Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিষয় : বাংলা (বিরচন অংশ)
শামসুল আলম
চেয়ারম্যান
ক্যারিয়ার গাইডলাইন

             (৬)
আসিতেছে শুভদিনÑ
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে সেবিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
সারমর্ম: মেহনতি মানুষের শ্রমে ও ত্যাগে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। আত্মত্যাগের মহিমায় মানবরূপী দেবতা হলেও সমাজ জীবনে এরা বঞ্চিত ও অবজ্ঞাত। কিন্তু পালাবদলের দিন এসেছে। একদিন শ্রমজীবী মানুষেরাই বিশ্বে নবজাগরণের সূচনা করবে।
                  (৭)
এই-সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে
দিতে হবে ভাষা; এই-সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে
ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা; ডাকিয়া বলিতে হবেÑ
“মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে;
যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা-চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে।
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে
পথকুক্কুরের মত সংকোচে বাতাসে যাবে মিশে।
দেবতা বিমুখ তারে, কেহ নাহি সহায় তাহার;
মুখে করে আস্ফালন, জানে সে হীনতা আপনার
মনে মনে॥
সারমর্ম: দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে জর্জরিত, অত্যাচারে পর্যুদস্ত, হতাশাগ্রস্ত দুঃখী মানুষের দুঃখ ও অগৌরব দূর করার জন্যে চাই নতুন শক্তি ও প্রেরণা। তাহলেই অন্যায় ও অত্যাচারের অপশক্তির বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যবদ্ধ, সংগঠিত ও অনুপ্রাণিত করা সম্ভব হবে। ঐক্যবদ্ধ জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ ও তীব্র ঘৃণার সামনে অত্যাচারীর পরাজয় অনিবার্য।
                      (৮)
এ দুর্ভাগ্য দেশ হতে হে মঙ্গলময়,
দূর করে দাও তুমি সর্ব তুচ্ছ ভয়Ñ
লোকভয়, রাজভয়, মৃত্যুভয় আরÑ
দীনপ্রাণ দুর্বলের এ পাষাণভার,
এই চিরপেষণ যন্ত্রণা, ধূলিতলে
এই নিত্য অবনতি, দ-ে পলে পলে
এই আত্ম-অবমান, অন্তরে বাহিরে
এই দাসত্বের রজ্জু, ত্রস্ত নতশিরে
সহস্রের পদপ্রান্তÍ তলে বারংবার
মনুষ্য-মর্যাদা-গর্ব চির পরিহারÑ
এ বৃহৎ লজ্জারাশি চরণ আঘাতে
চূর্ণ করি দূর করো। মঙ্গলপ্রভাতে
মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে
উদার আলোক-মাঝে, উন্মুক্ত বাতাসে।
সারমর্ম: জনজীবনে দুঃখ ও গ্লানি, সমাজমানসে ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতা, শাসনব্যবস্থায় নির্যাতন-নিষ্পেষণ দেশের অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায়। বাইরে পরাধীনতার বন্ধন আর মনোজগতে আত্ম-অবমাননার বেড়জাল ব্যাহত করে মানুষ্যত্বের বিকাশকে। এসব বাধা ছিন্ন করেই দেশের মানুষকে নিঃশ্বাস ফেলতে হবে মুক্ত আকাশে মানুষ্যত্বের মহিমায় বাড়াতে হবে দেশের গৌরব-মর্যাদা।
                    (৯)
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ; মৃত আর ধ্বংস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাবো-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সারমর্ম: অনেক সমস্যা ও সংকটে ভরা বর্তমান পৃথিবী। অনেক মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্যে দায়ী ও ক্লেদাক্ত পৃথিবী নতুন প্রজন্মের বাসযোগ্য নয়। তাই সুন্দর এক নতুন বিশ্ব রচনাই দায়বদ্ধ কবির অঙ্গীকার।
                        (১০)
কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেই সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়েঘরে।
সারমর্ম: স্বর্গ ও নরক পরলোকের ব্যাপার হলেও ইহলোকেও তাদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। বিবেকবোধ বিসর্জন দিয়ে অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হলে মানবজীবনে নেমে আসে নরক-যন্ত্রণা। আর মানুষে মানুষে প্রেম প্রীতিময় সুসম্পর্ক গড়ে উঠলে পৃথিবী হয়ে ওঠে স্বর্গরাজ্য।
                   (১১)
হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথ্য
তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম
সত্যবাক্য বলি ওঠে খরখরগ সম
তোমার ইঙ্গিতে। যেন রাখি তব মান
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে।
সারমর্ম: ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ, কিন্তু তা যেন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়, যেন অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়। কারণ, অন্যায় করা আর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া দুই-ই সমান অপরাধের শামিল।
                   (১২)
খেয়া নৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে,
কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।
দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা,
সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা।
পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ,
নতুন নতুন কত গড়ে ইতিহাসÑ
রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে
সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে!
সভ্যতার নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুধা
উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা!
ধুধু হেথা দুই তীরে, কে বা জানে নাম,
দোঁহাপানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।
এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতেÑ
কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতেÑ
সরামর্ম: সভ্যতার ঊষাকাল থেকে পৃথিবীতে চলে আসছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। তাতে ঘটেছে কত না সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, কত না ভাঙা-গড়া। কিন্তু বাংলার গ্রামজীবন তার ব্যতিক্রম। সেখানকার প্রীতিবন্ধনময় সহজ-সরল জীবনযাত্রা আজও অব্যাহত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন