পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কর্মকর্তাদের ঝটিকা সফরের পর চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস ও পিডিবি’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এদের অনেকে নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করতে নানা চেষ্টা-তদবির শুরু করেছেন। অনেকে আবার ঘুষ, উৎকোচ ও স্পিডমানি গ্রহণের কৌশলও পাল্টে ফেলেছেন। চাপে রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
ইতোমধ্যে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে এক রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুদকের ঝটিকা অভিযান, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি, এরপর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠছেন ভুক্তভোগীরা। দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির নেতারা বলছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে মানুষের হয়রানি কমবে। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।
গত সোমবার দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম ও দুই মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ও আতিকুর রহমান কাস্টম হাউসে ঝটিকা সফরে আসেন। কাস্টমসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন তারা।
পরে সাংবাদিকদের কাছে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের প্রতিটি পর্যায়ে অনিয়ম রয়েছে। তিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান। কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন দুদক কর্মকর্তারা।
এর একদিন পর মঙ্গলবার তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ দর্শাতে বলা হয়, অপর একজন রাজস্ব কর্মকর্তাকে। সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- কাস্টমসের দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মনির আহমদ ও উত্তম কুমার এবং সিপাহী মোহাম্মদ নুরুজ্জামাল।
এছাড়া রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হাকিমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। কাস্টমস কমিশনার এ এফ এম আব্দুল্লাহ খান বলেন, অবৈধভাবে টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি বলেন, তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আটকে রেখে মোটা অংকের উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে আমদানি শাখায় কতিপয় কর্মকর্তা এতটাই বেপরোয়া যে নগদ উৎকোচ ছাড়া কোন ফাইলই তারা ছাড়ে না। বিভিন্ন সময়ে কাস্টম হাউসে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। কমেনি ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দাপট। নানা কৌশলে তারা উৎকোচ আদায় করা অব্যাহত রাখে।
অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতিবাজ কতিপয় কর্মকর্তার কারণে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অসাধু ব্যবসায়ী ও তদবিরবাজদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সম্প্রতি একটি গার্মেন্টস মালিকের অফিস থেকে কাস্টম হাউসের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু ফাইল উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে কাস্টম হাউসে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তবে এর মধ্যেও তদবিরবাজদের দাপট দেখা যায়। এ প্রেক্ষাপটে গত সোমবার সেখানে ঝটিকা সফরে আসে দুদকের টিম। ওইদিন দুদকের ১২ সদস্যের দল চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রবেশ করেন। তারা কাস্টমসের বিভিন্ন শাখা ঘুরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এরপর চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে যান দুদকের কর্মকর্তারা। সেখানে তারা বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন করেন। কথা বলেন কর্মকর্তাদের সাথে। পরে বন্দরের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে বসেন তারা। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবালসহ বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বন্দরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলেছি।
জানা গেছে, দুদক কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে জানান। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাস্টম ও বন্দর কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরবর্তীতে এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক তাদের আইন অনুযায়ী তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান দুদকের এক কর্মকর্তা।
দুদক কর্মকর্তাদের ঝটিকা সফরের পর বন্দরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের অনেকেই চাকরিতে বহাল হয়েছেন। দুদকের ঝটিকা সফরে সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত ওইসব কর্মকর্তারা।
গত ১৮ জানুয়ারি দুদক কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবি’র অফিসে ঝটিকা সফরে আসেন। অফিস পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় শেষে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সেবার প্রকৃত চিত্র জানতে আগামী মার্চে গণশুনানি করবেন বলে জানান দুদক কমিশনার।
তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আপনাদের যে সীমাবদ্ধতা, ব্যর্থতা সেটা স্বীকার করবেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় মানুষ কতটা সেবা পাচ্ছে সেটা আমরা দেখব। গণশুনানি শুরুর পর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে দুদক ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান নাসিরউদ্দিন। জনগণের সেবার সন্তুষ্টির উপর সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুধু কথার ফুলঝুরি নয়, জনগণ আপনাদের যে সার্টিফিকেট দেবে সেটাই আসল।
সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকা- পর্যবেক্ষণে দুদক নেতিবাচক পথে হাঁটবে না মন্তব্য করে নাসিরউদ্দিন বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলোও আমরা বিবেচনা করব, কারণ আমরা নেগেটিভ ওয়েতে আগাতে চাই না। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের চাহিদার প্রতি দায়িত্বশীল কি না, সেটাও নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আসবে বলে জানান তিনি।
এসময় দুদক কমিশনার বলেন, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল, নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ বিল না পৌঁছানো, সীমা বহির্ভূত সিস্টেম লস, শিল্প-কারখানার লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল ঘুষ দিয়ে কমানোসহ অসংখ্য অভিযোগ দুদকের হাতে আছে। সভায় পিডিবি’র মিটার রিডারদের বিরুদ্ধে নানা হয়রানির অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা। দুর্বল গ্রিড লাইনের কারণে লো ভোল্টেজের বিষয়টিও উত্থাপন করেন কয়েকজন গ্রাহক।
পিডিবি’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও হয়রানি এবং উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মিটার না দেখে অতিরিক্ত বিল করে দেয়ার অভিযোগ হাজার হাজার গ্রাহকের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা এসব হয়রানির কোন প্রতিকার পান না। দুদক কর্মকর্তাদের সফরের পর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা শঙ্কিত।
এদিকে দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর, পিডিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তাদের ঝটিকা অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও জনগণের হয়রানি লাঘবে অ্যাকশানে যাবে দুদক। ২০১৬ সালে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। আর এ বছর থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান দুদক কর্মকর্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।