পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক হাজার বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং ২১ লাখ ব্যারেল তেল মজুদের সম্ভাবনা
মুরশাদ সুবহানী, পাবনা থেকে : দেশের শুধু উত্তরাঞ্চলের নয়, সারা দেশের জন্যে দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছর পর দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে পাবনা জেলার মোবারকপুরের গ্যাস ফিল্ডের। মওজুদ গ্যাস উত্তেলনের পর তা জাতীয় গ্যাস লাইনে সংযোগ পাবে। দেশের উত্তরের ১৬ জেলাসহ সব জেলার মানুষের বহুদিনের প্রতীক্ষার বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। প্রায় ৩৭ বছরের কিছু আগে পাবনার সুজানগর উপজেলায় নদীর কিনার ঘেঁষে তেল ভাসতে দেখে এলাকাবাসী। সে সময় ধারণা করা হয়েছিল ফেরি, লঞ্চ থেকে নদীর পানিতে ভাসা তেল বর্ষায় নদীর কিনারে চলে এসেছে।
কৌতূহলী মানুষ আগুন দিলে দেখা যায়, নীলাভ হয়ে জ্বলছে। এ থেকে ধারণার সৃষ্টি হয় এটা তেল নয় গ্যাসের প্রজ্বলন। বিভিন্ন প্রিন্টিং মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে বাপেক্স নজর দেয়। বাপেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জার্মান কোম্পানী জিজিএজি উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় গ্যাস ও তেলকূপের অনুসন্ধানে সার্ভে কাজ পরিচালনা করে। এ সময় পাবনার সুজানগর উপজেলায় এই পরীক্ষা চালানো হয়। পরে এখান থেকে সরে গিয়ে সাঁথিয়া উপজেলাধীন মোবারকপুর গ্রামে তেল ও গ্যাসের সম্ভাব্য মজুতের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। মোবারকপুর গ্রামের কূপের প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার গভীরে প্রায় ২০০ থেকে ১ হাজার বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং প্রায় ২.১ মিলিয়ন (২১ লাখ) ব্যারেল তেল মজুদ আছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। এরপর এই গ্যাস উত্তোলনের জন্য ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে তৎকালীন বিএনপি সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ০৬ জুন, ২০০৬ সালে একনেক বৈঠকে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার “মোবারকপুর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প” নামে প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। প্রকল্পে শর্ত দেওয়া হয় যে, কূপ খননের পূর্বে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে ভূ-তাত্ত্বিক দ্বি-মাত্রিক (টু-ডি) সার্ভের ফলাফল ভালো হলেই অনুসন্ধান করার অনুমতি পাওয়া যাবে। পরে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সেখানে ১৬০.৩৮ কি.মি. লাইন টেনে সার্ভে সম্পন্ন করা হয় এবং ডিসেম্বর মাসে এর ফলাফল প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। টু-ডি’র প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে বাপেক্স সেখানে গ্যাসের অস্তিত্বের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে। কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রকল্পের কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি।
এরপর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট সরকার গঠনের পর সরকার মোবারকপুর কূপ খনন প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাগিদ দেন। বিগত ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৮৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা অর্থায়নে এই প্রকল্পটি পুনরায় অনুমোদন দেয়। পরে বাপেক্স টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে মোবারকপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাঁথিয়া উপজেলার পাগলাদহ, চন্ডিপুর ও বিষ্ণুবাড়ীয়া মৌজায় প্রায় ৯ একর জমি ২০১০ সালে ২ বছরের জন্য লীজ নিয়ে নতুন কাঠামো গড়ে সেখানে প্রকল্পটি স্থানান্তর করে। অবকাঠামো নির্মাণের পর প্রায় দু’বছর ‘রিগ’ মেশিন যথা সময় না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এ কূপ খনন কাজ শুরু করা যায়নি। সময়সীমা আবার বাড়িয়ে ‘রিগ’ মেশিন পাওয়া সাপেক্ষে ২০১৪ সালে কূপ খননের সিদ্ধান্ত হয়। অবশেষে বাপেক্স নতুন ভাবে রিগ মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ব্যাপারে মোবারকপুর তেল-গ্যাস কূপ খনন প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক মো. আতাউর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, চীনের হুয়াং হু কোম্পানি থেকে ১৯০ কোটি টাকা দিয়ে রিগ মেশিন কেনা হয়েছে যা ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এই সব মেশিনারিজ দিয়ে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাগলাদহ, চন্ডিপুর ও বিষ্ণুবাড়ীয়াস্থ মোবারকপুর তেল-গ্যাস কূপ খনন প্রকল্প এলাকায় তেল ও গ্যাস সন্ধানে কূপ খননের কাজ শুরু হয়। ১৫ হাজার ফুট পর্যন্ত খনন করার পর নিশ্চিত হওয়া যায় এখানে গ্যাসের মওজুদ রয়েছে।
এখানে কর্তব্যরত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা যায়, মোবারকপুরে কূপের মুখে আগুন দিয়ে গ্যাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে। আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কূপে ভূ-তাত্ত্বিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপরই বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। পাবনার মোবারকপুরে গ্যাস ক্ষেত্রে গ্যাসের অস্তিত্ব বিদ্যমান এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, তবে নানা জটিল ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোর কারণে কূপ খননের আরও কাজ বিঘিœত হচ্ছে। যে কারণে সময় বেশী লাগছে। তবে আশা করছেন, জটিলতা দূর করে যথা শিঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করার জন্যে। দীর্ঘ ৩৭ বছর অপেক্ষার পর আবিষ্কৃত পাবনার মোবারকপুরে হবে দেশের ২৭ তম গ্যাস ফিল্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।