Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্টজন

চাপ-প্রভাব উপেক্ষা করাই নতুন ইসির চ্যালেঞ্জ

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আ’লীগ আস্থায়, আশাহত বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার : নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে এখন সর্বত্রই আলোচনা, সমালোচনা বিতর্ক চলছে। সবাই যেন মুখিয়েই ছিল। সিইসি এবং অপর ৪ কমিশনারের নাম ঘোষণার পর শুরু হয় আলোচনা। ইসিতে সাবেক বিচারপতি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের না রাখায় যেমন বিতর্ক হচ্ছে; তেমনি শুধুই আমলাদের প্রাধান্য দেয়ার রহস্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই শুরু হয়ে যায় সিইসি ও কমিশনারদের কর্মজীবন, রাজনৈতিক পরিচিতি ইত্যাদির অনুসন্ধান। কে কোন রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে কার দক্ষতা কেমন ছিল, কোন দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন এবং ইসি গঠনে কোন পেশার ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হলো সে নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কয়েকদিন থেকে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে দিয়ে সার্চ কমিটির পরামর্শে যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে তাদেরকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং বিশিষ্টজনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় বোঝা যাচ্ছে নতুন ইসির সামনে অপেক্ষা করছে বন্ধুরপথ। দেশবাসীর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর দৃষ্টি থাকবে ইসির কর্মকা-ের দিকে। বিতর্ক এড়িয়ে দল নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ইসি গঠনে বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি দাবি করে সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ১৬ বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত দেয়া হয়েছে। ইসি গঠনে তাদের মতামত ও পরামর্শ যথার্থ বিবেচনা করা হয়নি।
ইসি গঠনে এবার মূলত সাবেক আমলাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সাধারণ মানুষের কাছে ‘তেমন পরিচিত’ নন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব নাম ঘোষণার সময় একজন আওয়ামী লীগের তালিকা এবং একজন বিএনপির তালিকা থেকে নেয়ার যে তথ্য দিয়েছেন তা নিয়েও বিতর্ক আছে। কারণ যাদের নাম বলা হয়েছে দুই দলের তালিকায় তাদের কারোই নাম ছিল না। নিজেদের মধ্যে পরিচিত হওয়ার জন্য সিইসি ইসির ৪ সদস্যদের গতকাল বৈঠকের আয়োজন করলেও পরে অনিবার্যবশত তা স্থগিত করা হয়। নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সব দল আমার কাছে সমান। এটা একটা বড় দায়িত্ব। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে চাই। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতা চাই। নতুন ইসি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে অবিশ্বাস জন্মেছে সেখানে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাটাই হবে নতুন ইসির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে কতদূর যেতে হবে, আইনের সংস্কার করতে সকলের সহযোগিতা কীভাবে পাওয়া যায় সেগুলোই বড় চ্যালেঞ্জ হবে। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেছেন, নতুন ইসির জন্যে সবার অংশগ্রহণে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন করাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সবার আস্থা অর্জন করে, বিতর্ক এড়িয়ে এবং কোনো ধরনের প্রাণহানি যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করাটাই হবে ইসির অগ্রাধিকারমূলক কাজ। তবে নতুন ইসি ঘোষণার পর আলোচনা-সমালোচনা বিতর্ক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিক্রিয়ায় পরিষ্কার এই কমিশনকে দেশ-বিদেশের সবার আস্থা অর্জন করে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বন্ধুরপথ পাড়ি দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর গতকালই নতুন সিইসি সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সদস্যদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে পরিচিত হতে বৈঠকের আয়োজন করেন। সেখানে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, রাজশাহীর অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু অনিবার্য কারণে সে পরিচিতি সভা স্থগিত করা হয়। নিয়োগ পাওয়ার পর দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, বিচারক জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো সামর্থ্য আছে। বাংলাদেশের সংবিধান এবং আইনকে সমন্বিত রেখে আমি আমার কাজ করে যাব। দেশবাসীর যে প্রত্যাশা নতুন নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে সেই প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারব।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে নতুন ইসিকে যে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে সেটা বোঝা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায়। নতুন ইসির প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আস্থা রয়েছে বলে জানা গেছে। দলের নেতারা মনে করেন নতুন এ নির্বাচন কমিশন তাদের দক্ষতার সাথে কাজ করে জাতির প্রত্যাশা পূরণ করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সবাই নতুন নির্বাচন কমিশনকে ভালো বলছে। আর এই কমিশনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রস্তাবিত নামের একজন করে রয়েছে। এই কমিশনের অধীনে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক নতুন নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, কমিশনের সবাই দক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। অতীতের কর্মজীবনের মতো আগামী নির্বাচনেও তারা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিবেন। অপর নেতা কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, আমার কাছে মনে হয় খুব ভালো একটা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এমন একটা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নন। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে একজনকে আওয়ামী লীগ ও একজনকে বিএনপির প্রস্তাবনা থেকে নেয়ায় খুবই ভালো হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা জানান, তারা নতুন ইসি নিয়ে হতাশ এবং বিক্ষুব্ধ। বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ‘বিএনপি বিদ্বেষী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত। সিইসিকে নিয়ে তাদের প্রধান আপত্তি। বিএনপি মনে করে মাহবুব তালুকদার ছাড়া ইসির বাকি সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আর সিইসি বিএনপি বিদ্বেষী এবং ‘জনতার মঞ্চের’ লোক। চাকরি জীবনে তিনি আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক ছিলেন এবং সরকারি চাকরির আচরণবিধি লংঘন করে সচিবালয় থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনের মঞ্চে শামিল হন। বিএনপির সূত্রটি জানায়, নুরুল হুদা ‘জনতার মঞ্চের’ লোক হওয়ায় সরকারি চাকরি থেকে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনতার মঞ্চের লোক। বাকিরাও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ। এ অবস্থায় এদের কাছ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। এমন ইসি জাতির প্রত্যাশিত ছিল না। চাইলে শতাধিক নাম থেকে আরো নিরপেক্ষ লোককে নিয়োগ দিতে পারতেন মহামান্য প্রেসিডেন্ট। ২০ দলীয় জোটের শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমরা আশা করেছিলাম একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে সিইসি করা হবে। সেটাই জাতির প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু যাকে সিইসি করা হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের জনতার মঞ্চের নেতা। তার পরিবার আওয়ামী লীগের। আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা ক্ষুব্ধ এবং আশাহত। জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, সরকারের অনুগত লোকদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করার পর আমরা আশঙ্কা করেছিলাম দলীয় অনুগত লোকদের দিয়ে সিইসি করা হবে। সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ব্যাঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘আমার কাজ আমি করমু তোদের শুধু জিগ্যাইয়া লমু’। তাঁর এবং আমাদের সেই আশঙ্কা সত্য হলো। নতুন ইসি ঘোষণার পর জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু তার স্বভাবসুলভ বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, বিতর্কিত ব্যক্তিদের ইসিতে যায়গা দেয়া হয়নি। এরশাদের জাতীয় পার্টি কার্যত গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে সরকার খুশি হয় এমন বক্তব্যের মাধ্যমে নতুন ইসিকে স্বাগত জানিয়েছে। এজন্য কৃতজ্ঞ ভৃত্যের মতো সংবাদ সম্মেলনের মহাআয়োজন করেন।
নতুন ইসি গঠনের পর ইনকিলাব থেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বক্তব্য সার্চ কমিটিতে লিখিত দিয়েছি। সেগুলোর কিছু মিডিয়ায় এসেছে। নতুন করে বলার কিছুই নেই। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, অত্যন্ত সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যা আগে কোনো সময়ও এই রকম প্রক্রিয়ার ইসি গঠন করা হয়নি। এখানে বিতর্ক বা হতাশার কিছু নেই। আমি মনে করি, এই কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। তারা জাতিকে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিবেন। এতে করে দেশের গণতন্ত্র সুসংহত হবে। গণতন্ত্রের পথ সুগম হবে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের উচিত নতুন কমিশনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা। এতে করে তারা সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবে। অন্যথায় দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, গণতন্ত্র ব্যাহত হবে, দেশের তথা সমগ্র জাতির ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিএনপি হতাশা প্রকাশ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, শুরুতেই যদি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অসহযোহিতা করা হয়; এটা কারোরই কাম্য নয়। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে বিএনপিসহ সকল দলের উচিত কমিশনকে সহযোগিতা করা। যাতে আগামী সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আরো বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ বি এম নুরুল হুদা একজন দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি। যিনি প্রশাসনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও অন্যান্য যারা আছেন তারাও সৎ ও যোগ্য। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যারা এই কমিশনে আছেন তারা সবাই যার যার ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞ। বিশেষ করে আমি দু’জনকে চিনি, সবাইকে ভালোভাবে জানি না। কিন্তু সমষ্টিগতভাবে তারা কীভাবে কাজ করবেন সেটা তাদেরই করতে হবে। এখন যাদের পেয়েছি তাদের ওপরে অনেক প্রত্যাশা। তবে কমিশনের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। যেখানে আমাদের মতো দেশে রাজনৈতিক কালচারে অনেক সমস্যা। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কমিশন যদি বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চায় তাহলে তাদের স্বচ্ছ হতে হবে এবং জনগণের কাছে পরিষ্কার হতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেছেন, ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকাসহ রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনই কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কমিশনকে সকল রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে সৎ সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, যোগ্য ব্যক্তি নিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করেই এটি গঠিত হয়েছে। তবে কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ হবে কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছে এ নির্বাচন কমিশন। প্রক্রিয়াগত দিক থেকে এই কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তবে সুশীলদের মতামত গ্রহণ করলে আরো ভালো হতো। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা ছিল এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ গণতন্ত্র এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। কিন্তু নতুন নির্বাচন কমিশনার যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে সে নামগুলো প্রশ্নবিদ্ধ। বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক দলগুলো যাদের নাম দিয়েছে তাদের কেউ নেই। কোনো প্রখ্যাত বা জ্ঞানী-গুণী মানুষের নাম নেই। ইসিতে নিয়োগ পাওয়াদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। তারা রাজনৈতিক মঞ্চের লোক। এই নির্বাচন কমিশনে মানুষ সাংঘাতিকভাবে হতাশ হয়েছে। অন্তত সিইসি পদে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তির নিয়োগ দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনিই যখন বিতর্কিত হন, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে করবেন? আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ নতুন ইসি গঠনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি যেহেতু একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল আর তারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সে হিসাবে তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন। সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা আর বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবেন। যাতে করে আগামী দিনগুলোতে যেন নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। সব নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব। যদি সব রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়ে গেল। আমরা যারা মতামত দিয়েছিলাম তার কতটুকু বাস্তবায়ন হলো তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেল। আমরা বলছিলাম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে কিন্তু করা হয়নি। এছাড়াও আমরা বলেছিলাম নাম প্রকাশ করা হোক, সেটাও হয়নি। কি প্রক্রিয়ার বা মানদ-ে তাদের ইসি করা হয়েছে এটা আগের মতো গোপনীয় রয়ে গেল। তাহলে আমাদের মতামত কি লোক দেখানো কিনা এটাও একটি প্রশ্ন? যাদের দিয়ে নতুন ইসি গঠন করা হয়েছে তাদের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না, তবে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়ে গেল। এত তড়িঘড়ি সময়ের মধ্যে ইসি গেজেট প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে? গত বারেও একদিন সময় নেয়া হয়েছিল। আমি মনে করি, ইসি গঠনে বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বিশিষ্টজনদের মতামত ও পরামর্শগুলো যথার্থ বিবেচনা করা হয়নি। আর কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। করলে আগে থেকেই সাধারণ জনগণ জানতে পারত, এতে করে তাদের কাছে ইসি অধিক গ্রহণযোগ্য হতো। আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচন ব্যবস্থায় যাতে জনগণের হারানো আস্থা ফেরানো যায়, কিন্তু আমরা সেটাও পাইনি।



 

Show all comments
  • kamal ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৩৭ পিএম says : 0
    dekha jak tara ki kore
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ