Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সূর্যের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান নরসিংদীর গোপাল বিশ্বাস

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : যদি প্রশ্ন করা হয় কেউ কি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবেন? সবাই এক বাক্যে বলবে সম্ভব নয়। কারণ, সূর্যের দিকে তাকালে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। যুগযুগ ধরে মানুষ এ কথাই জানে এবং মানে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গোপাল বিশ্বাস বলছেন তিনি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে পেরেছেন। তিনি সূর্যের দিকে দীর্ঘ অর্ধঘণ্টা তাকিয়ে থেকে রেকর্ড গড়েছেন। এ ব্যাপারে ভারতের একটি অনলাইন মিডিয়াসহ টিভি চ্যানেলে তার এই রেকর্ড প্রচারিত হয়েছে। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র বিশ্বাসের পুত্র গোপাল আরো জানিয়েছেন, সূর্যের দিকে তাকাতে তার কোন অসুবিধাই হয় না। তবে প্রথম প্রথম তার খুবই অসুবিধা হতো। পরে তার প্রধান গুরুদেব স্কুল শিক্ষক হেমেন্দ্র চন্দ্র ব্রহ্মচারী সূর্যধ্যান করার দিক নির্দেশনা দিয়ে তাকে আশীর্বাদ করার পর তার আর কোন অসুবিধা হয়নি, হচ্ছে না। এর পর থেকেই গোপাল সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে সমর্থ হন। তিনি মাটিতে শুয়ে মাথার নিচে হাত দিয়ে ঘাড় বাঁকা করে সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ছোট বেলায়ই গোপাল ঠাকুর দাদার কাছে সূর্যপ্রণাম শিখেছিলেন। ভ্রু-যুগলের মধ্য দিয়ে কোন বিন্দুতে বা প্রদীপের শিখায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে তিনি ধ্যান করতেন। তার এই ধ্যানের পিছনে যৌক্তিকতা ছিল যে মহান স্রষ্টা সব কিছুই মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। যদি তাই হয়, তবে সূর্যও মানুষের কল্যাণেই নিয়োজিত রয়েছে। মানুষ হয়ে তিনিও সূর্যকে দেখতে পারবেন। তার এই ধারণাই তাকে সূর্যধ্যানে ব্রতী করেছে। তিনি আরো যাকে গুরু বলে মানেন, তারা হচ্ছেন ফরিদপুরের জমিদার পুত্র নিদ্রা জয়ী ও নিভৃতচারী, রায়চাঁদ। আরেকজন হচ্ছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের আত্মতত্ত্ব ও দর্শন তাকে এই সূর্যধ্যানে আরো আগ্রহী করেছে। গোপালের বিশ্বাস সূর্যপুত্র কর্ণের পরে আর কেউ সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনি। বর্তমান পৃথিবীতে গোপাল বিশ্বাসই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তার এ কৃতিত্ব নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চাচ্ছেন। পাশাপাশি তার এই সূর্যধ্যানের কাহিনী গিনেসবুকে রেকর্ডভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন।
তবে তার এ তাকিয়ে থাকার পিছনে অনেকটা দৈবশক্তি কাজ করে বলে জানান গোপাল বিশ্বাস। তিনি আরো জানান, হিন্দুধর্মে সূর্যের দিকে তাকিয়ে সূর্যধ্যান করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
ধর্মের দিকটা বাদ দিয়ে গোপাল বিশ্বাসের এই অবিশ্বাস্য ঘটনার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন জ্যোতির্বিদ ও চক্ষু বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে। জ্যোতির্বিদগণের মতে, সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকা একেবারেই অসম্ভব। সূর্য আমাদের সৌরম-লের একটি অতি শক্তিশালী নক্ষত্র। এটি একটি গ্যাসীয় অগ্নিপি-। প্রধানত, হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামসহ অন্য কিছু গ্যাসের সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি বায়বীয় পি- এটি। বয়সের দিক থেকে পৃথিবীর সমান হলেও আকারের দিক থেকে পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুণ বড়। সূর্যের জ্বলন্ত বাষ্প বা গ্যাসীয় কণাসমূহের প্রবল গতিতে ছোটাছুটির কারণে আগুনের ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করছে। আর সেখান থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে সারা সৌরম-লে। সূর্য থেকে প্রতিদিন পৃথিবীতে যে অতিবেগুনী রশ্মি বিচ্ছুরিত হয় তা যদি ওজোন স্তরে বাধাগ্রস্ত না হতো তা হলে সারা পৃথিবীতে প্রাণের অনেক ক্ষতি সাধিত হতো। অনেকের মতে, প্রাণের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়তো। সূর্যের কেন্দ্র ম-লের তাপ ১ কোটি ৫০ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর পৃষ্ঠভাগে তাপমাত্রায় ৬ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস। সূর্য থেকে যে আলো বা তাপ সৌরম-লে বিচ্ছুরিত হয় তার ২০০ কোটি ভাগের মাত্র ১ ভাগ পৃথিবীতে এসে পৌঁছে। আর এ তাপের ফলেই পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও জীবজন্তু ও মানুষ প্রাণ ধারণ করে। পৃথিবীর শক্তির মূল উৎই সূর্য। সূর্য প্রচ- পরিমাণ তাপ শক্তির আধার। এর দিকে তাকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক মতে একেবারেই অসম্ভব। সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকাতো দূরের কথা, খালি চোখে সূর্যের আলোতে চোখ মেলাও কঠিন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, চোখ হচ্ছে প্রাণী তথা মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যাকে মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। যাকে বলা হয়, দর্শনেন্দ্রীয়। চোখের উপরের ও নিচের পাতা চোখকে আঘাত, ধুলো-বালি ও রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষা করে। চোখের ভিতর অবস্থিত চক্ষুতারার রন্ধ্র সূর্যের নিয়ন্ত্রিত আলো চোখের ভিতর প্রবেশ করায়। চোখের ভিতরে যে রেটিনা রয়েছে, সে রেটিনায় রয়েছে রড্স ও কোন্স নামক দুটি আলোক রশ্মিগ্রাহী বিশেষ স্নায়ুকোষ। রড্স অল্প আলোতে এবং কোন্স বেশী আলোতে দেখতে সাহায্য করে। রেটিনা থেকে স্নায়ুগুচ্ছ একত্রিত হয়ে অক্ষিস্নায়ু গঠন করে মস্তিষ্কে পৌঁছেছে। এর মাধ্যমেই মানুষের চোখের দর্শন-উদ্দীপনা মস্তিষ্ক কোষে পৌঁছায়। কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব ক্রমান্বয়ে কর্নিয়া, জলীয় পদার্থের প্রকৌষ্ঠ, লেন্স ও জেলির মত পদার্থের মধ্য দিয়ে রেটিনার উপরে পতিত হয়ে ফটো রিসিপ্টরের মাধ্যমে উল্টো প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। কিন্তু মস্তিষ্ক কোষের কারণে মানুষ তা সোজাভাবে দেখতে পায়। এ ক্ষেত্রে সূর্যের দিকে তাকালে মানুষ কিছুই দেখতে পাবে না। কারণ, সূর্যের আলোকরশ্মির তেজোদীপ্ততার কারণে চক্ষুতারার রন্ধ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কোন কারণে এই চক্ষুতারা দিয়ে তীব্র আলো রেটিনার উপর পতিত হয় তবে রেটিনার ফটোরিসিপ্টর ও স্নায়ুকোষগুলো পুড়ে যাবে। এতে চক্ষু অন্ধ হয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ