছে। আক্ষরিকভাবেই বাংলাদেশ নৌবাহিনী এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আওতায় আমরা একইভাবে সেনা ও বিমানবাহিনীতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এবং চৌকস ও পেশাদারভাবে গড়ে তুলছি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইউনিট, বৃদ্ধি পেয়েছে জনবল। অনুমোদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার এবং পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজার বিমান ঘাঁটি।
সরকার প্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ণের অংশ হিসেবে নতুন সংযোজিত ট্যাঙ্ক, এপিসি, সেল্ফ প্রোপেলড আর্টিলারি গান, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল এর পরিচালনায় পারদর্শিতা, মেইনটেন্যান্স কাজে পেশাদারিত্ব ও সেনাবাহিনীর সার্বিক সক্ষমতায় আমরা সম্পূর্ণ আশ্বস্ত হতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকে এ পর্যন্ত স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর ৪১টি, নৌবাহিনীর ৩৫টি এবং বিমানবাহিনীর ৩৭টি স্টাফ কোর্স সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ৯৯৮ জন অফিসারও এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তারা সকলেই নিজ নিজ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
তিনি বলেন, আমাদের স্টাফ কলেজের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে আমি মনে করি। এই সাফল্যের জন্য আমি কলেজের সাবেক ও বর্তমান কমান্ড্যান্ট, অনুষদ সদস্যবৃন্দ ও সকল অফিসারকে জানাই আমার অভিনন্দন।
নবীন গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি নিঃসন্দেহে আপনাদের জীবনের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি দিন। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আজ আপনারা সমর বিজ্ঞানের উপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস, এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের আরো আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে। শুধু তাই নয়, এখন থেকে আরও বড় ধরনের নেতৃত্ব প্রদানে আপনারা নিজেদের প্রস্তুত রাখবেন বলেও আমি বিশ্বাস করি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এ বছর মোট ১৪ জন মহিলা অফিসার গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। প্রতিবছর মহিলা অফিসারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সশস্ত্রবাহিনী তথা বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করছে।
এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫৮ জন, নৌবাহিনীর ২৭ জন ও বিমানবাহিনীর ২৪ জন এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সিয়েরালিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, উগা-া, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাম্বিয়ার ৭১ জনসহ মোট ২৮০ জন অফিসার ডিএসসিএসসি ২০১৬-১৭ কোর্সে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ডান্ট মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন। পরে গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে কেক কেটে উদযাপন করেন।
এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার বাংলাদেশ
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সঙ্কটের জাল ছিন্ন করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করতে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ ও সামশুল হক চৌধুরীর পৃথক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরও বলেন, গত ৭ বছরে জিডিপি, জাতীয় আয় বেড়েছে। কমেছে দারিদ্র্য, রিজার্ভ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ও রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা ও মজবুত করার লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন ঃ মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব। বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৬ সালের নমিনাল জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬তম এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতার জিডিপি’র ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার বাংলাদেশ
সরকারি দলের সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার এবং নিম্ন-আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশকে দেখছেন- ‘এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে। সিটি গ্রুপের বিবেচনায় ২০১০ হতে ২০৫০ সময়ে বিশ্বে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক এবং বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ উন্নয়নের সার্বজনীন রোলমডেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করছে
প্রবৃদ্ধি অর্জনে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ
দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিগত ৭ বছরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, উন্নয়ন খাতে অর্থায়ন, অনুন্নয়ন খাতের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ঋণ গ্রহণে ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাসহ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়। দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকার অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশে। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
তিনি জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের প্রধানতম শ্রম বাজারের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে দেশে-বিদেশে গত সাত বছরে প্রায় এক কোটি ৩৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এত কর্মসংস্থান আর অতীতে কখনো হয়নি। তিনি জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগ প্রবণ দেশ বাংলাদেশ
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগ প্রবণ দেশ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, পানিবদ্ধতা, নদী ভাঙ্গন, নদীর নাব্যতা হ্রাস, টর্নেডো ও ফসলী জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও রয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আপদকে দুর্যোগ ঝুঁকি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উন্নত দেশসমূহে মাত্রাতিরিক্ত শিল্পায়নের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। এ জন্য আমরা দায়ী না হয়েও মারাত্মকভাবে এ দুর্যোগের শিকার। তিনি বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহীত অবকাঠামোগত কার্যক্রম এবং স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি সারা বিশ্বে এ দেশকে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের জলবায়ু বিষয়ক কূটনীতির সঞ্চালক। দুর্যোগ ঝুঁকি তথা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অবদান রাখার জন্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘ আমাকে ‘চ্যাম্পিয়ন’স অব দি আর্থ’ পুরস্কার প্রদান করে। আমি এই পুরস্কার দেশবাসীর জন্য উৎসর্গ করেছি।  রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে
দেশে বিনিয়োগ ও রফতানি আয় বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগকে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ফলশ্রুতিতে উৎপাদনশীলতা ও রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শিল্পের অংশিদারিত্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অধিক গুরুত্ব দেয়া এবং শিল্পখাতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, রাজনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদ্যুত-জ্বালানী-পরিবহনসহ ভৌত অবকাঠামো খাত উন্নয়ন ব্যক্তির খাতের বিনিয়োগ ক্রমশ ত্বরান্বিত করছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল সাড়ে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা এ বছর ৩৪ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়।
সংসদ সদস্য আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দিচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুত উৎপাদনকারী কোম্পানী, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীসহ অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী কর সুবিধা ও প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ