পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
জয়পুরহাট থেকে মুহাম্মদ আবু মুসা : চলতি উৎপাদন মৌসুমে খাদ্যে উদ্বৃত্ত জয়পুরহাট জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোপূর্বে এত বেশি ফলন আর কখনো হয়নি এ জেলায়। আবহাওয়ার বৈরী আচরণ ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে বলে জানা গেছে। আলুর ফলন ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। বাজারে আলুর দাম না থাকায় কৃষক শঙ্কিত। চড়াদামে বীজ, সার কিনে আলু লাগিয়ে কৃষক পুঁজি তুলতে পারছেন না। ফলে আলু বিক্রি করে বোরো ইরি চাষ নিয়ে সঙ্কায় পড়েছে কৃষক। তাদের ধারণা বোরো চাষ করেও আলুর লোকসান পুশিয়ে নিতে পারবেন না।
মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বীজের দাম ছিল চড়া। বীজ সঙ্কট থাকায় চড়া দামে বীজ ক্রয় করে কৃষক দামের আশায় আলু লাগালেও এবার আলুতে তাদের পুঁজি উঠছে না। গত বছর ফলন ভালো না হওয়ায় বছর জুড়ে আলুর দাম ছিল বেশ চড়া। তাই অধিক লাভের আশায় জেলার কৃষকরা ব্যাপকভাবে আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার জেলায় ৪২ হাজার ৫ শত ৩০ ত্রিশ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ মেট্রিকটন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর, আক্কেলপুর উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ শত হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১৪ হাজার ৫ শত ৫০ পঞ্চাশ হেক্টর ও ক্ষেতলাল উপজেলায় ১১ হাজার ২০০ শত হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে।
গত উৎপাদন মৌসুমে আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় পাতা পঁচা রোগে আলুর ফলনে ধ্বস নামে। চলতি উৎপাদন মৌসুমে আবহাওয়া ভালো ছিল। তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। আলু উৎপদনের জন্য যেমন আবহাওয়া প্রয়োজন, মৌসুম জুড়ে আবহাওয়া ঠিক সে রকমই ছিল। কোনো রোগ-বালাই আলু গাছ স্পর্শ করতে পারেনি। গাছও যেমন হয়েছে চমৎকার তেমনি ফলন খুবই ভালো। সদর উপজেলার বম্বু গ্রামের কৃষখ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকাটা আল্লাহরই মেহেরবানি। খারাপ হলে আমাদের করার কিছুই থাকেনা। এ জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দরকার। ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষক মোস্তাক জানায়, প্রতি বিঘা জমিতে হাইব্রিড গ্যানোলা ও ম্যানোলা জাতের আলু ১১০ থেকে১২০ মন, কার্ডিলাল, ডায়মন্ড, রুমানা, বট পাগড়ী, লেডিস রোজেটা, কারেজ, ফেন্সিনা, সুন্দরী, জাতের আলু ৭০-৮০মণ, পাহাড়ী ৬০-৭০ মণ প্রবিন্ড ৬৫-৭০ মণ এবং দেশি জাতের আলু ৬০-৬৫ মণ উৎপাদন হয়েছে। তারা উভয়ে বলেন ধার-দেনা করে আলু লাগিয়ে বিক্রি করে খরচ উঠছে না, দেনাও শোধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ইরি আবাদ নিয়ে ভিষণ চিন্তায় পড়ছি ।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার আলু চাষি শামসুল ইসলাম জানান, সার ও বীজসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিবিঘা জমিতে আলু লাগাতে খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার দরে বিঘা প্রতি আলু বিক্রি করলে আমাদের ৭-৮ হাজার টাকা আসছে যা খরচের অর্ধেক। বিঘা প্রতি এবার আলু উৎপাদন খরচ পড়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে আলুর মূল্য অত্যন্ত কম। প্রতি মণ আলু পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে তা ৩০০-৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সধেন্দ্রনাথ রায়, বলেন চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুতে কোনো রোগ বালাই হয়নি। ফলে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে, তবে বাজারে আলুর দাম একেবারেই পরে যাওয়ায় কৃষকরা আলুতে এবার মোট অংকের লোকসান গুনবে। ফলে ইরি বোরো মৌসুমেও এর প্রভাব পড়বে। তবে হিমাগার গুলিতে নির্দেশনা মেনে সঠিক সময়ে পুষ্ট আলু মজুদ করলে আগামীতে আলুর দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবারে আলুর যা ফলন হয়েছে, তাতে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।