Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

১৩ হাজার লোকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর

সিরিয়ায় সামরিক কারাগারে গোপনে

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়ার একটি সামরিক কারাগারে গত পাঁচ বছরে ১৩ হাজারের মতো লোককে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন-অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রতি সপ্তাহে ৫০ জনের মতো বন্দীকে গ্রুপে গ্রুপে এসব গণফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। রাজধানী দামেস্কের কাছে এই জেলখানাটি পরিচিত ‘কসাইখানা’ হিসেবে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং মানবাধিকার কর্মী, যারা প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারের বিরোধিতা করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের খবর সবসময়ই অস্বীকার করে সিরিয়ার সরকার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের রিপোর্টটি তৈরি করেছে গত ছয় বছর ধরে আশিজনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। এদের মধ্যে সায়ডানায়া কারাগারের সাবেক বন্দী যেমন আছেন, তেমনি আছেন ঐ জেলখানায় রক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন।
রিপোর্টে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দাবি করছে, গণহারে এই ফাঁসির ঘটনাগুলো ঘটেছে ২০১১ সাল হতে ২০১৫ সালের মধ্যে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন গবেষক ডায়ানা সিমান বলেন, জেলখানায় যাদের রাখা হতো, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক এবং মূলত প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধিতা করার কারণেই তাদের জেল হয়।
ডায়ানা সিমান বলছেন, গত ছয় বছর ধরে আমরা বহু বেসামরিক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, যাদের সিরিয়ার সরকারের বিরোধী বলে গণ্য করা হয়। তারা সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন বা হয়তো সোস্যাল মিডিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। সায়েড-নায়া কারাগারে এবং সিরিয়ার অন্যান্য জায়গায় এ ধরনের লোকজনকেই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের রাখা হচ্ছে খুবই অমানবিক পরিবেশে। তাদের ওপর বন্দী অবস্থায় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তাদের অনাহারে রাখা হচ্ছে, চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না এবং ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে।
সেখানে নেয়ার আগে অল্পক্ষণের জন্য বন্দীদের নিয়ে যাওয়া হতো একটি সামরিক আদালতে। সেখানে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ করে ফেলা হতো তাদের বিচার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডায়ানা সিমান দাবি করছেন, এভাবে গণহারে যে লোকজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, সেটা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের জ্ঞাতসারেই ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘সায়েড-নায়া জেলখানার সাবেক রক্ষী এবং কর্মকর্তাদের দেয়া বিবরণ থেকে আমরা বলতে পারি, সিরিয়ার সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানেই এই গণহারে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। ফাঁসি দেয়ার আগে তাদের কোনো সামরিক আদালতে মাত্র দুই-তিন মিনিটের জন্য হাজির করা হয়। কাজেই ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদ-ের কিছুই এসব আদালতে মানা হয় না। সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অধীনে চলে এসব আদালত এবং এরা কি করছে তা অবশ্যই প্রেসিডেন্টের কাছে পরবর্তীতে জানায়।’
অ্যামনেস্টি তাদের রিপোর্টে বলছে, যাদের এভাবে ফাঁসি দেয়া হতো, তাদের দেহ ট্রাকে তুলে দামেস্কের টিশরিন সামরিক হাসপাতালে নেয়া হতো, সেখানে থেকে একটি সামরিক এলাকায় গণকবর দেয়া হতো। কেবল সায়ড-নায়া কারাগারেই পাঁচ বছরে পাঁচ হতে তের হাজার মানুষকে ফাঁসি দেয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করছে অ্যামনেস্টি।
যদিও ২০১৫ সালের পর এরকম ফাঁসি অব্যাহত থাকার কোনো প্রমাণ অ্যামনেস্টির হাতে নেই, তারা বিশ্বাস করে, ফাঁসি হয়তো এখনো বন্ধ হয়নি।
এই রিপোর্টের ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সরকারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করছে।
কিন্তু সিরিয়া সরকারের তরফ থেকে নাকি তারা কোনো সাড়া পায়নি। তবে সিরিয়ার সরকার অতীতে এভাবে হত্যা বা বন্দীদের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছে। সূত্র : বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ