Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংসদে প্রধানমন্ত্রী

ইসির চাহিদা অনুসারে সহায়তা প্রদান করা নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বলেছেন, দেশের সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সরকার সর্বাত্মক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুসারে সরকার তথা নির্বাহী বিভাগ সকল ধরনের সহায়তা করছে। আগামীতে সব ধরনের সহযোগিতাও  অব্যাহত থাকবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে জাসদের নাজমুল হক প্রধানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এ প্রসঙ্গে  সংসদ নেতা আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগসহ সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে দশম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ  প্রেক্ষিতে নির্বচাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা এবং সরকারি ব্যক্তিবর্গের নির্বাচনী প্রচারণায় বিষয়ে সুনির্দিষ্ঠ করে একটি আদর্শ আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করে। প্রথম বারের মতো দলীয়ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নারায়াণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হয়েছে। নির্বাচন  দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে প্রশংশিত নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। নির্বাচন  কমিশনের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনের কাজকে আরও গতিশীল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের  দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য  নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নিজেস্ব ভবন এবং মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কার্যালয়ের নিজেস্ব ভবন নির্মাণ করেছে। সকল নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চাহিদানুযায়ী সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করেছে। ভোটারগণ যাতে নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সেজন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্ঠির লক্ষ্যে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনোত্তর বিজয়ী-বিজিত প্রার্থী ও তার সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া-সহিংসতায় উদ্ভুদ্ধ অনাকাক্সিক্ষত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, বিজয় মিছিল বিষয়ে আচরণবিধিমালা প্রতিপালনসহ তাৎক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়।
সরকার দলীয় কামাল আহমেদ মজুমদার এমপির তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মীদের জন্য সাময়িক ওয়ার্ক পাস ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে। ফলে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আনুমানিক তিন লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী সেদেশেই কাজের সুযোগ পাবে। তা না হলে কর্মীদের দেশে ফিরে আসতে হতো। প্রধানমন্ত্রী বলেন,  বিশ্বের ১৬২টি দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী বর্তমানে কর্মরত আছে। বিদেশে যেসব কর্মী আনডকুমেন্টেড অবস্থায় আছে, তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে  বৈধকরণ, আইনি সহায়তা প্রদান এবং দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্ঠার ফলে সৌদি আরবে প্রায় আট লাখ, মালয়েশিয়ায়  দুই লাখ ৬৭ হাজার এবং ইরাকে ১০ হাজার আনডকুমেন্টেড অভিবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। আইন বহির্ভূত কাজের সাথে জড়িত এজেন্সির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। যে কোনো আইন বহির্ভূত কাজের সাথে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সি ও মেডিক্যাল সেন্টারগুলোকে বৈদেশীক কর্মসংস্থান ও অভীবাসী আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩২  ও ৩৫ এর আওতায় তাৎক্ষণিক জরিমানা ও কারদ-ে দ-িত করেছে।
মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যায় দায়েরকৃত মামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামত ব্যালেস্টিক ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের গ্রেফতার করছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সব ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার ফলে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকার ফলে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- এবং জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেশে সার্বিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ়তর হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির ভীত মজবুত : মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মাসেতুর অপরপ্রান্তে মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ফলে ঐ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাচ্ছে। পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মৃতপ্রায় মংলা বন্দর লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইলেকট্রিক ট্রেন ও পাতাল ট্রেনের সম্ভাবতা যাচাইয়ের কাজও চলছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এমপিদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা ও মজবুত করার লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন : মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মুল্যস্ফীতি হ্রাসে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৬ সালের নমিনাল জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬তম এবং ক্রয়ক্ষমতার সমতার জিডিপির ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে (২০১৬) মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এ সরকারের এক অন্যতম সাফল্য। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশে খাদ্য মজুদ ক্ষমতা বেড়ে ২০১৭-তে ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবন্ধ।
তিনি বলেন, দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকার অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনেতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহনসহ ভৌত অবকাঠামো খাত উন্নয়ন ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ক্রমশ ত্বরান্বিত করছে। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে দেশে ও বিদেশে মিলে গত সাত বছরে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ নতুন কর্মসংস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এত কর্মসংস্থান আর অতীতে কখনো হয়নি।
সরকারি দলের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য গঠিত স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ (এসটিজি)’র মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে সফলতার পরিচয় দিয়েছে। সংসদ নেতা জানান, ইতোপূর্বে সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কর্মকা- ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীসহ সকল অপরাধীদের কর্মকা- রোধে তাদের অর্থের যোগানদাতা ও অর্থের উৎস সন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকার ফলে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- এবং জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ়তর হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ