পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। গতকাল (শনিবার) চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি)’র ৫৭তম কনভেনশনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। এসময় তিনি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধিতাকারীদের সুন্দরবন থেকে রামপাল কতদূর তা দেখে আসতে পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনকারীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, রামপালে অবস্থানরত মানুষের ভালো-মন্দ না দেখে তারা সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য কাঁদছেন। তিনি তাদের সুন্দরবন গিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের সাথে দেখা করে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা জিজ্ঞেস করে আসার পরামর্শও দেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্র কিন্তু রামপালে হচ্ছে, সুন্দরবনে হচ্ছে না এমন কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুন্দরবন যেখানে সেখান থেকে অনেক দূরে পশুর নদীর তীরে ডোবা মতো জায়গা ছিল। সেখানে পায়ে হেঁটে যাওয়া যেত না। জায়গাটা ভরাট করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। তাছাড়া ইউনেস্কো ঘোষিত সুন্দরবনের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এলাকা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হচ্ছে। সুতরাং সুন্দরবনের ক্ষতি হবার কোনো সম্ভাবনাই নাই বলে তিনি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, রামপালে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেটি আলট্রা সুপার ডিজিটাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র। যা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেখানে আমরা পাঁচ লাখ বৃক্ষ রোপণের পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতিমধ্যে দেড় লাখ রোপণ করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে ওই এলাকার মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা আসছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাছাড়া কেন্দ্রের চিমনি অনেক উঁচু হবে যা পরিবেশ-বান্ধব। আর কয়লার যে ছাই হবে সেটি কিনতে সিমেন্ট কারখানাগুলো এখনি কন্ট্রাক্ট করছে। কয়লা কাভার্ড কার্গোতে করে আনা হবে যাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়।
সুন্দরবন এলাকায় এক হাজার মেট্রিক টন কয়লাবাহী জাহাজ ডুবে যাবার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বা আন্দোলন করছেন আমি তাদের জিজ্ঞেস করবো এক হাজার মেট্রিক টন কয়লা যে পানিতে ডুবে গেলো এতে ওই এলাকার পরিবেশের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে? সে ব্যাপারে আন্দোলনকারীরা ওই এলাকায় গেছেন কিনা, দেখেছেন কিনা বা যাচাই করেছেন কিনা প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের তো যাচাই করা উচিত, সেখানে যাওয়া উচিত। কিন্তু তারা সেখানে না গিয়ে ঢাকায় বসে বসে আন্দোলন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কথা উল্লেখ করে বলেন, এ খনির কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র করলাম। এটি সাধারণ মানের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটা কিন্তু আলট্রা সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্র না এবং ওখানে কয়লা নেয়া হচ্ছে খোলা অবস্থায়। ওই এলাকায় কতটুকু পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে? আমি ওই এলাকায় নিজে গিয়েছি, হেলিকপ্টারে করে গিয়েছি, ছবি তুলেছি। ধানগাছ পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে এমন কোনো ঘটনা আমার নজরে আসেনি।
বরং কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে ওই জায়গাটা দেবে গেছে, ছয় সাত ফিট নিচে নেমে গেছে। ওই এলাকা পানিতে ভরে গেছে। ওই এলাকার মানুষদের নিয়ে গিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বসতি স্থাপন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দিনাজপুরের মতো ঘনবসতি এলাকায় সাধারণ মানের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে পরিবেশের ক্ষতি বা জমির কোনো উর্বরতা নষ্ট হওয়ার অভিযোগ ওঠেনি বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান।
তিনি বলেন, সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। আমরা সরকার পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১৫ প্রণয়ন করেছি। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ৯ হাজার ৫৬০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও আপাতকালীন সময়ের জন্য খাদ্যশস্য সংরক্ষণ কার্যক্রমকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। বেশকিছু সংরক্ষণাগার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মাত্র ১৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যায়। বিগত দুই যুগে নতুন কোনো শস্য গুদাম তৈরি হয়নি। আমরা ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েকটি শস্য গুদাম স্থাপনের পরিকল্পনা করি। কিন্তু পরবর্তী সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ অব্যাহত না রাখায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে প্রকৌশলীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল আজকের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ। জাতীয় উন্নয়নে এ ইনস্টিটিউশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যা আগামীতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দেশের প্রকৌশলীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সততার সাথে কাজ করে প্রমাণ করেছেন তাদের যোগ্য ও মেধাবী। আর এ সাফল্য জাতির জন্য বয়ে এনেছে গর্ব। এ সময় উপস্থিত থাকা সকল প্রকৌশলীকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সদর দপ্তরের জমিটি আমি ১৯৯৬ সালে প্রতীকী মূল্যে আইইবি’র নামে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছিলাম। এছাড়া এ ভবন নির্মাণের জন্য আমি সর্বপ্রথম ৫ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করি এবং পরে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য ২৩ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের জন্য ১৯৯৭ সালে ৭২ বিঘা জমি প্রতীকী মূল্য প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ২৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছি। আইইবি রাঙ্গাদিয়া কেন্দ্রের জন্য ১৩০ শতক জমি বরাদ্দ, ফরিদপুর কেন্দ্রের জন্য ৫০ শতক জমি, আইইবি খুলনা কেন্দ্রের জন্য কেডিএ’র জায়গা ও পূর্বাচলের ২ বিঘা জমি আইইবি’র জন্য বরাদ্দ দিয়েছি।
আমরা ই-গভর্নেন্স চালু করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। প্রকৌশলীরা নিজেদের মেধা, মনন আর শ্রমের সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ত্বরান্বিত করতে পারেন। প্রযুক্তির সহায়তায় ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা দেশবাসীর দোরগোড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দিতে চাই।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে (আইইবি) চার দিনব্যাপী এ কনভেনশনের উদ্বোধন করেন। এবারের কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল টেকনোলজি ফর ডেভোলপমেন্ট’। কনভেনশনের মূল আকর্ষণ হিসেবে জাতীয় সেমিনারের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ইউটিলাইজেশন অব ডিজিটাল টেকনোলজি ফর প্রো পিপল ডেভোলপমেন্ট’। সেমিনারে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলাসহ সরকার কর্তৃক গৃহীত এসডিজি বাস্তবায়নে উপযোগী টেকসই অবকাঠামো ডিজাইন ও নির্মাণ এবং কল-কারখানায় নিরাপদ ও সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ, নাগরিকের সার্বিক জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষে প্রকৌশলীদের ভূমিকা ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।