Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০ কোটি মানুষের সেতুবন্ধন

লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাটকে নদী বন্দর ঘোষণা

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হোসাইন আহমদ হেলাল : দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘকালের লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাধীন “মজু চৌধুরীর হাটকে নদী বন্দর ঘোষণা করা। অবশেষে বর্তমান সরকার জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবিটি পূরণ করলো। গত ১২ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এর টিএ শাখা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, এস,আর ও নং ০৯ আইন/২০১৭ দি পোর্টস এক্ট ১৯০৮-এর সেকশান নং ৭ এর (১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাংলাদেশ আইল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরীটি (বি.আই.ডব্লিউ.টিএ)কে মজু চৌধুরী হাট নদী বন্দর এর সংরক্ষক হিসেবে এতদ্বারা নিযুক্ত করল। এ সু-সংবাদ নিয়ে গত শুক্রবার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান মজু চৌধুরী হাটে পথসভার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সাথে মতবিনিময়কালে সরকারের পক্ষে মজু চৌধুরী হাট নদীবন্দর আনুষ্ঠনিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। নদীবন্দর ঘোষণার এ সংবাদটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শুধু লক্ষ্মীপুর জেলা নয় বরিশাল-খুলনা-চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রায় ১০ কোটি মানুষের মাঝে আনন্দ বয়ে এনেছে।
গতকাল শনিবার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমান ইনকিলাবকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দীর্ঘকালের অবহেলিত লক্ষ্মীপুর আজ উন্নয়নে ভরে যাবে, মজু চৌধুরীর হাটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী বন্দর চালু হবে এটি নিশ্চিত হলো। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় শতাধিক কোটি টাকা ব্যয় হবে এটি বাস্তবায়নে শীঘ্রই টেন্ডার হবে, অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন,  এ নদী বন্দরটি অন্যান্য বন্দরের চেয়েও অত্যাধুনিক হবে। চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে পূর্বাঞ্চলের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ইনকিলাবকে সাক্ষাৎকারে বলেন, এ অঞ্চলের ৫০ বছরের দাবি পূরণ হলো। এ নদী বন্দর স্থাপনের দাবী নিয়ে লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে সমাবেশ মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দিয়েছিল। অতীতের কোনো সরকার এ দাবিটি পূরণ করতে পারেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ এ নদী বন্দর ঘোষণা। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের হাজার হাজার মানুষ এ নদী পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গত ৫০ বছর যাবত চলাচল করে আসছে। এখন আর সেই ঝুঁকি থাকবে না। নিরাপদেই চলাচল করবে মানুষ। তিনি আরো বলেন, গত ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল সড়কটি পাকা করেছে। এখন নদী বন্দর ঘোষণা করেছে। এর ফলে বড় বড় লঞ্চ, জাহাজ চলাচল করবে। পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হবে। উপকূলীয় জনপদের মানুষের উন্নয়ন ঘটবে। বেকারত্ব দূর হবে। আই-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটবে। তিনি দ্রুত লক্ষ্মীপুরকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে পূর্বাঞ্চলের একমাত্র দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যমে হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাট। গত ৫০ বছর যাবত এসব অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ফেরী ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় এ পথে চলাচল করে আসছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে চট্টগ্রামও সিলেট বিভাগে যেতে ঢাকা হয়ে ১শ’ দেড়শ’ কি: মি: ঘুরে আসতে হতো। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁিক নিয়ে নৌকায় নদী পথে আসা-যাওয়া করতো। নৌকা ও ট্রলার ডুবিতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাট মেঘনা নদী গাটে নদীবন্দর ঘোষণার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বহু আন্দোলন করলেও অতীতের কোনো সরকার এ দাবির সমর্থনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। শুধু আশ্বাসের বাণী দিয়ে শেষ করেছের ক্ষমতা। অবশেষে এ নদী বন্দর ঘোষণা করা হলো বর্তমান সরকারের আমলে। এ অঞ্চলের মানুষ এখন উৎফল্লিত। সর্বত্রই উৎসবের আমেজ বইছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজু চৌধুরী হাটসংলগ্ন স্থানের সঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, পটুয়াখালী পায়রা বন্দর এবং চাঁদপুর নদী বন্দরের সঙ্গে সড়ক পথ ও জল পথের সংযোগ রয়েছে। এছাড়া এ জেলার সস্তা শ্রম বাজার রয়েছে মজু চৌধুরী হাটসংলগ্ন স্থানে বৃহৎ পরিসরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য সকল বৈশিষ্ট বিদ্যমান রয়েছে।
এ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ফেব্রুয়ারি ২০১৬ প্রথম পক্ষের পাক্ষিক সভায় লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলাধীন মজু চৌধুরী হাট সংলগ্ন স্থানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ২১ মার্চ ২০১৬ তারিখে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসককে প্রস্তাবিত স্থানের জমির তথ্যাদিসহ প্রয়োজনীয় কাহজপত্র  প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ জানান হয়। পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রেরণ করার পর গত ৫ জুন ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্মীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য পুনরায় স্থান নির্বাচন করে প্রস্তাব দেয়ার অনুরোধ জানান। এর পর এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
নদী বন্দর ঘোষণার পাশাপাশি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করা হলে এ অঞ্চলে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটবে, বর্তমান সরকার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। লক্ষ্মীপুরের অ-লক্ষ্মী দূর হবে মনে করছেন এ জেলার চার সংসদ সদস্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ