পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : নারী ও পুরুষের পাশাপাশি বাড়ছে শিশু হৃদরোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জন্মগত শিশু হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু মারাত্মক এই ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে ৩ লাখ শিশু জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর আরো ৪০ হাজার শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। যার মধ্যে ৫০ শতাংশ শিশু বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে। সেই হিসেবে দিনে গড়ে ৫৫ জন শিশুর মৃত্যু ঘটে এ রোগের কারণে। যার বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা না পেয়ে জন্মের ৭ থেকে আট মাসের মধ্যে মারা যাচ্ছে। এদিকে এ ধরনের রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা বাংলাদেশে একেবারেই অপ্রতুল। সারাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞের সংখ্যা মাত্র ৩০ জন। যার বেশিরভাগের অবস্থান ঢাকাতে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জন্মগত হৃদরোগীদের অধিকাংশই হৃৎপিন্ডে ছিদ্র নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। নবজাতকের হৃৎপিন্ডে ছিদ্র হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। তবে সন্তান ধারণের সময় মায়ের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে, মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে বা ঋতুচক্রের শেষ দিকে গর্ভধারণ হলে এ ধরনের ত্রুটি নিয়ে শিশুর জন্ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় কিছু ভাইরাসজনিত রোগ যেমন- হাম, রুবেলা, মাম্পস, জলবসন্ত প্রভৃতি রোগে মা আক্রান্ত হলে হৃৎপিন্ডে ছিদ্র নিয়ে শিশুর জন্ম হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়েরা যদি স্টেরয়েড, খিঁচুনির ওষুধ সেবন করেন তাহলেও সম্ভাবনা থাকে। জন্মগত হৃদরোগীরা কোনো কারণ ছাড়াই বুকে অবিরাম কফ থাকে, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, একটু পরিশ্রম করলেই শিশুর শরীর নীলাভ হয়ে যায়, বুক ধড়ফড় করে, বুকের বাঁ দিকের খাঁচা বড় হয়, কখনও যকৃৎ বড় হয় এবং শক্ত থাকে, শিশু অতিরিক্ত ঘামে, দৈহিক বৃদ্ধি হয় না। চিকিৎসকরা জানান, ওষুধ, ইন্টারভেনশন বা পাইপের মাধ্যমে এবং ওপেন হার্ট সার্জারি এই তিন পদ্ধতিতে শিশু হƒদরোগীদের চিকিৎসা হয়ে থাকে। সাধারণত এএসডি, পিডিএ, ভিএসডিÑ ধরনের শিশুরা চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। কিছু রোগীকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ দেয়া হয়, যাতে সে অপারেশন করা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৯৮৭ জন শিশু এখানে চিকিৎসা নিয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। একই সঙ্গে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৭ হাজার ৫৩৮ জন শিশু। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগে গত ৭ সাত বছরে প্রায় ৪ হাজার শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা দিয়েছে। ভর্তি হয়েছে নয়শ’র বেশি শিশুরোগী। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা নিচ্ছে।
তিন বছরের ছোট্ট শিশু নুরানী। গ্রামের বাড়ি বগুড়ার গাবতলীতে। জন্মগতভাবে হƒদপি-ে ছিদ্র ছিল নুরানীর। এ জন্য সমস্যার অন্ত ছিল না। ঠিকমতো ছোটাছুটি করা, খেলা-ধুলা করতে পারত না। একটু বেশি হাঁটলেই হাঁপিয়ে উঠত। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক ডাক্তার দেখানোর পর গত ডিসেম্বরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) শিশুটিকে নিয়ে আসেন মা নূরজাহান। এখানে আনার পর জানতে পারেন তার সন্তানের হৃদপিন্ডে একটি ছিদ্র রয়েছে। এই ছিদ্র বন্ধ করতে না পারলে সে সুস্থ হবে না। এই চিকিৎসায় প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা প্রয়োজন। নুরানীর কৃষক বাবা জাহিদের পক্ষে এই ব্যয় মেটানো একেবারেই অসম্ভব। তবে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হয়নি তাদের। এনআইসিভিডি এবং কাতার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হৃদপিন্ডে ছিদ্র নিয়ে জন্মানো ৬৬টি শিশুর চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়েছে। এনআইসিভিডি’র পরিচালক প্রফেসর ডা: মো: আফজালুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: মাহমুদ আল সউফির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ৭ থেকে ১৪ জানুয়ারি এসব শিশুর চিকিৎসা দেন। এভাবে দেশ-বিদেশের দাতা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদশালীরা এগিয়ে এলে দরিদ্র মানুষের উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০১ সালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুস সালাম শিশু হƒদরোগের চিকিৎসা শুরু করেন। এর আগে দেশে এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। বিগত ১৬ বছরে তার প্রচেষ্টায় আরো ৩০ জন চিকিৎসক তৈরি হলেও এই চিকিৎসার জন্য গড়ে ওঠেনি উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা। ফলে জন্মগত শিশু হƒদরোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগই থাকছে চিকিৎসার বাইরে।
জাতীয় হƒদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রফেসর ডা: এ বি এম আব্দুস সালাম বলেন, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় বেশিরভাগ শিশু হƒদরোগীকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, হƒদরোগ হাসপাতালে প্রতিদিন এ ধরনের ৫০ থেকে ৭০ জন রোগী আসে। কিন্তু এসব রোগীর জন্য পৃথক ওয়ার্ড, ওটি ক্যাথ ল্যাব না থাকায় চিকিৎসক এবং রোগী সকলকেই সমস্যায় পড়তে হয়। শিশু হƒদরোগীদের জন্য হাইব্রিড ক্যাথ ল্যাবসহ পৃথক পরিপূর্ণ বিভাগ করতে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন তিনি।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা: আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার বলেন, সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ভাগ শিশুর ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ডের এ ছিদ্র আপনাআপনি সেরে যায়। হৃদপিন্ডের ছিদ্রের আকার খুব বেশি বড় হলে অস্ত্রোপচার করে ছিদ্র বন্ধ করতে হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হƒদপি-ের ছিদ্র বন্ধে ইন্টারভেনশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার, কাঠা-ছেঁড়া, রক্ত এবং আইসিইউ ছাড়া, পাইপের মাধ্যমে শরীরে বিশেষ ধরনের একটি ডিভাইস ঢুকিয়ে ছিদ্র বন্ধ করা হয়। এ ধরনের চিকিৎসা নিয়ে শিশু হƒদরোগীরা আজীবনের জন্য সুস্থ থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, দেশে শিশু কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে, এটা ঠিক। দেশে শিশু হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে সে অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এ বিভাগ চালু করা। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে যদি এ সংক্রান্ত বিভাগ চালু করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের শিশু-কার্ডিয়াকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর এসব চিকিৎসকদের যদি কেবলমাত্র রাজধানীতে না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণের হার অনেক কমে আসবে। একই কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: রেজওয়ানা রিমা। তিনি বলেন, এ বিষয়ে পড়াশোনার দিকে নজর দেয়া উচিত অতি জরুরিভাবে। তাহলে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর রোগীরাও চিকিৎসা পাবে।
অভিভাবকদের সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে ডা: রিমা বলেন, অভিভাবকদেরও ঘাটতি রয়েছে শিশুদের হৃদরোগ নিয়ে। আর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকাতে চিকিৎসকরাও সঠিক চিকিৎসাটা দিতে পারেন না সবসময়। সে কারণে শিশুদের হৃদরোগ বিষয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের দায় অনেক বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, দেশে সরকারি পর্যায়ে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।