Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দৃপ্ত পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে প্রধানমন্ত্রী

গোপালগঞ্জে ‘জাতীয় রোভার মুট’ উদ্বোধন

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোভার স্কাউটদের উদ্দেশে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তোমরা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের নেতৃত্বদানের জন্য তোমাদের  বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দৃপ্ত পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তোমরাই হবে সোনার ছেলে ও সোনার বাংলা গড়ার কারিগর। তেমরাই বংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গোপালগঞ্জের মানিকদাহে রোভার স্কাউটদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ‘জাতীয় রোভার মুট’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্কাউটের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড.মোজাম্মেল হক খান, ১১তম জাতীয় রোভার মুটের সাংগঠনিক সভাপতি মোঃ শাহ্ কামাল বক্তব্য রাখেন।
পরে পায়রা উড়িয়ে ১১তম জাতীয় রোভার মুটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি একাদশ জাতীয় রোভার মুট উপলক্ষে ডাক বিভাগ উদ্বোধনী খাম ও ১০ টাকা মূল্যমানের স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ ও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশকে আমরা সবাই মিলে শান্তিময় করবো। তবে তা কারো কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়, বা কারো অনুকম্পা নিয়ে নয়। এবারের মুট থিম, ‘শান্তিময় জীবন, উন্নত দেশ’ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও উদ্দীপনামূলক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী রোভারদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা এখান থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে নিজেদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলবে। উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। আমরা শান্তিময় দেশ চাই। সেজন্য  নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। তোমরা যারা এ রোভার মুটে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছো তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরে পৃথক একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ২৪তম রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্স আয়োজন করেছে। মৌচাকে জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১০-২০১৬ পর্যন্ত সদ্য সমাপ্ত কাবিং সম্প্রসারণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের জন্য ১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১১ হাজার নতুন কাব স্কাউট দল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হিউম্যান রিসোর্স থ্রু স্কাউট প্রকল্পের জন্য ১৭ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার নতুন স্কাউট দল, পাঁচটি জেলায় স্কাউট ভবন, দিনাজপুর ও কুমিল্লায় মহিলা ডরমেটরি নির্মাণ করা হয়। এছাড়া জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাচীরসহ সংস্কার কাজ এবং সিলেট আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলনকে জোরদার করতে সরকার ইতোপূর্বে ‘বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউট শতাব্দি ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক ১২২ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাব স্কাউটিং বাড়ানোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্থান সঙ্কুলান সমস্যা নিরসনের জন্য ৯৫ একর বনভূমি স্কাউটদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। এখান থেকে একটি গাছ না কাটার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন একটি গাছ কাটলে ৩টি গাছ লাগাতে হবে। এছাড়া স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ক্যাম্প সাইট স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মানিকগঞ্জে জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
এসময় তিনি স্কাউটদের উদ্দেশে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘুর্ণিঝড়, বন্যা অগ্নি দুর্ঘটনা ও শীতার্ত মানুষের সেবায় তোমরা কাজ করে যাচ্ছ। দুর্যোগে সেবাদানের লক্ষ্যে স্কাউটসদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হয়েছে জেনে আনন্দিত হয়েছি। তোমাদের অধিকহারে বৃক্ষ রোপনের লক্ষে সম্পৃক্ত হতে হবে। এতে পরিবেশের উন্নতি  হবে। অধিক বৃক্ষ রোপন করে জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুকি থেকে পরিবেশ ও দেশকে রক্ষা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টায় ২ দিনের সফরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বেলা ১১ টায় গোপালগঞ্জ শহরতলীর মানিকদাহে রোভার স্কাউটদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ‘জাতীয় রোভার মুট’ এর মঞ্চে আসেন। তাকে স্কাউটের পক্ষ থেকে অর্ভথ্যনা জ্ঞাপন করা হয়।  ১১টা ২ মিনিটে  প্রধানমন্ত্রীকে মুট স্কার্ফ, ব্যাজ, টুপি ও স্মরণিকা প্রদান করা হয়। ১১টা ৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মুট পতাকা হস্তান্তর করার পর প্যরেড প্রদর্শন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি, প্রতিবন্ধী শিশু ও স্কাউটের পক্ষ থেকে শিশুরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতা কর্মীদের সাথে গতকাল দুপুর পৌনে ১ টা থেকে ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মত বিনিময় করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। ভাল কাজ করে মানুষের মন জয় করতে হবে। মানুষ যাতে আমাদেরও ভালোবাসে সে আস্থা অর্জন করতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সম্পাদকের একটি করে দপ্তর রয়েছে। সরকারেরও এ ধরনের দপ্তর জেলা পর্যায়ে কাজ করছে। তারা নিজ নিজ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি ওই সব দপ্তরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে সহায়তা করবে। তিনি উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে নেতা কর্মীদের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন। এছাড়া  আওয়ামী লীগকে তৃনমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী নেতা কর্মীদের উদ্দেশে সাংগঠনিক বক্তব্য প্রদান করেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম  বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির বড় ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম, ছোট ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুব লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা উপিস্থিত ছিলেন।
২০০৮ সালে গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৈতৃক ভিটায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর আজ বৃহস্পতিবার প্রথম তিনি ওই কার্যালয়ে নেতা কর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেন। এছাড়া ১৯৮৬ সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালীন সময়ে শেখ হাসিনা ব্যাংকপাড়ার পৈতৃক ওই বাড়ি একবার পরিদর্শন করে বলে জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান।
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ফাতেহাপাঠ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করেন।
দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশে বসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত করেন।
টুঙ্গিপাড়া নিজ বাসভবনে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাত্রী যাপন করবেন। শুক্রবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া থেকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা রয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:১৩ পিএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোভার স্কাউটদের সমাবেশে যোগদিয়ে খুবই ভাল কাজ করেছেন। এই বয়সের ছেলে/মেয়েদের সাথে যখন প্রধানমন্ত্রী বসে আলোচনা করলে এই কোমল মনে সেটা একটা ভাল দাগ কাটে। তাই আমি মনে করি যত ছাত্র/ছাত্রী এই সমাবেশে যোগ দিয়েছিল তারা সবাই প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে খুশি হয়েছে এবং তার ভাল ভাল কথা গুলো অবশ্যই গ্রহণ করবে। আমি যখন স্কাউট ছিলাম তখন আমাদেরও উদ্বোধন ও সমাপনই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতী হয়ে অনেক নামী দামী লোকজন আসত এবং আমরা তাদের কথা শুনে নিজেদেরকে সেইভাবে গড়ার প্রতিজ্ঞা করতাম। আমাদের মধ্যে যারা প্রতিজ্ঞা রখতে পেরেছি তারা ভাল করেছি এটাই সত্য। তাই নেত্রী হাসিনার আজকের এই সফর অত্যান্ত তাতপর্যপূর্ন বলে আমি মেনে করি। সাথে সাথে তিনি আন্যান্য যেসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন সবই তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ভাল ফলই বয়ে আনবে আমার বিশ্বাস বাকীটা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ