Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত মমতাময়ী মা মায়ের পা ধুইয়ে দিল শিক্ষার্থীরা

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা : সে এক অন্য রকম কর্মসূচি, অসাধারণ দৃশ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সারিবদ্ধ চেয়ারে বসে আছেন মমতাময়ী মায়েরা। আর তাদের সন্তান মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত। মাইকে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। গতকাল (সোমবার) এ রকম দৃশ্য দেখা যায় নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়ে।  শিক্ষার্থীদের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা দেখানো ও যত্মশীল করার লক্ষ্যে এ ধরনের ভিন্নধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করা হয় মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মহাবিদ্যালয়ের আড়াইশ’ শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে দেন। পরবর্তীতে তাদের মায়ের মুখে খাবার তুলেও দেন নিজ হাতে।
এর আগে কর্মসূচির বাস্তবায়নের মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাকে প্রতিষ্ঠানে আসতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর মায়েরা যথাসময়ে উপস্থিত হন মহাবিদ্যালয়ে। কর্মসূচির শুরুতেই মহাবিদ্যালয় চত্বরে অধ্যক্ষ ড. শাহ্ মো. আমির আলী আজাদ তাঁর গর্ভধারিণী মা মোছা. আমিনা খাতুনের দুই পা পানি দিয়ে নিজ হাতে ধুয়ে পরিষ্কার করে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন। পরে মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা (শিক্ষার্থী) মাঠে কয়েকটি সারিতে চেয়ারে বসা নিজ নিজ মায়েদের পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে দেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তাদের মায়েদের মুখে মহাবিদ্যালয়ের দেয়া খাবারও তুলে দেন। এ সময় বেশিরভাগ মায়েরা ও শিক্ষার্থীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় অনেক মা ও সন্তান অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কর্মসূচির তদারকির দায়িত্বে সেখানে উপস্থিত মহাবিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
এর আগে মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. শাহ মো. আমির আলী আজাদ মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসার ও যতœশীল হওয়ার লক্ষ্যে ওই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তুলে ধরেন। পরে সেখানে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন মহাবিদ্যালয়রে সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা ফরিদা বানু, সহকারী শিক্ষক আ. ত . ম রেজাউল কবীর, সাংবাদিক এম আর আলম ঝন্টু ও মো. আমিরুজ্জামান প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা ইসরাত জেরিন।
কর্মসূচির শেষে মহাবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া বিথির মা মহসিনা বেগম কর্মসূচি সম্পর্কে তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর চাইল্ড কেয়ার স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় এ ধরনের একটি কর্মসূচির জন্য মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকই পড়ালেই হবে না। এই বাইরে আরো অনেক বিষয় যেমন বাবা-মায়েদের প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা ও যত্মশীল ভূমিকা, নৈতিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মীতা, সততা, অন্যান্য মানবিক গুণাবলিগুলোও শিক্ষা দেয়া অত্যন্ত জরুরি। ফলশ্রুতিতে লেখাপড়া শিখে ছেলেমেয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেও মা-বাবার প্রতি যত্মশীল হবে। বৃদ্ধ বাবা ও বৃদ্ধা-মায়ের প্রতি তাদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তা উপলব্ধি করবেন।
সৈয়দপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. শাহ্ মো. আমির আলী আজাদ বলেন, মূলত  প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে তাদের বাবা-মায়ের প্রতি যত্মশীল হওয়ার চেতনা জাগ্রত করতে এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট দিনে এ ধরনের কার্যক্রম পালন করা হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের মনে মা-বাবার প্রতি বেশি বেশি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ দেখায় এবং যত্মশীল হওয়ার মনমানসিকতা সৃষ্টি হয়।   



 

Show all comments
  • MD mostafig ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ৯:২০ এএম says : 0
    খুব ভাল কজ আমার কাছে খুব ভাল লাগে
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmud ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৩৩ পিএম says : 0
    আর এক জনের দেখে যদি ভালো কিছু করা যায় তবে সেই দেখাই ভালো । আমাদের দেশে সব স্কুলে বছরে একবার হলেও এমন করা উচিত ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Meraj Al Sadi ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৩৪ পিএম says : 0
    এমন শিক্ষা প্রতিটা বিদ্যালয়ে দিলে প্রতিটা শিশু তাদের মা বাবার প্রতি অনেক শ্রদ্ধাশীল হবে।সালাম জানাই অায়োজকদের কে
    Total Reply(0) Reply
  • Joynal Abedin Shuborno ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৩৭ পিএম says : 0
    Good very good
    Total Reply(0) Reply
  • Bashir Ahmed ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৩৮ পিএম says : 0
    এই প্রতিকি শ্রদ্ধাবোদটা সব বিদ্যালয় ই করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Miraz Sikder ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৩৮ পিএম says : 0
    খুবই ভাল লাগছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Imrul Hasan ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৩৯ পিএম says : 0
    recently i saw a report like this from Indonesia....
    Total Reply(0) Reply
  • Ruhul Amin ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:১৬ এএম says : 0
    GOOD very good
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ