ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. তোফাজ্জল বিন আমীন : হকারদের নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে। হকারদের নিয়ে সমস্যা নতুন নয়। বরং বলা চলে বহু পুরাতন। প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একটি দেশের উন্নয়নের পেছনে শুধু সরকারের ভূমিকা থাকে এমনটা বলার সুযোগ নেই। উপরতলার মানুষ থেকে শুরু করে ভিক্ষুক পর্যন্ত সকলেই উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জন্মের পর পরই কেউ হকার হয়ে যায়নি। হকার হওয়ার পেছনে থাকে অনেক অজানা কাহিনী। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা শুধু নিজের সুবিধাটা বুঝি। অন্যের দুঃখ-কষ্ট বুঝার মতো শক্তি বা সামার্থ্য আমাদের নেই।
ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্তে অনড় সিটি কর্পোরেশন। হকাররাও দখল ছাড়তে নারাজ। ফুটপাত হচ্ছে পথচারীদের চলাফেরার জন্য। এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই, একজন হকার বেকার হয়ে গেলে তার পুরো পরিবারের পথে বসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এই বিষয়টিও ভেবে দেখা প্রয়োজন। সরকারের উচিত হকারদের উচ্ছেদ করার আগে পুনর্বাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা। হকার্স ইউনিয়ন নেতারা বলেছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছেন। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবেন। এছাড়াও তারা দাবি করেন পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ মানা হবে না। রাজধানীজুড়ে হকাররা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। শুধু ফুটপাত কেন, জনসাধারণের জন্য নির্মিত ওভারব্রিজগুলোও তাদের দখলে। হকারদের উচ্ছেদ করার আগে তোলাবাজদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা টাকার বিনিময়ে হকারদের ফুটপাতে বসতে উৎসাহ জুগিয়েছে আগে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। হকাররা পথচারীদের রাস্তা বন্ধ করে ব্যবসা করার সাহস পেল কী করে? দীর্ঘদিন ধরে হকাররা পল্টন, জিপিও, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার ফুটপাত দখল করে আছে। যেখানে ফুটপাত আছে অথবা রাস্তার পাশে জায়গা আছে সেখানেই হকাররা তাদের পসরা নিয়ে বসে থাকে। এর ফলে পথচারীদের চলাচলের অসুবিধা হয়। পুলিশের নাকের ডগায় কোন শক্তির বলে হকাররা ফুটপাত দখল করেছে সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা জরুরি।
রাজধানীর সড়কগুলোতে যানজট হওয়ার পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে, শুধুমাত্র হকারদের যত্রতত্র দোকানপাটই তার জন্য দায়ী নয়। ফুটপাথ দখলমুক্ত করার যে উদ্যোগ মেয়র সাহেব নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে অতীতে হকার উচ্ছেদের নামে ইঁদুর-বিড়াল খেলা কম হয়নি। সকালে উচ্ছেদ তো বিকেলে আবার অবিকল আগের অবস্থা। এই ধরনের পরিস্থিতি যেন আর দেখতে না হয়। আমরা এর স্থায়ী সমাধান কামনা করছি। রাজধানীর মোট ২ হাজার ৬৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অনেকাংশই নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের দখলে। এই শহরে যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ শতাংশ সড়ক দরকার। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ শতাংশ। মূল সড়ক আছে মাত্র ৩ শতাংশ। এই ৩ শতাংশের ৩০ শতাংশ দখল করে রেখেছে অবৈধ দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকার। রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রায় ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাতে ৭০ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। হকার সমিতির হিসাব মতে, ফুটপাতের এসব দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। এই টাকার ভাগ পায় সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, লাইনম্যান, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক কর্মী ও পুলিশ। হকাররা জানায়, ফুটপাতে ব্যবসা করার জন্য নানা পক্ষকেই চাঁদা দিতে হয়। হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নেন পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা। তার প্রভাব পণ্যের উপরও পড়ে। নির্ধারিত চাঁদার টাকা না দিয়ে কেউই ফুটপাতে টিকতে পারে না। মারধর করে তুলে দেয়াসহ পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয়। একজন মানুষ জন্ম থেকে হকারি পেশায় আসেনি। অনেকে বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে অন্য কোনো পথ খোলা না থাকার দরুন হকারি পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। সরকারের আজ্ঞাবহ কর্তাব্যক্তিরা যতই উন্নয়নের ঢোলের বাজনা বাজাতে থাকুন না কেন সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন হয়েছে একশ্রেণীর দলীয় তেলবাজ ব্যক্তির। দিন দিন হকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যারা হকার হয়েছে তারা সবাই গ্রাম থেকে আসা সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। গ্রামে তাদের নিয়মিত উপার্জনের কোনো সুযোগ না থাকায় তারা শহরে এসেছে।
বেকারত্ব এখন দেশের একটি বড় সমস্যা। আগেকার দিনে বেকারত্ব বলতে প্রধানত বোঝাত মধ্যবিত্ত শিক্ষিত লোকদের কর্মসংস্থানের অভাব। এখন বেকারত্বের হার অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। ফুটপাতে হকারদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি হওয়া বেকারত্বেরই প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়। যারা আজ ছিঁচকে চোর, মাদকদ্রব্য বহনকারী, রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারী, পকেটমার নানাভাবে খুনখারাবি করছে তাদের অধিকাংশের উদ্ভব বেকারত্বের কারণে। তারা নানা ধরনের অপরাধ করে জীবিকা অর্জন করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু হকাররা এ ধরনের অপরাধ না করে জীবিকা অর্জনের একটা উপায় হিসেবে ফুটপাতে বসে দোকানদারি করছে। হকারদের পুনর্বাসন এবং নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষের সুবিধার্থে কয়েক বছর আগে চালু করা হয়েছিল হলিডে মার্কেট। চালুর পর পরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এ মার্কেটগুলো। ফুটপাতও অনেকটা হয় দখলমুক্ত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণ ও অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় এসব মার্কেট। ফুটপাত আবারও হকারদের দখলে চলে যায়। হকারদের সাথে এই খেলা বন্ধ করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত হকারদের সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করে দেয়া। আমরা আশা করি, সরকার উচ্ছেদ করার আগে হকারদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।