পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : নগরীর দেওয়ান বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকা-ে দগ্ধ হয়েছেন তিন জন। তাদের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল (শুক্রবার) ভোরে পশ্চিম বাকলিয়া দেওয়ান বাজার এলাকায় মাদরাসা ভবন হিসেবে পরিচিত এই ভবনের তৃতীয় তলায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ছয় তলা ভবনের বিশাল অংশের দরজা জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আশপাশের ভবনের জানালার কাঁচও ভেঙে যায়।
বিস্ফোরণ নিয়ে দিনভর নানা গুঞ্জন থাকলেও আলামত পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যায় পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন রান্না ঘরে গ্যাসের চুলা খোলা থাকায় সেখানে জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণ হয়েছে। ওই বাসায় কোনো রকমের বিস্ফোরকের আলামত পাওয়া যায়নি।
আগুন লাগার আগে বিকটশব্দে বিস্ফোরণ ঘটেছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ওই বিস্ফোরণের কারণ হিসাবে গ্যাসের লিকেজকে দায়ী করা হয়। তবে বিস্ফোরণের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না; তা পুলিশ খতিয়ে দেখতে পুলিশের বোম ডিসপোজল টিমের সদস্যরা সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। আলামত নিয়েছেন সিআইডির ফরেনসিক টিমও।
আহতরা হলেন ছমুদা খাতুন (৭০), তার নাতি আরিফ (২৬) ও নাতনি ইফতি (১৭)। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক এস খালেদ জানান, দাদি ও নাতনির দেহের ১০০ ভাগ্ পুড়েছে। তাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। নাতি আরিফের পুড়েছে দেহের ২৫ শতাংশ।
এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিভিয়ে দগ্ধ অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা স্টেশনের কর্মকর্তা রবিউল আজম। তিনি বলেন, মাদরাসা আরেবীয়া খায়েরিয়া এতিমখানা ভবন নামে ছয় তলা ওই ভবনের তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে সেখানে কোনো মাদরাসা নেই। রবিউল জানান, ভবনটির নামে এতিমখানা লেখা থাকলেও সেখানে কোনো এতিম থাকেন না।
মালিক ভবনটি আনোয়ারার ওই মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে গেছেন। ভবনের ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থে মাদরাসা ও এতিম খানাটি পরিচালিত হয়। ভবনটির মালিক আনোয়ারার বাসিন্দা মোহাম্মদ সালেহ। তার ছেলে মোহাম্মদ সুহায়েল সালেহ মাদরাসা ও এতিমখানার অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, আনোয়ারার রায়পুরের পরুয়া পাড়া গ্রামে এতিমখানাটি অবস্থিত। দেওয়ান বাজারের এই ভবনের ভাড়া দিয়ে এতিমখানাটি পরিচালিত হয়। ভবনের ৩৫টি ফ্ল্যাটই ভাড়া দেয়া বলে সালেহ জানান। এটি দেখাশোনা করেন তার ফুপাত ভাই দেওয়ান বাজারের বাসিন্দা ইসমাইল।
যে ঘরে (ফ্ল্যাট নম্বর ৩-০১) বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি প্রবাসী আবদুল মোতালেব ভাড়া নেন বলে জানান সালেহ। ছয় তলা ভবনটি নির্মাণের পরপরই ২০০৮ সালে তৃতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন মোতালেব। তার স্ত্রী তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন। সালেহ বলেন, কিছুদিন আগে আবদুল মোতালেব দেশে আসেন। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে গেছেন। বাসায় তার মা ও সন্তানরা ছিল।
তিনি বলেন কী কারণে এই বিস্ফোরণ হয়েছে তা বাসায় থাকা ওই তিনজনের কাছ থেকে জানা যায়নি। কারণ তারা সবাই দগ্ধ। তবে কিছুটা কম আহত আরিফ জানিয়েছে তাদের বাসার গ্যাসে চুলা রাতভর খোলা ছিল। রান্নাঘরের দরজা জানালাও ছিল বন্ধ। সকালে ওঠে চুলা জ্বালাতে আগুন ধরে এবং বিস্ফোরণ ঘটে।
ওই ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা (ফ্ল্যাট নম্বর ৩-০৬) শহীদুল ইসলাম বলেন, ফজরের নামাজের আগে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে আমার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা রবিউল বলেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশে পাশের ভবনের জানালার কাচও ভেঙে পড়ে। এরপর বাসাটিতে আগুন ধরে যায়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ওই বাসার ভেতরে গ্যাস জমা হয়েছিল। আগুনের বর্হিমুখী চাপে ভবনের দেয়াল ভেঙে সামনের ভবনে গিয়ে পড়লে সেটির গ্রিল বেঁকে গেছে। বাসাটির বাথরুমের দেয়াল ভেঙে পাশের ভবনের দেয়ালও ভেঙে গেছে।
রান্না ঘরে জমা গ্যাসে বিস্ফোরণ
চুলা খোলো রাখায় ঘরে জমে থাকা গ্যাসের কারণে হয়েছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সন্ধ্যায় নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসাইন বিকালে বলেন, ‘সিআইডির ক্রাইম সিন টিম, ডিবির বোম্ব ডিসপোজল ইউনিট তল্লাশি করে বাসা থেকে কোনো ধরনের বিস্ফোরকের আলামত পায়নি। আমরা নিশ্চিত হয়েছি ঘরের ভেতর জমে থাকা গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনে এবং বিস্ফোরণের আলামত দেখে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল সকাল থেকে সেখানে তল্লাশি শুরু করে। পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাইন বলেন, ওই ঘরের গ্যাসের চুলার চাবি খোলা ছিল। সে কারণে ঘরে গ্যাস জমে যায়। দগ্ধ মেয়েটি ভোরে চুলা জ্বালানোর জন্য ম্যাচ জ্বালালে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।