Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্কটময় পরিস্থিতি এড়াতেই বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন

নিরপেক্ষ থাকার দাবি রেখে বিদায় নিল রকিব কমিশন

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : নিজেদের মেয়াদে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনার দায় এড়িয়ে গিয়ে তাদের মৃত্যুকে শান্তির দেশ প্রতিষ্ঠায় ‘আত্মত্যাগ’ বলে জাহির করলেন বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ।
শেষদিন পর্যন্ত নিরপেক্ষ থেকে সাফল্যের সঙ্গে মেয়াদ শেষ করার দাবি করে সাংবিধানিক সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষায় বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছিলেন বলেও জানান তিনি। বিএনপিসহ ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়া দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের ফাঁকা মাঠে গোল করার জন্য তাদেরকেই দায়ী করেন। গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে শেষবারের মতো করা প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন কাজী রকিব। এসময় নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী, ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক সে সময় উপস্থিত ছিলেন না।
নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার বিষয়টিকে জোর দিয়ে কাজী রকিব বলেন, ‘শপথ নেয়ার পরই আমি বলেছিলাম কাজে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করব। ৫ বছর মেয়াদে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি এবং তা সফলভাবে অতিক্রম করেছি। শেষে এসে বলতে পারিÑ আমরা জাতির সামনে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করেছি।’ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কখনও কোনো চাপের মোকাবেলা করতে হয়নি দাবি করে কাজী রকিব বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছি। কখনো কারও ফোন কল, চাপ পাইনি।’
বিএনপি’র ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না আসার পেছনে কমিশনের ব্যর্থতা রয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। ইট’স আ পলিটিক্যাল গেইম, কেউ না এলে অন্য দল তো ফাঁকা মাঠে গোল দেবেই’। তিনি বলেন, ওই সময় যদি নির্বাচন না করা যেতো, তাহলে দেশে অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সেই মুহূর্তে নির্বাচনটা হয়েছে বলেই দেশে এখন শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
গত পাঁচ বছরের মেয়াদে দশম সংসদ নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ছয়টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ ৭ হাজার ৪০৭টির বেশি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি বলেন,   যে সহিংসতাগুলো হয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক কারণে। গণতান্ত্রিক চর্চাটা এই দেশে সেভাবে নেই, বারবার কালো থাবা এসে পড়েছে। ভারতের মতো গণতন্ত্র চর্চা এখানে থাকলে সহিংসতা অনেক কমে আসতো।
ইসি’র সফলতা তুলে ধরে বিদায়ী সিইসি বলেন, আমরা পাঁচ বছর মেয়াদে স্মার্টকার্ড দিয়েছি, নতুন ভবন উদ্বোধন করেছি, ভোটারতালিকা হালনাগাদ করেছি, ছিটমহলবাসীদের ভোটার করেছি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা উপজেলায় নিয়ে যেতে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেছি। নির্বাচনের সময় যারা আহত-নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মদানের কারণেই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইদানিং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক ইতিবাচক বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করি, দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়বে।
উল্লেখ্য, কাজী রকিবের এই কমিশন ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের পুরো  মেয়াদই কেটেছে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বৈরি পরিবেশের মধ্যে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সাড়ে ৭ হাজার ভোট হয়েছে এই কমিশনের অধীনে, যার  বেশিরভাগই সহিংসতা ও ব্যাপক কারচুপির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়, কেবল ভোটের দিনই নিহত হন অন্তত ২১ জন। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডও হয় সেই নির্বাচনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ