Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজগুলো এখন অপরাধীদের আস্তানা

প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

নিরাপত্তার অভাব, ময়লা-আবর্জনা ও নানা অব্যবস্থাপনায় ব্যবহার অনুপযোগী বলে অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজগুলো অপরাধীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। পথচারীদের পারাপারের জন্য এসব ফুট ওভারব্রিজ স্থাপন করা হলেও অধিকাংশই ব্যবহার করা হচ্ছে না। রাজধানীর অনেক জায়গায় ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও এর নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন অনেকে। যার ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষকে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করাতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত। সাধারাণ পথচারীরা বলছেন, নানা অব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা রাজধানীর অধিকাংশ ফুট ওভারব্রিজের। পথচারীদের অভিযোগ, ময়লা-আবর্জনা আর অবৈধ বসতি, দুইয়ে মিলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এগুলো। এছাড়া, রয়েছে মাদকাসক্ত ও ছিনতাইকারী চক্রের অবাধ বিচরণ। রাজধানীতে রয়েছে ৪১টি ফুট ওভারব্রিজ। এর মধ্যে ৩৫টি স্টিলের। ৬টি কংক্রিটের। আর আন্ডারপাস রয়েছে ৩টি। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের রয়েছে ৩টি ওভারব্রিজ। তবে পথচারীরা এগুলো ব্যবহার করতে চান না। এ জন্য প্রায়ই চলে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজন ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হচ্ছেন। এতে করে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা। এমনটি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফুট ওভারব্রিজগুলো অনায়াসে চলাচলের উপযোগী রাখতে হবে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে স্থাপন করতে হবে একাধিক আধুনিক চলন্ত সিঁড়ির ফুট ওভারব্রিজ।
ফার্মগেটে গতকাল এ ব্যাপারে কথা হয় একজন কলেজশিক্ষকের সাথে। কলেজশিক্ষক আবু হেনা মোস্তাফা বলেন, ফুট ওভারবিব্রজ যেখানে ব্যবহার করা প্রয়োজন অনুভব করেন নাগরিকরা, সেখানে আছে বিচিত্র সব বাধা।  এছাড়া ফুট ওভারব্রিজগুলো ব্যবহারের উপযোগী করে স্থাপন করা হয়নি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে অনেকেই অপারগ। পুরনো জরাজীর্ণ ফুট ওভারব্রিজগুলো নতুন করে স্থাপন করা প্রয়োজন। চলন্ত সিঁড়ির ফুট ওভারব্রিজ হলে সব বয়সের পথচারীদের জন্য ভালো হতো বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন।  
বনানীর কাপড় ব্যবসায়ী রাশেদুজ্জামান বলেন, ফুট ওভারব্রিজগুলো অপরাধীদের আড্ডাখানা। আবার কোনো কোনোবার ব্রিজ দোকানপাটে ভর্তি। চলাচলের অযোগ্য। আছে ময়লা-আবর্জনা। ছিনতাইকারী ও প্রতারকচক্রের দখলে থাকে বেশির ভাগ সময়। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের এ ব্যাপারে আরো সতর্ক হতে হবে। মানুষ যাতে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন, সেরকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজধানীর বনানী দেশের একমাত্র  চলন্ত সিঁড়ির ফুট ওভারব্রিজ। নগরবাসীর অনেকেই আগ্রহ নিয়ে তা ব্যবহার করছে। তবে কেউ কেউ ব্রিজের নিচ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত গাড়ির সাথে সাথে লুকোচুরি  খেলে রাস্তা পার হচ্ছেন। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি কিন্তু আমরা সময়ের অভাবে সে বিষয়টা ভুলে যাই। তাই আমরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছি। জীবনের চেয়ে সময় যেখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন অনেকেই সেখানে সচেতন তার বুলি অর্থহীন।
ফার্মগেটের ওভারব্রিজটি জয় করেছে তথাকথিত ব্যস্ততাকে। নিচ দিয়ে পারাপারের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই সবাইকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে ফার্মগেটের মতো রাজধানীর বেশির ভাগ ওভারব্রিজই হকারদের দখলে, যা নিরুৎসাহিত করছে পথচারীদের।
ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে সমাধান বলতে গেলে শূন্য। আর তাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো: সামছুল হক বলেছেন, পথচারীকে সুযোগসন্ধানী না করে জনবান্ধব করতে হবে ওভারব্রিজগুলোকে। তাই আমার মনে হয় যতই ফুট ওভারব্রিজ বানানো হোক না কেন তার চেয়েও  বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং যানজট নিরসন করা ফুট ওভারব্রিজ থেকে অপরাধীচক্রকে বিতাড়িত করা। এ জন্য প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। পাশাপাশি জনসাধারণকে আরো সচেতন করতে প্রয়োজন সরকারী উদ্যোগ।
এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনের ওভারব্রিজটি দিয়ে সাধারণত মানুষজনের চলাচল নেই। হাতেগোনা বিশ-পঞ্চাশজন মানুষের স্বাক্ষাৎ মেলে সারাদিনে। একইভাবে রাজধানীর অধিকাংশ ওভারব্রিজ দিনের বেশির ভাগ সময় ফাঁকাই থাকে। অপ্রয়োজনীয় জায়গায় গড়ে তোলার জন্যই কোটি টাকার খরচের এই ওভারব্রিজগুলো এভাবেই অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকছে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা শাহবাগের ফুট ওভারব্রিজটিতে  দেখা মেলে অব্যবস্থাপনার বাস্তব চিত্র। মাঝে মধ্যে দু-একজন পথচারীর দেখা মিললেও অনেকটা বিরক্তি নিয়েই পার হচ্ছেন তারা। এমন বেহাল অবস্থা রাজধানীর অধিকাংশ ফুট ওভারব্রিজের। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে প্রতিনিয়তই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ পথচারীদের। ফলে ব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হন তারা। অভিযোগ স্বীকার করে সিটি কর্পোরেশন বলছে, অব্যবহৃত কিছু ফুট ওভারব্রিজে এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে ডিসিসি তৎপর রয়েছে বলেও দাবি তাদের।
এদিকে, রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজের এমন বেহাল অবস্থার জন্য কিছু ক্ষেত্রে দায়ী পথচারীরাও, যা প্রভাব ফেলছে এর ব্যবস্থাপনায় এমন মত বিশেষজ্ঞদের।
ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য ঢাকা  মেট্রোপলিটন পুলিশ গত ৫ বছরে একাধিকবার প্রচারণা চালিয়েছে। যারা এ নিয়ম মানবেন না তাদের কাছ থেকে আদায় করা হবে জরিমানা, প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা হাজতবাস। এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান। তবে মাঝে মধ্যে এ ব্যাপারে পুলিশ তৎপর হলেও বাস্তবে এর বেশি প্রতিফলন ঘটছে না।
উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীর অধিকাংশ ব্যস্ত সড়কে ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও অনেকেই তা ব্যবহার করেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই দ্রুতগামী গাড়ির সামনে থেকে রাস্তা পার হয়ে থাকেন। একজনের দেখাদেখি যুক্ত হয় অনেকে, ফলে সৃষ্টি হয় অনাকাক্সিক্ষত যানজট। এ জন্য প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তিনি আরো জানান, ঢাকা  মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বহুবার আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়ম না মানা এসব পথচারীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফুট ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো অনুরোধ কাজে আসেনি। ফলে নিয়ম ভাঙা পথচারীদের নিয়মের মধ্যে আনার জন্যই মহানগর পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ