পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভালোবাসা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত ব্যবহৃত চাকু ও মোটর সাইকেল উদ্ধার
বরিশাল ব্যুরো : নগরীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র সাইয়েদুর রহমান হৃদয় গাজী হত্যার সাথে জড়িত ৬ কিশোর সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার সক্ষম করেছে মহানগর পুলিশ। হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি এ কাজে ব্যবহৃত চাকুটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘাতকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে নয়, প্রেম এবং দপ্তরির সামনে অপমানিত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে হৃদয়কে মারধর এবং কুপিয়ে জখমের উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছিল। আর এই মিশনে অংশ নিয়েছিলো ৮জন। গ্রেফতার পরবর্তী নগর পুলিশের কাছে এমনই স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘটনার মূলহোতা কিশোর অপরাধী সাঈদ আবেদীন আব্দুল্লাহ রাহাত (১৭) এবং তার সহযোগিরা। বিএমপি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ কমিশনার জানান, মিশনে থাকা ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জনকে শনিবার ঘটনার পর পরই গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রাহাত নামের যে অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। শনিবার গ্রেফতার হওয়া দুই ঘাতককে রোববার আদালতের মাধ্যমে যশোরের কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে নগরীর সিন্ডবি সড়কস্থ কবি নজরুল ইসলাম সড়কের বাসিন্দা সানাউল হকের ছেলে মো. রাজু হোসেন মাঝি (১৬), তার ভাই সাঈদ আবেদীন আব্দুল্লাহ রাহাত (১৭), বিএম কলেজ এলাকাধীন বৈদ্যপাড়ার বাসিন্দা ইসমাইল সিকদারের ছেলে ইমন সিকদার (১৫), দক্ষিণ আলেকান্দা কাজীপাড়া এলাকার ‘আশ্রাফ ভিলা’র ভাড়াটিয়া বাসিন্দা মো. মোশারফ হোসেন খানের ছেলে মুরাদ হোসেন (১৫)। তার গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জের বাদলপাড়া গ্রামে। কাজীপাড়া বড় বাড়ির বাসিন্দা মো. কবির উদ্দিন সিকদারের ছেলে নুরুন্নবী নাহিদ (১৫)। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সইলাবুনিয়া গ্রামে। এছাড়া অপরজন নগরীর বিএম স্কুল এলাকার হুদা কুটির এর বাসিন্দা সৈয়দ আহসান হাবিব এর ছেলে সৈয়দ মো. ইয়াসিন শান্ত (১৭)। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বীরকাঠি গ্রামে। আটকাকৃতরা সবাই নগরীর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র। এদের মধ্যে হৃদয়ের শরীরে ছুরিকাঘাতকারী ঘাতকের নাম মুরাদ হোসেন।
পুলিশ কমিশনার ঘাতকদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, হৃদয়ের সাথে রাহাতের দুটি ঘটনা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিলো। এর মধ্যে হৃদয়ের বন্ধু আহাদ একই স্কুলের এক ছাত্রীকে পছন্দ করে। সেই ছাত্রীকেই আবার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র রাহাতও পছন্দ করে। এমনকি সে তাকে প্রেম নিবেদনও করেছে।
অপর বিরোধের সৃষ্টি হয় শহীদ আরজু মনি কাউনিয়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী সাব্বির সরকারকে কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে। প্রায় মাস খানেক পূর্বে সাব্বির উল্টো ভাবে ট্রাউজার পরে বিদ্যালয়ে আসে। এ অবস্থা দেখে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র সাঈদ ও তার ৬/৭ জন সহপাঠী সাব্বিরকে আপত্তিকর উক্তি করে। এ নিয়ে পার্শ্ববর্তী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্র সাইয়েদুর রহমান হৃদয় গাজী ও তার বন্ধুরা সাঈদ ও তার বন্ধুদের গালমন্দ করে। বিষয়টি নিয়ে ঐদিন তাদের মাঝে হাতাহাতিও হয়েছিলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন- শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে হৃদয়কে তাদের বিদ্যালয় জিলা স্কুলের বর্ধিত কলেজ ভবন সংলগ্ন পরেশ সাগর মাঠে এলাকায় পেয়ে রাহাতের নেতৃত্বে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ সহপাঠী মিলে হামলা চালায়। এসময় তারা হৃদয়কে নির্দয়ভাবে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পূর্বে হৃদয়কে বাঁচাতে গেলে সহপাঠী সাজিদ রাফি, রুবাইয়াত মাহবুব ও ইয়ামিন নাহিয়ানকেও কুপিয়ে এবং পিটিয়ে আহত করে কিশোর সন্ত্রাসীরা।
পুলিশ কমিশনার আরো জানান, হত্যাকা-ের স্বীকারক্তি দেয়া কিশোর অপরাধীদের দাবী অনুযায়ী আরো দু’জন হত্যাকারী পলাতক রয়েছে। এদের দু’জনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব শিঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি। তবে হত্যাকা-ের ঘটনায় আরো ৩ জনকে পুলিশের জিম্মায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যাকা-ের সাথে সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। যে কারণে আপাতত পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের নাম পরিচয় গোপান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পালাতক দুই কিশোর অপরাধীর নাম পরিচয় জানা গেলেও তদন্ত এবং গ্রেফতারের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন।
এদিকে ছেলে হত্যাকা-ের ঘটনায় হৃদয়ের বাবা জিয়াউর রহমান শাহীন গাজী বাদী হয়ে শনিবার গভীর রাতে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় রাহাত এবং রাজুকে নামধারী ছাড়াও আরো ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ঐ মামলায় রাহাত এবং রাজুকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল আদালতে প্রেরণ করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ায় তাদেরকে যশোরের কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।
উল্লেখ্য, ভান্ডারিয়া উপজেলার চেংগুড়িয়া ভিটাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ভান্ডারিয়া শহরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান শাহীন গাজীর ছেলে সাইয়েদুর রহমান হৃদয় গাজী। সে গত ৩ বছর ধরে বরিশাল নগরীর মা-মানি আবাসিক ক্যাডেট কোচিং সেন্টারে থেকে পড়াশোনা করে আসছিল। গত চার বছর পূর্বে বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনার পর থেকেই হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া করতে হয়েছে তাকে। শনিবার প্রতিপক্ষ কিশোর সন্ত্রাসীদের ছুড়িকাঘাতে খুন হয় হৃদয়। ঐদিনই ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিজ গ্রামের বাড়ি ভান্ডারিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল রোববার নিজ গ্রামে নামাজের জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।