Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কমছেই রেমিট্যান্স প্রবাহ

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমছেই। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স কম এসেছে ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে- অবৈধভাবে টাকা পাঠানোর প্রবণতা এবং ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় মূলত কমেছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। এছাড়া বিদেশে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি, মজুরি কমে যাওয়াকে রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্নগতির কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশগুলোর মুদ্রার মূল্যমান কমে যাওয়া অন্যতম কারণ। যদিও সম্প্রতি কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করলেও কোনো অগ্রগতি হয় নি। এমনকি  মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। হুন্ডিওয়ালারা যাতে  কোনোভাবেই বিকাশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না পাঠায় সে ব্যাপারে কড়া বার্তাও দেয়া হয়েছে। এমনকি দূতাবাসগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
সূত্র মতে, গত দু’বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আহরণে নিম্নধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম মাস তথা জানুয়ারিতে ১০০ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা আগের বছরের একই মাসে এসেছিল ১১৫ কোটি ডলার। সে হিসেবে জানুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় আহরণ কমেছে ১৪ কোটি ১২ লাখ ডলার বা ১২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি-১৭) ৬২২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৭৩৩ কোটি ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের সাত মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১১১ কোটি ডলার বা ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম রেমিট্যান্স এসেছিল। সেই কম পরিমাণের রেমিট্যান্সের চেয়েও চলতি অর্থবছরে আরও কম রেমিট্যান্স এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন,  রেমিট্যান্স কমার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দীর্ঘ অস্থিরতা ও তেলের দর পড়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। এতে তারা দেশে কম পরিমাণের অর্থ পাঠাচ্ছেন-সেক্ষেত্রে হয়তো তারা কিছুটা সময়ও নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য কম থাকায় প্রবাসীরা আগের মতো অর্থ পাঠাচ্ছেন না। তাছাড়া ব্যাংকের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেশি থাকায় ভিন্ন উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ঢুকছে। তৃতীয়ত, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারে হুন্ডিওয়ালারা অবৈধ উপায়ে টাকা দ্রুত প্রবাসীর আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। যেহেতু এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ কাগজবিহীন ও যে কোনো সময় করা যায়, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সতর্ক মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও গত অর্থবছরে এসে আড়াই শতাংশ কমে যায়। যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইতে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। এরপর আগস্ট মাসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ, অক্টোবরে ১০১ কোটি, নভেম্বরে এসে মাত্র ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে।
রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন।
বিদেশে বেকার শ্রমিকের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং মজুরি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভুয়া এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা পাঠানোই নিম্নগতির কারণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। সউদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেছেন, তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আয় কমে গেছে। একই সঙ্গে অনেক কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে।
জনশক্তি রফতানির সঙ্গে যুক্তরাও বলছেন মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আয় কমেছে। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা রেমিট্যান্স কমার প্রধান কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বলছে, বিভিন্ন দেশ বিশেষত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মুদ্রার মান কমে গেছে। এসব দেশের মুদ্রার বিনিময়ে আগের তুলনায় কম টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই প্রবাসী কর্মীরা লাভের আশায় ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো সময়সাপেক্ষ। অনেক সময় প্রবাসীরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাঠালে ওই দিনের কাজ বন্ধ হওয়াসহ ব্যাংক থেকে আজ নয়, কাল আসেন। এসব ঝাঁমেলা থেকে বাঁচতেই কম সময়ে সহজে টাকা পাওয়ার দিকে ছুটেন প্রবাসীরা। এক্ষেত্রে তারা না জেনেই বেছে নেন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টদের। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসী কর্মীরা বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভুয়া এজেন্ট খুলে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও প্রবাসী কর্মীরাও চান না অবৈধভাবে টাকা পাঠাতে। এক্ষেত্রে তারা এ সমস্যার সুরহায় ব্যাংকিং সেবাকে আরও সহজ এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ভুয়া এজেন্টদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ