Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

টেক্সটাইলের মালিকানা ফিরে পেতে ৪৫ বছর ঘুরছেন ব্যবসায়ী আ. রাজ্জাক

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া : ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ফিরে পেতে ৪৫ বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী শহরের মোঃ আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ব্যবসায়ী। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরÑ সবখানেই ধর্না দিয়েছেন তিনি। সবাই আশ^াসের বাণী শুনিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে কোম্পানির মালিক ফিরে আজও ফিরে পাননি তিনি। এক সময়ের তরুণ আব্দুর রাজ্জাক আজ ৮০ বছরের বৃদ্ধ।
জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রথম পুত্র বুলবুলের নাম অনুসারে মেসার্স বুলবুল টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কুমারখালী শহরে একটি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন তখনকার টগবগে যুবক আব্দুর রাজ্জাক। দেশ স্বাধীনের পর তার ব্যবসা আরো বিস্তৃতি লাভ করে। সে সময় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠানের শাখা অফিসও খোলা হয়। আব্দুর রাজ্জাক জানান, সে সময় ব্যবসা চলত পৌরসভার দেওয়া ট্রেড লাইসেন্সে। কোম্পানীর নিবন্ধন দেয়ার জন্য আলাদা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল না। নিয়মানুযায়ী আব্দুর রাজ্জাক স্থানীয় পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরই মাঝে আব্দুর রাজ্জাকের শ^শুর আব্দুল কুদ্দুস বিশ^াস জুয়া খেলে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। পরে কুমারখালী এলাকার তৎকালীন এমপি গোলাম কিবরিয়ার মধ্যস্থতায় শ^শুরের গোটা পরিবারের ভরণ-পোষণের দায় চাপে আব্দুর রাজ্জাকের ওপর। পরে স্ত্রীর অনুরোধে তিনি কোম্পানির অর্ধেক অংশিদারিত্ব শ^শুর আব্দুল কুদ্দুস বিশ^াসকে দিয়ে দেন। এর কিছুদিন পর সংশোধিত কারখানা আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে কোম্পানির নাম নিবন্ধন করে লাইসেন্স নেয়ার নির্দেশ জারি করে সরকার। আব্দুর রাজ্জাক জানান, সে সময় তিনি ও তার শ^শুর যৌথভাবে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেন। পরে আব্দুর রাজ্জাকের অনুপস্থিতির সুযোগে আব্দুল কুদ্দুস জেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মচারীকে হাত করে তার একক নামে লাইসেন্স বের করে নেন। ফলে জামাই আব্দুর রাজ্জাককে ঠকিয়ে বুলবুল টেক্সটাইল মিলের একক মালিক হয়ে যান আব্দুল কুদ্দুস।
এ ঘটনার পর ১৯৭৬ সালের ২৮ অক্টোবর কুষ্টিয়ার আদালতে আব্দুল কুদ্দুসসহ ৫ জনের নামে প্রতারণার মামলা করেন আব্দুর রাজ্জাক। এ মামলায় আব্দুল কুদ্দুস, তার তিন পুত্র রহিম, রফিক ও দুলাল এবং জাল দলিল লেখক আজিজ প্রামাণিককে আদালতের নির্দেশে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পরে কোম্পানির অর্ধেক মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করলে শ^শুরসহ অন্যদের জামিনে বের করে আনেন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু জামিন পেয়েই তারা ভোল পাল্টে ফেলেন। কোম্পানির মালিকানা ফিরিয়ে দেয়াতো দূরের কথা উল্টো আব্দুর রাজ্জাক মেরে ফেলার জন্য গু-া লেলিয়ে দেন শ^শুর আব্দুল কুদ্দুস। এ কারণে তাকে এলাকা ছাড়তে হয়। তবে শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই অব্যাহত রাখেন রাজ্জাক। কিন্তু অর্থ আর পেশি শক্তি ব্যবহার করে কুদ্দুস ও তার ছেলেরা রাজ্জাকের চেষ্টা বার বার ব্যর্থ করে দেন। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেন আব্দুর রাজ্জাক। প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পুলিশ বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তও করেন। সম্প্রতি কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের বলেন, পুলিশ তদন্ত করলেও আব্দুল কুদ্দুস ও তার ছেলেদের কারসাজিতে সব ধামাচাপা হয়ে যায়। তবে বুলবুল টেক্সটাইলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আব্দুর রফিকের দাবি আব্দুর রাজ্জাক নন, তার বাবা আব্দুল কুদ্দুস বিশ^াস এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বলেন, দুলাভাই আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে বুলবুলের জন্মের দু’বছর আগে বুলবুল টেক্সটাইল চালু হয়। বংশের প্রথম সন্তান হওয়ায় কোম্পানির নাম অনুসারে আব্দুল কুদ্দুস নাতীর নাম রাখেন বুলবুল। তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে নানা অজুহাতে দুলাভাই আব্দুর রাজ্জাক আমাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে আসছেন। টাকা না দিলেও তিনি আমাদের নামে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করে বেড়ান। তবে কোনো অভিযোগ আজ অবধি প্রমাণ করতে পারেননি। আব্দুর রফিক আরও বলেন, বছর তিনেক আগে তিনি আমাদের আর হয়রানি করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়ে বেশ কিছু টাকা নিয়েছেন। এরপর অনেক দিন আর কোনো ঝামেলা করেননি। এখন হয়তো আবার টাকার দরকার পড়েছে তাই আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ