পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন সচেতনতা
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করায় বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা। রাজধানীতে এমনিতেই ফুট ওভারব্রিজ কম লোকেই ব্যবহার করেন। অনেক জায়গায় ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও এর নিচ দিয়ে রাস্ত পার হচ্ছেন অনেকে। যার ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। আবার রাজধানীর অনেক ব্যস্ততম এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় নগরবাসীরা অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির চলাচলের মধ্যেই রাস্তায় পার হতে হচ্ছে। ফলে যান চলাচল তেমন বিঘœ হচ্ছে, পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনা।
ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ভাগ পথচারী রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। আর রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন ৫০ শতাংশ পথচারী। বর্তমানে রাজধানীতে ওভারব্রিজের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিকেরও বেশি। তবে এগুলো ব্যবহার হচ্ছে না ঠিকমত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের গত এক বছরের গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় বছরে ৪০০টি দুর্ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে ৮৫ ভাগ দুর্ঘটনায় নিহত হন পথচারীরা। রাস্তা পার হতে গিয়েই তার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। দিন দিন এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
গতকাল বিজয় স্বরনী মোড়ে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া ও তার মা রোমানা বেগম। দুপুর দেড়টার দিকে তারা রাস্ত পার হতে গিয়ে একটি মাইক্রোবাসের নীচে চাপা পড়তে যাচ্ছিলেন। চালক হার্ড ব্রেক করাতে মা-মেয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন। তবে তাদের মধ্যে যে আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছিল তা কাটিয়ে ওঠতে অনেকটা সময় লাগল। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে নগরীর বিভিন্ন এলাকাতে। ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় অনেক স্থানে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নগরবাসী রাস্তা পার হচ্ছেন। আবার ফুট ওভারব্রিজ থাকার পরও অনেকেই তা ব্যবহার করছেন না। পুলিশের কর্মকর্তরা বলছেন, আইন করে এবং পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পরও খুব কম সংখ্যাক পথচারী ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষকে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করাতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি, সিটি করপোরেশনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পুলিশ, সিটি করপোরেশনের সম্বনয় না থাকলে শুধু আইন করে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের বাধ্য করা সম্ভব নয়।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় নগরীর গুলিস্তান মোড়, শাহবাগ মোড়, বাড্ডা লিংক রোড, বনশ্রী মোড়, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, রূপসী বাংলা হোটেল সংলগ্ন প্রধান সড়ক, দৈনিক বাংলার মোড়, কাকরাইল বিজয় সরণি, গুলশান-১ ও ২, পুরানা পল্টন, টিএসসি মোড়, সোনারগাঁও মোড়ে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীরা রাস্তা পার হচ্ছেন।
গত রবিবার সোনারগাঁও মোড়ে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়ক। বিভিন্ন মিডিয়া অফিস, ব্যাংক, হোটেল, শপিং মলসহ অন্য বাণিজ্যিক ভবন এখানে অবস্থিত। অথচ পথচারীদের জন্য এখানে কোনো ফুট ওভারব্রিজের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়নি। একটি আন্ডারপাস থাকলেও সেটি অনেক দূরে অবস্থিত এবং ব্যবহারের অনুপযোগী। গুলশান-১ ও ২ নম্বর এখানকার চৌরাস্তাগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঝুঁঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। বিভিন্ন ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের অফিস থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থান দু’টিতে আসতে হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এখানেও এখন পর্যন্ত কোনো ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়নি।
হোটেল রূপসী বাংলার মোড়ে গতকাল সোমবার সকাল ১১টা থেকে ঘণ্টাখানেকের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতি পাঁচ মিনিটে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন পথচারী পারাপার হচ্ছে। অফিস ছুটির সময় এই সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। ব্যস্ত পথচারীদের সঙ্গে কথা বললে, সকলেই একটি ফুট ওভারব্রিজ থাকলে ভালো হতো, বলে জানায়। একই অবস্থা দেখা গেছে রমনা থানার সামনের রাস্তাটিতেও।
হোটেল রূপসী বাংলার মোড়ে কথা হয় শাম্মী আক্তার নামের একজন নার্সের সঙ্গে। তিনি বারডেম হাসপাতালে চাকরি করেন। রূপসী বাংলার মোড় দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, এখানে চারিদিক দিয়ে রাস্ত বন্ধ। এই মোড়ে গাড়ির চাপও অনেক বেশি, রাস্তা পারাপার হতে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
তিনি বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে আমাদের। একটি ফুট ওভারব্রিজ থাকলে আমাদের চলাচলের জন্য সুবিধা হতো, আর শঙ্কামুক্তভাবে রাস্তা পারাপার হতে পারতাম। ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও জেব্রা ক্রসিং না থাকায় শারীরিক ভাবে অক্ষম কিংবা বয়ষ্ক মানুষের জন্য উঁচু ফুট ওভারব্রিজ পার হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। পথচারী, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে জেব্রা ক্রসিং ছিল প্রায় মোড়েই, কিন্তু সেগুলো উঠে যাওয়ায় পথচারীদের পারাপারে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ফুট ওভারব্রিজের যে উচ্চতা থাকা প্রয়োজন ঢাকার ফুট ওভারব্রিজগুলোর উচ্চতা তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বিভিন্ন এলাকার ফুট ওভারব্রিজগুলো পথচারীরা ব্যবহারে উৎসাহ পান না।
গতকাল স্কলে পড়া ইমরুল কবিরের আর একটু হলেই সলিল সমাধি হতে পারত! রূপসী বাংলা হোটেলের সামনের রাস্তা পার হতে চাচ্ছিল সে। ভাগ্য ভাল, দ্রুত গতিতে ছুটে আসা প্রাইভেট কারটির ড্রাইভার জোরে ব্রেক কষাতে এ যাত্রায় বেঁচে গেছে সে। তাকে যে প্রতিদিনই এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। পরিবাগের বাসিন্দা স্কুলছাত্র কবির ভয়ে কাঁপছিল! ট্রাফিক কনস্টেবল তাকে ফুটপাতে পৌঁছে দিলেও তার আতঙ্ক কমছিল না। কবিরের মত নানা পেশা ও বয়সের হাজার হাজার মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে এদিক দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করেন। পরিবাগের সাথে লাগোয়া একটি ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও সেটি পার হয়ে রূপসী বাংলা হয়ে রমনা বা বারডেমের দিকে যেতে পুনরায় ব্যস্ত রাস্তা পার হতে হয়।
ফলে রূপসী বাংলার মোড়ে জেব্রা ক্রসিংসহ একটি ফুট ওভারবিব্রজ থাকলে রাস্তা পারাপারের জন্য ভালো হতো বলে মন্তব্য করলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল এবং পথচারীরা। শুধু এই রূপসীবাংলার মোড়েই নয়, রাজধানীর জনবহুল জায়গা রমনা থানার সামনের মোড়টিতেও নেই জেব্রা ক্রসিং। পথচারীদের পরাপারের জন্য নেই ফুট ওভারব্রিজ। অনেক মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও, জেব্রা ক্রসিং না থাকায় নিরাপদ চলাচল কঠিন হয়ে পড়ছে।
রমনা থানার সামনের মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন রমনা জোনের একজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা সজিব। তিনি বলেন, এখানে জেব্রা ক্রসিং ছিল এক সময়, তা উঠে গেছে। এই বিষয়গুলির দিকে সিটি করপোরেশনের নজর দেয়া দরকার। তিনি বলেন, জেব্রা ক্রসিং না থাকায় আমাদের সিগনাল ধরতেও সমস্যা হয়। তাছাড়া এখানে একটি ফুট ওভারব্রিজ থাকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
জেব্রা ক্রসিং এবং ফুট ওভারব্রিজের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ট্রাফিক-দক্ষিণ) উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, রূপসী বাংলার মোড়, রমনা থানার সামনে আগে জেব্রা ক্রসিং ছিল। সারা বিশ্বেই পথচারীদের জন্য জেব্রা ক্রসিং থাকা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজের বিষয়টি দেখে সিটি করপোরেশন। শামীম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সবসময়ই সিটি করপোরেশনকে তাগীদ দেয়া হচ্ছে। জেব্রা ক্রসিং দিলে আমাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও অনেক সুবিধা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।