পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গুলিস্তান মতিঝিলের ফুটপাথ থাকবে হকারমুক্ত : চাঁদাবাজ লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত : মতিঝিল ও দিলকুশায় দু’টি পার্কিং জোন অকেজো : যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে বিকল্প ব্যবস্থা
নূরুল ইসলাম : রাজধানীর গুলিস্তানসহ বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখার জন্য আরো কঠোর হচ্ছে সরকার। গত বুধবার নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। হকারমুক্ত গুলিস্তান বদলে যাওয়ায় সভায় উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, এ অবস্থা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে হবে। তারই অংশ হিসেবে ফুটপাথের চিহ্নিত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। পল্টন, মতিঝিল ও শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এতে আসামি করা হবে লাইনম্যান নামধারী চিহ্নিত কমপক্ষে ৬০ জন চাঁদাবাজকে। এ ছাড়া যারা ফুটপাথে হকার বসানোর দাবিতে আন্দোলন করছে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনে মামলা করা হবে বলে সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে, যানজট নিরসনের জন্য ঢাকায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে রাস্তার দুই পাশে ব্যাপকভাবে গাড়ি পার্কিং করায় রাজপথে সৃষ্টি হচ্ছে চরম যানজট। অপচয় হচ্ছে কর্মঘণ্টা এবং তীব্র হচ্ছে মানুষের দুর্ভোগ। মূলত রাজধানীতে পরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানজট নিরসনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে ইতোমধ্যে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ম্যাকানাইজড কারলিফট ও অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের সুপারিশ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম স্থান গুলিস্তান, মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন এলাকা। এসব এলাকার নিত্য সঙ্গী যানজট নামের দুর্ভোগ। আর এই যানজটের প্রধান কারণ ফুটপাথসহ রাস্তার বেশির ভাগ অংশ হকারদের দখলে থাকা। এ কারণেই এসব এলাকা যানজটমুক্ত করার জন্য দিনের বেলায় ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় হকার উচ্ছেদ অভিযান। ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের সদিচ্ছায় ইতোমধ্যে গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশ এলাকা হকারমুক্ত হয়েছে। দিনের বেলায় এসব এলাকার কোনো ফুটপাথে আর হকারদের বসতে দেয়া হচ্ছে না। তবে সন্ধ্যার পর হকাররা বসছে। এতে করে গত কয়েক দিনে গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশ এলাকার চিত্রই পাল্টে গেছে। হকারমুক্ত ফুটপাথে নেই শোরগোল, হৈ চৈ, কোলাহল। গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশ এলাকায় আগের মতো আর যানজটের ভোগান্তি নেই। যাত্রী, পথচারী, ব্যবসায়ী, ক্রেতা, বিক্রেতা সবাই এখন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে। তবে ডিএসসিসির হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্তে মাথায় বাজ পড়েছে লাইনম্যান নামধারী চিহ্নিত চাঁদাবাজদের। তারা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সভা, মিছিল, মানবন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। সিটি কর্পোরশন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে যারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও সুবিধাভোগী হকার্স নেতাদের তালিকা করা হয়েছে। গুলিস্তানের পরিবেশ সমুন্নত রাখতে এরপর প্রয়োজনে কঠোর অবস্থানে যাবে ডিএসসিসি। সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, গত বুধবার দুপুরে নগর ভবনে অনুষ্ঠিত হকার্স পুনর্বাসন ও হলিডে মার্কেট চালু করা নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তালিকাভুক্ত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে পল্টন, মতিঝিল ও শাহবাগ থানায় মামলা করা হবে। তালিকায় ৬০ থেকে ৬৫ জনের নাম রয়েছে বলে ডিএসসিসি সূত্র জানায়। এ ছাড়া যারা হকারদের দুরবস্থার দোহাই দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই সভায় হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে নগরীতে আরো ১১টি হলিডে মার্কেট চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে হকারদের সুবিধার্থে ৫টি হলিডে মার্কেট চালু করা হয়েছে। মেয়র সাঈদ খোকেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সরকার অনুমোদিত ৫টি হকার্স সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কয়েকটি মার্কেট কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং ২০ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। অনুমোদিত ৫টি হকার্স সংগঠন হলোÑ বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন (রেজি: বি-২১৫৯), বাংলাদেশ হকার্স লীগ (রেজি: ৩৮৮১), বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স লীগ (রেজি: বি-২১৩৫), বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স লীগ (রেজি: ৩৫৫৫) এবং ঢাকা জেলা হকার্স লীগ (রেজি: ৩৮০৯)। সভায় তালিকাভুক্ত হকারদের পরিচয়পত্র দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সভায় গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশ এলাকার চিত্র পাল্টে যাওয়ায় অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে যাতে এ অবস্থা অব্যাহত থাকে সে জন্য প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেছেন, কোনোভাবেই এ অবস্থার অবনতি হতে দেয়া যাবে না।
এদিকে, ঢাকার যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। এটাও বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকার রাস্তাগুলোতে একাধিক সারিতে গাড়ি পার্কিং করা থাকে। এমনকি কোথাও কোথাও রাস্তার দু’ধারে দুটি করে চার সারিতে গাড়ি পার্কিংয়ের চিত্রও চোখে পড়ে। শুধু প্রাইভেট কার ছাড়াও রাস্তার ওপরই পার্কিং করা থাকে বাস ও মিনিবাস। মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছেই এ দৃশ্য নিত্যদিনের। এ ছাড়া মতিঝিল ওভারব্রিজের নিচ থেকে আরামবাগ পর্যন্ত রাস্তা দখল করে বাস পার্কিং করা হয়। একই অবস্থা দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, সদরঘাট, নিউমার্কেট, মহাখালী, উত্তরাসহ দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকার সড়কেরই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় দিনের ব্যস্ত সময়েও নগরীর বিভিন্ন অফিস ও বিপণি বিতানের সামনের রাস্তার যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। এর দায়ও সিটি কর্পোরেশন এড়াতে পারে না। পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে অবৈধ পার্কিং ঠেকানো সহজ হতো। ডিএসসিসি ও ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানায়, এই পরিস্থিতিতে ঢাকার যানজট নিরসনে আধুনিক ম্যাকানাইজড কারলিফট পার্কিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে একটি বহুতল ভবনে লিফটের মাধ্যমে গাড়ি পার্ক করা হবে। সেজন্য ডিএসসিসি মতিঝিল পূবালী ফিলিং স্টেশনের পাশে বটতলা এলাকায় ও ২৪তলা ভবনের বিপরীতে উদ্যানের মধ্যে সুবিধাজনক জায়গায় ওই কারলিফট পার্কিং নির্মাণের সুপারিশ করেছে। তাছাড়া অনস্ট্রিট কার পার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো সঙ্কীর্ণ। ফলে অনস্ট্রিট পার্কিং চালু থাকলে রাস্তার ওপর স্থায়ী পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠার আশঙ্কা আছে। সূত্র জানায়, তারপরও মতিঝিলের অ্যালিকো বিল্ডিংয়ের পাশের রাস্তা, স্বর্ণ মার্কেট লিংক রোড, পলওয়েল মার্কেট ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তার দু’পাশে অস্থায়ী অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, মতিঝিল ঢাকার অতি পুরাতন এলাকা। আগে এখানে যেসব ভবন নির্মাণ করা হয় সেগুলোতে পার্কিং বাধ্যতামূলক ছিল না। সে কারণে মতিঝিল এলাকায় অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে বর্তমানে মাত্র ৬টি পার্কিংয়ের স্থান রয়েছে। এর মধ্যে মতিঝিল ও দিলকুশায় রয়েছে দুটি। বাকি ৪টি হলো শিশুপার্ক, মোহাম্মদপুর টাউন হল, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও মোহাম্মদপুর নতুন বাজার সংলগ্ন কার পার্ক। এসব পার্কিংয়ের স্থানগুলোয় সর্বোচ্চ দেড় হাজার পর্যন্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ওসব স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ে আগ্রহী হচ্ছে না চালকরা। জানা গেছে, ইতঃপূর্বে গাড়ি পার্কিং স্পেস নির্মাণের জন্য ডিএসসিসির পক্ষ থেকে মতিঝিল ও দিলকুশায় দুটি জায়গা ডেভেলপারকে দেয়া হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হলেও তা এখনো অব্যবহৃত অবস্থায়ই পড়ে আছে। মতিঝিলে দুই বিঘা জমির ওপর নির্মিত সিটি সেন্টারে পার্কিংয়ের জন্য বিশেষভাবে স্থান রাখা হয়। ৩৭তলা ওই ভবনের দ্বিতীয় থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ শেষে পার্কিংয়ের স্থানটি প্রায় চার বছর আগে ডিএসসিসিকে বুঝিয়ে দেয় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই গাড়ি পার্কিং স্পেসের জন্য দফায় দফায় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও নাকি কোনো ইজারাদার পাওয়া যায়নি। এতে করে মূল্যবান কার পার্কিং ফ্লোরগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাছাড়া দিলকুশায় অপর একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে কার পার্কিংয়ের ভবন নির্মাণের আড়াই বিঘা জমি দেয়া হয়। কিন্তু এখনো ওই নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে দিলকুশার ভবনটির ৯তলা পর্যন্ত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু সেটিও ব্যবহারের উপযোগী নয়। এতে করে ওই এলাকায় গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে রাস্তার ওপরেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।