পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অমর বাণী দেশে এখন বাস্তব। দেশের রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে শুধু মহিলা নয়; সর্বত্রই নারীরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছেন। কিšুÍ পুঁজির অভাবে তাদের উদ্যম আটকে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে স্বাবলম্বী নারীরা ঋণ পরিশোধে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ক্ষুদ্র, কৃষি এবং ব্যবসার জন্য নারীরা যে ঋণ নিচ্ছে সে ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করার চেষ্টা করেছে। ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত হিসেব-নিকেশের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসার জন্য ব্যাংক ঋণে খেলাপীর তালিকায় পুরুষের সংখ্যা বেশি। ব্যাংকের খেলাপী তালিকায় নারীদের সংখ্যা খুবই কম। তারপরও নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্যম থেমে যাচ্ছে ব্যাংক ঋণে। ব্যাংকগুলো নারীদের ঋণে জানা জটিলতা সৃষ্টি করায় নারী উদ্যোক্তারা কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাহিদামতো ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় দেশের নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্যমে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
হাসনারা বেগম। স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার। বড় কিছু করার। তবে লেখাপড়া শেষ না হতেই বউ হয়ে আসেন নরসিংদীর ব্রহ্মপুত্র তীরের খাস হাওলা গ্রামে। স্বামী দরিদ্র কৃষক। কষ্ট আর সুখের দোলাচলে হাসনারা বেগমের সংসার চলছিলো। তবুও সুখের আশা ছাড়েননি তিনি। নিজের মেধা, প্রচেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে ঘুরাতে চাইলেন ভাগ্যের চাকা। স্বল্প পুঁজিতে শুরু করলেন বাড়ীর আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন। আরো বড় কিছু করতে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনে ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের সদস্য হন। শুরু হলো দিন বদলের পালা। ব্যাংক থেকে পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগ নিয়ে হাসনারা শুরু করেন গাভী পালন, সবজি চাষ এবং ট্রলি ভাড়ার ব্যবসা। বর্তমানে হাসনারা ১টি ট্রলি গাড়ী, ৩টি গরু এবং ৩ কানি জমির মালিক। এখন সে নিজেই স্বাবলম্বী নয়, আরও একাধিক পরিবার তার মাধ্যমে স্বাবলম্বী। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সুখের সংসার। দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে তার উপার্জন। হাসনারা বেগমের মত দেশের ৬৪ জেলার কয়েক লাখ নারী অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী। এক সময়ের ঘরকন্না বাঙালি নারী এখন শিল্পোদ্যোক্তা। এসব নারী শুধু নিজের ভাগ্যই পরিবর্তন করেননি, সমাজ, দেশ এবং দেশের অর্থনীতির পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।
দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত রচনা ও সফলতার আকাশ ছুঁলেও এগিয়ে চলা এসব নারী উদ্যোক্তার পিছুটান দিচ্ছে ব্যাংক ঋণ। ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়ার হার পুরুষ উদ্যোক্তাদের চেয়ে ভালো হলেও নারীদের ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ নেই। নারী উদ্যোক্তাদের অভিযোগ- বিভিন্ন ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের জন্য ব্যাংকে আমন্ত্রণ জানালেও ঠিক সেভাবে ঋণ দিচ্ছে না। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে ঋণ প্রদানে অনীহা প্রকাশ করছে। এতে ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছে নারীরা। আবার অনেকক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রথাসিদ্ধ নিয়ম বা আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঋণ বরাদ্দ করলেও তখন আর ওই ঋণের অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকে না। এভাবেই নারী উদ্যোক্তারা ঋণের অভাবে ব্যবসায় পিছিয়ে পড়ছেন। অথচ ব্যাংকগুলোর কাছে অলস অর্থের পাহাড় জমছে। এক্ষেত্রে সমস্যা জামানত ও প্রতিষ্ঠিত জিম্মাদার বা গ্যারান্টার এবং স্থায়ী ব্যবসাসহ নানা নথিপত্র। অপরদিকে গ্রামীণ ব্যাংকসহ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী এনজিওগুলো জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে লাভসহ উদ্যোক্তাদের থেকে উঠিয়ে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো সারা বছর যে ঋণ বিতরণ করে, তার ১৯ শতাংশ দেওয়া হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে। কিন্তু এসব এসএমই ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ পান নারী উদ্যোক্তারা। আর চাহিদামতো ঋণ না পাওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না।
অবশ্য অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে ব্যাংকারদের আচরণ বদলাতে হবে। নারী উদ্যোক্তা বান্ধব মনোভাব গড়ে তুলতে হবে ব্যাংকারদের মধ্যে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিতে হবে। নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। একই সঙ্গে পৃথিবীর সব দেশেই ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশেও ব্যাংকগুলোকে এ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের শ্রমশক্তির ৪০ ভাগ নারী। উন্নত দেশের ২৫ ভাগ শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নারী। অথচ বাংলাদেশে এই হার ১০ শতাংশের কম। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক সমর্থন না পাওয়া। নারী উদ্যোক্তারা চাহিদামতো ঋণ পাচ্ছেন না। ঋণ পেতে পুরুষের চেয়ে বেশি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা উঠে আসতে পারছেন না। গবেষণা প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সূচকে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম, এটি হতাশাজনক। উন্নত দেশে নারীরা বড় ভোক্তা শুধু নয়, বড় উদ্যোক্তা হচ্ছেন। বাংলাদেশেও নারী উদ্যোক্তাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংগতির কারণে সেই সুযোগ তাঁরা ব্যবহার করতে পারছেন না। তাই নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে স্বল্পসুদে ঋণ, গ্যারান্টি জটিলতা নিরসন, নিরাপদ বাজার নিশ্চিত ও নারীদের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার বন্ধ করার সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সূত্র মতে, একজন উদ্যোক্তাকে যতটা ঋণ দেওয়া হয়, তার বিপরীতে শতভাগের বেশি সিকিউরিটি দাখিল করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সিকিউরিটি ১১০ শতাংশ। তবে বেশিরভাগ ব্যাংকই ১৫০ থেকে ১৮০ শতাংশ পর্যন্ত জামানত চায়। কিন্তু নারী উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগের পক্ষে জামানত দেওয়ার এ শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয় না। আর তাই ব্যবসার পরিকল্পনা করেও আর্থিক সংকটে ৯০ শতাংশ নারী পিছিয়ে যেতে বাধ্য হন। জানা গেছে, ঋণ পেতে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩০ হাজার প্রশিক্ষিত নারী উদ্যোক্তা। তাদের কেউ কেউ ঋণ পেলেও তা চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত নয়। এদিকে দেশের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম প্রণয়নের জন্য একটি প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই)। এরপর চলে গেছে দুই বছরের অধিক সময়। আজও আলোর মুখ দেখেনি নারী উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশিত ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ১ বছরের জন্য ৩শ’ মহিলাকে এর আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে। যেখানে ১ লাখ মার্কিন ডলারের সহায়তা পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংকের সাথে এ বিষয়ে কথা চলছে। এটা সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে বড় আকারের ফান্ড আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, ৯৭-৯৯ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে সময়মতো তা পরিশোধ করেন। যা একটি বিরাট সাফল্য। এরপরও তাদের ব্যাংক ঋণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একাধিক নারী উদ্যোক্তা মনে করেন, এসএমই ঋণের ওপর তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদ নেয়া হয়। সূত্র মতে, এসমএমই ঋণে নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সমীক্ষার ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বলেছে, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তাদের বছরে যে ঋণের চাহিদা রয়েছে তার ৬০ শতাংশই পূরণ করতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংকাররাও তাদের ঋণ দেওয়া ঝামেলা বলে মনে করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক শাখায় নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ডেস্ক থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ব্যাংকেই নেই।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে নারীর অবদান দিন দিন বাড়ছে। তবে পুরুষের অবদান যেখানে ৮০ শতাংশের ওপরে, সেখানে নারীর অবদান মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। আমাদের সমাজব্যবস্থা চিন্তা-চেতনায় আগের ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু আরও পরিবর্তন হতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশের নারীদের দারিদ্র্য জয়ের সাফল্য ও উদ্যোগ দেখে অভিভূত হয়েছেন। গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশে এসে তিনি বলেছিলেন, এ দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। হাঁস-মুরগি, পশু পালন, মাছের চাষ করে আজ তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরা আগে স্কুলে যেত না। এখন যাচ্ছে। সবকিছুই ভালো লেগেছে, ভালোর দিকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির অর্থনীতিতে নারী উদ্যোক্তাদের অবদানের কথা স্বীকার বলেন, অনেক নারী উদ্যোক্তা অভিযোগ করেছেন তাদের কাছে এসএমই ঋণের ওপর ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কেন ব্যাংকগুলো এত সুদ নিচ্ছে তা আমি জানি না। তাই ব্যাংকগুলোকে আমি বলবো- তারা যেন নারী উদ্যোক্তাসহ এসএমই খাতে সহজ শর্তে কম সুদে ঋণ প্রদান করে। তিনি বলেন, অধিক কর্মসংস্থান ও মানুষকে স্বনির্ভর করার স্বার্থে জামানতবিহীন ঋণ দেয়া যায় কিনা তা ব্যাংকগুলোকে বিবেচনায় আনার জন্য বলেছেন। একই সঙ্গে ভোক্তা ঋণে কোন জামানতের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চাকরির সার্টিফিকেটই জামানত বলে গণ্য হয়। তাই এসএমই ঋণেও ব্যক্তির প্রশিক্ষণ দক্ষতাকে জামানত হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেন গভর্নর।
সূত্র মতে, দেশের মোট শিল্প উদ্যোক্তার মধ্যে ১৯ শতাংশের বেশি নারী। এক সময় বুটিকস, পার্লার ব্যবসায় অধিকাংশ নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়লেও বর্তমানে প্রসারিত হচ্ছে নারী উদ্যোক্তাদের কর্মক্ষেত্র। শহর থেকে শুরু করে গ্রামেও বাড়ছে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা। পাশাপাশি বাড়ছে কর্মক্ষেত্র। এক সময় আইটি সেক্টরটি শুধু পুরুষের জন্য মনে করা হলেও এখন এ সেক্টরে নারী উদ্যোক্তারা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের মোট নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৮৫৮ জন। ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে ৩২ হাজার ৮৪১ জন। এসব নতুন উদ্যোক্তা ৪ হাজার ১৫৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা নিয়েছে। অথচ ২০১৩ সালেও নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৬৯৫ জন। অবশ্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা ২৩ লাখেরও বেশি। উইমেন এন্টারপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল নারীদের সহজ শর্তে চার থেকে পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ এবং সহজেই ব্যাংক ঋণ পেতে একটি পৃথক ব্যাংক গঠনের দাবি জানান।
অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেছেন, অনেকেই বলেন, মানুষের মৌলিক শিক্ষা পাওয়া যেমন অধিকার, তেমনি ঋণ পাওয়াটাও অধিকার। অথচ আমরা গ্রামের অসহায় কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুদ্রঋণের আওতায় রেখেছি। যাদের ঋণ পেতে ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ২৫ শতাংশ সুদ গুনতে হয়। তাছাড়া সেখানে ১০০ টাকা চাহিদার বিপরীতে ৪০ টাকার ঋণের যোগান মিলছে। ৬০ টাকা দিতে পারছে না তারা। ফলে গ্রামের মানুষ ঋণ চেয়েও পাচ্ছে না। তাহলে কি ওই মানুষগুলোর ঋণ পাওয়ার অধিকার নেই। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে অলস অর্থ পড়ে থাকার পরও ঋণ দিচ্ছে না। এটা এক ধরনের বৈষম্য। তাই সময় এসেছে নতুন নতুন পথ বের করার। জামানত ছাড়া ঋণ দেওয়ার। এনজিওরা জামানত ছাড়া ঋণ দিয়ে ৯৮ শতাংশ আদায় করতে পারলে ব্যাংকগুলো কেন পারবে না এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।
সূত্র মতে, সরকার নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি শক্তিশালী করতে তাদের আর্থিকভাবে সচ্ছল ও স্বাবলম্বী করে তুলতে বর্তমানে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬-এ বলা হয়েছে, এসএমই খাতে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃঅর্থায়ন ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে। তবে এ নির্দেশনা মানছে না ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এ কারণে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে দেয়া ঋণের হার মাত্র ৪ শতাংশ।
সূত্র মতে, নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিডব্লিউসিসিআই ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭ হাজার ৪৯০ জন নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে জয়িতা বিপণন কেন্দ্র। সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ১৬ হাজারের বেশি নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতিও রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের এ সমিতির সদস্যদের মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, তাদের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৪১ জন সেবা নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগ নারীদের জন্য ভিন্ন (খাতভেদে ভিন্ন) সুদের হার নির্ধারণ করেছে। এ হার অব্যাহত থাকলে নারীদের বড় একটি অংশ স্বাবলম্বী হয়ে মূল ধারায় আসবে। ব্যাংকের প্রত্যেক শাখায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডেস্ক থাকার বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডেস্ক আছে। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ছিলো না বা কিছু সমস্যা ছিলো। সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত তদারকি করছে।
নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বর্তমানে ৮৫০ কোটি টাকার তহবিল রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ৮শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এসএমই ঋণের ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিতরণের নির্দেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও এটা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। মাত্র ৪ শতাংশ নারীকে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।