পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুসলিমবিরোধী আদেশের পর টেক্সাসের মসজিদে আগুন
ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়া, ইরাক, ইরানসহ ৭ দেশের অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন তা স্থগিত করে দিয়েছে মার্কিন ফেডারেল কোর্ট। একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালত গত শনিবার এ স্থগিতাদেশ দেন। আবেদনটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়ন স্থগিত থাকবে। এর ফলে ওই মুসলিম দেশগুলো থেকে শরণার্থী ও অভিবাসী প্রবেশে আর বাধা থাকছে না। গত শুক্রবার ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশের পর নিউইয়র্ক সিটির জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন ইরাকের দুই নাগরিক। তাদের পক্ষেই ফেডারেল আদালতে আবেদনটি করেন মানবাধিকার সংগঠন দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন ও আরও কয়েকটি শরণার্থী সহায়তা সংস্থা। আবেদনে তারা ট্রাম্পের ওই আদেশকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা চেয়ে এটির বাস্তবায়ন ঠেকাতে আদালতে আবেদন করেন। শুনানির পরই আদালত আবেদনটির পুরোপুরি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই আদেশ বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে দেন। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে মার্কিন মুলুকে ৪ মাসের যে কোনো ধরনের শরণার্থী প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর সিরিয়ার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা জারি হয় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত। তবে সিরিয়া থেকে খ্রিস্টান শরণার্থী গ্রহণে সায় ছিল ট্রাম্পের। ট্রাম্প তার আদেশে সিরিয়া ছাড়াও মুসলিমপ্রধান আরও ৬টি দেশের ভিজিটর বা দর্শনার্থী প্রবেশ পর্যন্ত বন্ধ করে দেন ৩ মাসের জন্য। সে ৬টি দেশ হলো ইরাক, ইরান, ইয়েমেন, লিবিয়া, সোমালিয়া ও সুদান।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, অথবা ভ্রমণরত অবস্থায় আছেন; এমন নাগরিকদের বেলায় ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতি প্রয়োজ্য হবে না। বৈধ কাগজপত্রের অধিকারী যারা, তাদের ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়িত হবে না বলে জানিয়েছে আদালত। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় তা বাস্তবায়নের অ্যাকশন। নির্বাহী আদেশের প্রথম দিনেই বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে শুরু করেন মুসলমানরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয় মুসলিম যাত্রীদের। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি মসজিদে হামলা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও মুসলমানদের এমনকি রীতিমতো হেনস্থা করা হচ্ছে।
খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জারি করা নতুন নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিমানবন্দর এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক কার্যালয়ের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাম্প যখন এই নির্বাহী আদেশে সই করেন, তখন যাত্রা শুরু করে আদেশ স্বাক্ষর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন; এমন নাগরিকদেরও আটকে দেয়া হয়েছে। আবার বৈধ বিমান টিকিট ও ভিসা নিয়েও বিমানে উঠতে পারেননি কেউ কেউ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির সঙ্গে তারা এখনও ভালোভাবে পরিচিত হতে না পারার কারণে এমন ঘটছে। এই অবস্থায় গত শনিবার রাতে মার্কিন ফেডারেল আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এদিন ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় আংশিক স্থগিতাদেশ জারি করেন ফেডারেল বিচারপতি। ফেডারেল আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়, যারা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন, অথবা যারা এই মুহূর্তে ভ্রমণপথে রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি প্রযোজ্য হবে না। ফেডারেল আদালতের সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়েছে, যারা বৈধ ভিসার অধিকারী, তাদেরকে অবশ্যই প্রবেশাধিকার দিতে হবে।
মুসলিমবিরোধী আদেশের পর টেক্সাসের মসজিদে আগুন
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা মুসলিমবিরোধী নির্বাহী আদেশের কয়েক ঘণ্টার মাথায় দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য টেক্সাসের একটি মসজিদে আগুন দেয়া হয়েছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে সে দেশের সংবাদ মাধ্যম এই খবর জানিয়েছে। মসজিদটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে তারা। শুক্রবার এক নির্বাহী আদেশে তিন মাসের জন্য ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মসজিদটিতে আগুন দেয়া হয়। ৪ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মসজিদের আগুন লাগার কারণ দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তা নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, বেশ কয়েক বছর আগে একবার ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার হয়েছিল মসজিদটি। কিছুদিন আগে সেখানে চুরিও হয়েছিল। ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেয়ার পাশাপাশি শরণার্থী কর্মসূচি চার মাসের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প। তবে সব শরণার্থীর বেলায়, কর্মসূচি স্থগিতের মেয়াদ নির্দিষ্ট ৪ মাস হলেও সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের। প্রশাসনের শরণার্থী সীমিতকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন নবনির্বাচিত এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মুসলিমদের বদলে খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেয়ার কথা বলা হয়। এভাবেই, যেন শরণার্থীদের বিভাজন-সূত্র প্রকাশ করেন ‘বিভক্তির প্রেসিডেন্ট’! অভিবাসন সীমিত করার নির্বাহী আদেশের কয়েক ঘণ্টা পরই আগুন দেয়া হয় মসজিদটিতে। আগুন লাগার সময় মসজিদ প্রাঙ্গণে ছিলেন অনেকে। কিন্তু অসহায়ের মতো চোখের সামনে মসজিদ পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তিনি।
মসজিদের প্রেসিডেন্ট শাহিদ হাশমি বলেন, এখানে দাঁড়িয়ে মসজিদটি ধ্বংস হতে দেখা খুব কষ্টের। এটা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ এখনই কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তারা।
ওদিকে ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ জারির পরপরই এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনা চলছে। দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স সিএআইআর-এর লেনা এফ মাসরি ক্ষোভ জানিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, আমাদের দেশে প্রবেশকারী শরণার্থীদের সবাই যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে, তেমন কোনো প্রমাণ নেই। ধর্মবিদ্বেষ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বাস্তবসম্মতভাবে নয়। সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, এবিসি নিউজ, এপি, রয়টার্স, বিবিসি।
মেলানিয়ার ইমিগ্রেশন আইনজীবীর নিন্দা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের নিজের অভিবাসন আইনজীবী মাইকেল ওয়াইল্ডস। মাইকেল ওয়াইল্ডস নিউইয়র্কের একজন বিখ্যাত আইনজীবী। তিনি ট্রাম্পের নিজের সংস্থার অভিবাসন বিষয়ে অসংখ্য মামলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। গত শনিবার বিকেলে ‘এমএসএনবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির নিন্দা জানান।
কীভাবে আমরা প্রত্যেকে এই নীতিকে অগ্রাহ্য করতে পারি?’ এমন প্রশ্নে জবাবে নিউইয়র্কের এই আইনজীবী বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাহী আদেশের বিষয়ে আইনি বিরোধ হলে সুপ্রিম কোর্টে তা গ্রহণ করা হবে। আমার মনে হয়, এই অভিবাসী নীতির কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন নিয়ে এ ধরনের নীতি কখনোই ভাল ফল আনে না।’ ওয়াইল্ড পূর্বে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিউইয়র্ক মডেলিং এজেন্সির ‘ট্রাম্প মডেলস’ এর প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং ট্রাম্পের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মডেলদের জন্য ভিসা প্রাপ্তির বিষয়ে আইনি সহায়তা দিতেন।
গত সেপ্টেম্বরে মেলানিয়া ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে তার নিজের অভিবাসন নিয়ে ওঠা প্রশ্নের যুক্তি খ-ানোর চেষ্টা করেন। ওই সময় তিনি ওয়াইল্ডসের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি প্রদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজের ভিসা পাওয়ার পূর্বে মেলানিয়া অবৈধভাবে কাজ করেছেনÑ ওই চিঠিতে এই অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করা হয়। কিন্তু দুই মাস আগে ‘এপি’র প্রকাশ করা নতুন এক ডকুমেন্টে দেখা যায়, ট্রাম্প ও ওয়াইল্ডস কর্তৃক দেয়া আর্থিক বিবৃতিতে অসঙ্গতি রয়েছে। এতে দেখা যায়, সেøাভেনিয়ান বংশোদ্ভূত মডেল মেলানিয়া প্রকৃতপক্ষে ‘নিউইয়র্ক মডেলিং এসাইনমেন্ট’ থেকে টাকা পেয়েছিলেন তার কাজের ভিসা পাওয়ার সাত সপ্তাহ পূর্বে। সূত্র : মাদার জোনস ডটকম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।