পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০১৬ প্রদান
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশের গ্রন্থমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। একই সময় তিনি চার দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭’ উদ্বোধন করেন। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করে সবাইকে বেশি বেশি বই পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তরুণ-তরুণীদের ‘বিপথগামী’ হওয়া ঠেকাতে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা যে বিপথে চলে যায়, তাদের বিপথ থেকে উদ্ধার করা যায় এই সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে। লেখাপড়া, সংস্কৃতি চর্চা যত বেশি হবে তত বেশি তারা ভালো পথে চলে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সবাইকে বেশি বেশি বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বই পড়ার ভেতর যে আনন্দ এবং বই পড়লে অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। আবার অনেক জ্ঞান অর্জন করা যায়। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বিদেশি সাহিত্যিক ও গবেষক বক্তব্য দেন। এদের মধ্যে চীনা ভাষায় প্রকাশিত ৩৩ খ-ের রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্পাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার কবি মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর সাহিত্যিক লুস মারিয়া লোপেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক-প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক চিন্ময় গুহ ছিলেন।
শেখ হাসিনা জানান, তার বাড়িতে আগে থেকেই বই পড়ার চর্চা ছিল এবং এখনও তা আছে। শিশুকাল থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চর্চাটা ছোটবেলা থেকে হলেই অভ্যাসে পরিণত হয়। আমি সেজন্য আহ্বান জানাব আমাদের ছেলেমেয়েদের, বই পড়লে বিশ্বকে জানা যাবে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের এই আহ্বানই জানাব যে, সকলে বই পড়বেন। এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল বইয়ের কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তবে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, হাতে বই নিয়ে পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়ার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। কাজেই বই আরও ছাপা হোক, আরও সুন্দর হোক- সেটাই আমি চাই।
একুশে বইমেলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বইপ্রেমী সবাই এই বইমেলা শুরুর অপেক্ষায় থাকেন। কাজেই এই বইমেলার মধ্য দিয়ে একদিকে যারা সাহিত্যের চর্চা করেন তাদের বই প্রকাশ, আবার প্রকাশকরা বই প্রকাশ করেন। ছোট শিশু থেকে সকলেই বই কেনেন। আবার এটা বিরাট মিলনমেলায় পরিণত হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে গেছে। কাজেই আজকের এই দিবসটা শুধু আমাদের দিবস না। আজকে সমগ্র পৃথিবীতে যারাই মাতৃভাষা ভালোবাসে তাদেরই জন্য এই দিবসটি আজকে।
পাকিস্তানি শাসকদের মাতৃভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা এবং বাঙালি ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। আমাদের যা কিছু অর্জন করতে হয়েছে রক্তের মধ্য দিয়েই অর্জন করতে হয়েছে। বিনা রক্ততে কিছুই আমরা পাইনি, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আজকে আমরা স্বাধীন জাতি, আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার থেকে শুরু করে বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে যে মর্যাদার আসন, সে আসনও আমাদের বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে অর্জন করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, আমরা সমগ্র বিশ্বে একবার মর্যাদা পেয়েছিলাম ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্যদিয়ে। যা ভূলুন্ঠিত হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে।
শেখ হাসিনা বলেন, তখন আমরা খুনী জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়েছিলাম। আজকে সেই খুনীদের আমরা বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি ও করছি এবং আমাদের জাতীয় পতাকাকে সমুন্নত করে বিশ্ব সভায় আবারো একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছি। আর্থ-সামাজিকভাবে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার দিক থেকেও আমরা পিছিয়ে নেই, এগিয়ে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিগণ, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতার অবদান বলে শেষ করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজকে আমাদের এই ২১শের এই গ্রন্থমেলার ব্যাপ্তি আর আমাদের ভূখন্ডে সীমাবদ্ধ নেই, সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবেও আজ স্বীকৃত। এখানে সাহিত্য সম্মেলনও হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বইমেলায় বিদেশীদের অংশগ্রহণ এবং তাদের বাংলায় বক্তৃতা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কি চমৎকার বাংলায় তারা আমাদের বক্তৃতা শোনালেন, বিভিন্ন কবিতাও তারা অনুবাদ করেছেন। কাজেই এই অনুবাদের মধ্যদিয়েই আমরা একে অপরকে জানতে পারছি। ভাষার আদান-প্রদান, সংস্কৃতির আদান-প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, সাহিত্যের মধ্যদিয়েই একটা সমাজের অবস্থা আমাদের সামনে উঠে আসে।
নিজের বইমেলায় আগমনের স্মৃতি রোমন্থন করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার খালি একটাই দুঃখ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার ফলে এখন আর আগের মতন এই বইমেলায় আসতে পারি না। এটাই সবচেয়ে দুঃখের, হাত-পা বাঁধা কি করবো। সবাই যখন আসেন দেখি, তখন এখানেই মনটা পড়ে থাকে।
তিনি বলেন, আর আমি বন্দিখানায় পড়ে থাকি। বন্দিখানা এই অর্থেই বলবো, যখন কারাগারে ছিলাম সেটা ছিলো ছোট কারাগার আর এখনতো সরকার প্রধান হিসেবে অনেক দায়িত্বে থাকতে হয়, ব্যস্তও থাকতে হয়। আবার অনেক কিছু মেনেও চলতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় হয়ে ওঠে না।
রামেন্দু মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন সংস্কৃতি সচিব বেগম আকতারী মমতাজ, প্রকাশকদের পক্ষে বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির ফেলো মফিদুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার নিজের লেখা আগামী প্রকাশনীর ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেনের অমর সৃষ্টি ‘বিষাদ সিন্ধু’র অনুবাদ ‘ওসেন অব সরো’ এবং ‘হান্ড্রেড পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’ বই দুটি তুলে দেওয়া হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। কবিতায় আবু হাসান শাহরিয়ার, কথাসাহিত্যে শাহাদুজ্জামান, প্রবন্ধে মোর্শেদ শফিউল হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যে ড. এম এ হাসান, আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা বিষয়ক রচনার জন্য নূর জাহান বোস, শিশু-সাহিত্যে রাশেদ রউফ এবং অনুবাদে নিয়াজ জামানকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। মেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বইমেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এবার একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দুটি। এ ছাড়া ১০০ লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় এবারই প্রথম গুগল ম্যাপের সাহায্যে মেলার যেকোনো স্টল খুঁজে বের করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু কর্নারকে এবারও বেশ আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। শিশুদের এ চত্বরটিতে প্রবেশের জন্য আলাদা ফটক রাখা হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার থাকছে ‘শিশু প্রহর’।
মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি থেকে জানানো হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে এবারই প্রথমবারের মতো স্টলের ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশু কর্নারে মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আয়োজকরা জানান, গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।