Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা দুটি অব্যাহত রাখার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অভিমত

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা অব্যাহত রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, এ দুটি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মাঝে এসএসসি পরীক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকে বোর্ডের পরীক্ষার ভীতি দূর করা এবং মেধাবী ও দরিদ্রদের মাঝে বৃত্তির নিয়মানুযায়ী বৃত্তি প্রদানের সুবিধার্থে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা ২০০৯ সালে চালু করা হয়।
তিনি বলেন, আমি দেখলাম হঠাৎ এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে কিছু কিছুু সমালোচনা শুরু হয়ে গেল এবং এই পরীক্ষা বন্ধ করারও দাবি উঠল। কিন্তু তাদের এই দাবি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭ উদ্যাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তবানদের শিক্ষার উন্নয়নে, বিশেষ করে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর সঙ্গে শিশু-কিশোররা যেন অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সবাইকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রতি জেলায় একটি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন ঘরের ভাত খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারে।
মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরিতে জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে সংসদ সদস্যরা আছে, প্রচুর বিত্তশালী মানুষ আছে। অনেকেরই এতো টাকা হয়ে গেছে যে, খরচ করার জায়গাও পায় না।
তাদেরকে আমি আহ্বান করব, তাদের নিজের নিজের এলাকা, জেলা বা গ্রামে যে স্কুল আছে, সেখানে যদি একটা ল্যাপটপ আর একটা প্রজেক্টর উপহার দেন এতে শিক্ষার্থীরা সহজেই মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করতে পারবে বলে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি আমার নিজের এলাকায় করেছি। আমি আমার নিজের অর্থ দিয়ে প্রতিটি স্কুলে একটি করে ল্যাপটপ আর প্রজেক্টর দিয়েছি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে ৩১ হাজার ১৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আট হাজার ৯২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে সরকারি উদ্যোগে আরও ৫০ হাজার বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ চালু হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাস ফাইভে এবং ক্লাস এইটে আগে থেকেই বৃত্তি দেয়া হতো। তাই বৃত্তি পাওয়ার জন্য উভয় ক্লাস থেকেই কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে বেছে নিয়ে আলাদাভাবে ক্লাস করানো হতো। কিন্তুু এই শিক্ষার্থীদের বাইরে যারা ছিল তারা অবহেলিতই থেকে যেত। বাদ পড়ে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যেও কিন্তু মেধাবী থাকতে পারে, যাদের মূল্যায়ন হতো না।
শেখ হাসিনা বলেন, সে জন্য আমি চিন্তা করলাম, সবাই পরীক্ষা দেবে। সেখান থেকে যারা মেধাবী বা দরিদ্র, অসচ্ছল তাদের যে নিয়মমত বৃত্তি দেয়া হয় সেভাবে বৃত্তি দেয়া হবে।
কচি বয়সেই একটি বোর্ডের সার্টিফিকেট পাওয়া অত্যন্ত সুখকর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলে ভর্তির ১০ বছর পর (এসএসসি) আগে শিক্ষার্থীরা একটা সার্টিফিকেট পেত। আর সেখানে ক্লাস ফাইভেই তারা যদি একটি সার্টিফিকেট পেয়ে যায় তাহলে বিষয়টি যেমন ভালো লাগে, তেমনি তাদের সেল্ফ কনফিডেন্সও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান এবং প্রথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবুহেনা মোস্তফা কামাল বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৬ বিতরণ করেন। ১৯ জন কর্মকর্তা, শিক্ষক, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, ইনস্ট্রাকটার ও বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিগণ এ পুরস্কার লাভ করেন।
শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক হিসেবে যশোরের জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবীর, শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে সাঁথিয়া মডেল বিদ্যালয় সাঁথিয়া, পাবনার সহকারী শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম এবং শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসেবে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা ইয়াসমীন প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পদক গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব আনন্দিত যখন দেখলাম ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং এবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ পাস করেছে। শতকরা ৯৮ ভাগ পাস করা মানে প্রায় সকলেই পাস করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে দেখতাম আমাদের এসএসসি পরীক্ষায় ৪০ ভাগ পাস করেছে। তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগতো আমাদের শিক্ষার্থীরা তো খুব মেধাবী। তারা ফেল করবে কেন? একটু কষ্ট করলেই তো পরীক্ষায় পাস করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী সার্বিক পাসের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ঝরেপড়া রোধে ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ঝরেপড়ার হার হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় শিক্ষার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টির যোগান দিতে ‘স্কুল ফিডিং প্রকল্প’ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মোট ৯৩টি উপজেলায় ৩০ লাখ ৫ হাজার ৪০৯ জন শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমানসমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ, অভিভাবক ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে সারাদেশে ‘মিড-ডে মিল’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। জাতির পিতা বলতেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। আপনারা হচ্ছেন সেই সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। আপনারাই পারেন প্রতিটি শিশুকে মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশপ্রেমিক ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে।
তিনি বলেন, গত আট বছরে বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১ হাজার ৫০০টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের ৪০ বছর পর ২০১৩ সালে আমরা ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে ১ লাখ ১১ হাজার ৪৩ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করেছি।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা এবং শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন- আমরা দেশ থেকে চিরতরে নিরক্ষরতাকে দূর করে সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলি। পরে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।



 

Show all comments
  • shamim ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ৮:৩৭ এএম says : 0
    prime manister er ei uddok k ami sagoto janai
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ