Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংযোগ পদ্ধতি সহজ করে দ্রুত বিদ্যুৎ দিন

আরইবি’র জিএম সম্মেলনে নসরুল হামিদ বিপু

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সংযোগ পদ্ধতি সহজ করে দ্রুত বিদ্যুৎ দিন। আবাসিক সংযোগ এক দিনের মধ্যে এবং অন্যান্য সংযোগ দ্রুততর সময়ে দিতে হবে। শিল্প সংযোগ আটাশ দিনে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা আরো কম সময়ে দিতে সচেষ্ট থাকবেন। অপ্রয়োজনীয় কাগজপাতি চেয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করবেন না।
প্রতিমন্ত্রী গতকাল (শনিবার) বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে ‘জেনারেল ম্যানেজার সম্মেলন’-এ প্র্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের সিংহভাগ কাজ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে মাধ্যমে আপনারাই করছেন। এ কাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ আপনাদেরকেই নিতে হবে। এমনভাবে পরিকল্পনা করুন মানুষ যাতে আপনাদের ‘আলো দাতা’ হিসেবে সম্মান করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো নিজ নিজ ভৌগলিক এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করতে পারবে না। এ ব্যাপারে কেউ নির্দেশনা ভঙ্গ করলে তার ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ট্রান্সফরমার পোড়ার হার আরও কমাতে হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করতে হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পিডিবি’র লোড শেয়ারিং আনুপাতিক হারে করতে হবে। লোড বরাদ্দের ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা যায় কিনা তা যাচাই করা হবে। তিনি আবাসিক সংযোগ ১ দিনে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
এক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে দ্রুত সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকের মালিকানা দলিলের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে দ্রুত সংযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে যত্রতত্র পোল দিয়ে পরিকল্পনাহীনভাবে লাইন নির্মাণ করায় ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য রাজধানীর আশেপাশের সমিতিগুলোতে আপাতত: ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করেন। বর্তমানে পবিসগুলোর কলেবর যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে তুলনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে না বিধায় এ ব্যাপারে ওয়ার্কশপ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসলেও তা শেষ হয়ে যায়নি। গ্রাহক সংযোগ প্রদানে আরো স্বচ্ছতার উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি। দেশের ৮০ শতাংশ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের। সুতরাং শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হবে এবং এতে পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে সরকারের সাফল্য আসবে। গ্রীডের অভাবে যে সকল সমিতি বিদ্যুৎ গ্রহণ করতে পারছে না সে সকল সমিতির জিএমগণকে গ্রীড নির্মাণ সম্পর্কে একটি জরিপ প্রতিবেদন তাঁর নিকট প্রেরণের নির্দেশ দেন।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সিস্টেম লস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে লাভজনক সমিতির সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সমিতিগুলো নিজস্ব অর্থায়নে প্রি-পেইড মিটার ক্রয়পূর্বক গ্রাহক প্রান্তে স্থাপন করতে হবে। কারণ, ১ শতাংশ সিস্টেম লস কমলে বছরে প্রায় একশ’ বিশ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একটি সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণের নির্দেশনা প্রদান করেন।
সম্মেলনে বাপবিবোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। উক্ত পাওয়ার পয়েন্টে সমিতিসমূহের বর্তমান অবস্থা, বিভিন্ন অর্জন, ব্যর্থতা, কারিগরী ও আর্থিক বিশ্লেষণ, শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ, লাইন নির্মাণ ও উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা, লক্ষ্যমাত্রা, প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, বাপবিবোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
শতভাগ উপজেলা বিদ্যুতায়নের বিষয়ে মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, পর্যায়ক্রমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মোট ৪৬০টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য ৩৬,৯১২ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৬টি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং আরও ৭টি প্রকল্প বিবেচনাধীন আছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৭৮ লাখ। আগামী জুন’১৭ মাসে আরো নতুন ২২ লাখ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হবে। এতে গ্রাহক সংখ্যা হবে ২ কোটি।
আলোচনায় বলা হয়, ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে অনলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ, ই-জিপি, এসএমএস বিলিংসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইজিবাইকের ব্যাটারী চার্জিং-এর জন্য বাপবিবোর্ড ইতোমধ্যে ৪টি সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করেছে। এছাড়া ৪০টি সোলার সেচ পাম্প স্থাপনের পাশাপাশি আরও ২ হাজার সোলার সেচ পাম্প স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাপবিবোর্ডের  উদ্যোগে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩৫ হাজার কিলোমিটার লাইন এবং ৮৪টি উপকেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী এ সময়  বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সেরা জেনারেল ম্যানেজার নির্বাচিত হওয়ায় মানিকগঞ্জ-১ এর জেনারেল ম্যানেজার ওবায়দুর রহমান এবং সেরা প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আব্দুর রহিম মল্লিককে পুরস্কৃত করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ