Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

শতবর্ষের দুয়ারে ইতিহাস ঐতিহ্যের কুমিল্লা ক্লাব

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অনুষ্ঠানে আসছেন ত্রিপুরার কয়েকজন মন্ত্রী
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : শতবর্ষে পদার্পণ করেছে নান্দনিক সৌন্দর্যের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ক্লাব। আজ শুক্রবার ক্লাবের শততম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। ক্লাবের শতবর্ষ পূর্তি ঘিরে গত বছরের নভেম্বর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকমানের খেলাধুলাসহ বিভিন্ন উৎসবমুখর কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে। এখনো চলমান রয়েছে নানা কর্মসূচি। শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান হবে আগামী অক্টোবরে। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বেশ ক’জন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। কুমিল্লা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্যের দিক থেকে কুমিল্লা ক্লাবের গুরুত্ব দেশ-বিদেশেও রয়েছে। আর তাই ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানটি হবে জাঁকজমকপূর্ণ। শতবর্ষ উদযাপনের সার্বিক কার্যক্রম ঘিরে ইতোমধ্যে ক্লাবের ছয় শতাধিক সদস্যের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের বর্ণিল পর্দা উঠবে আগামী অক্টোবরে। শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান আগামী মার্চে করার চিন্তা-ভাবনা ছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষের। কিন্তু অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট প্রধান অতিথি ও ভারতের ত্রিপুরার কয়েকজন মন্ত্রীকে অতিথি করার বিষয়টি মার্চে নির্ধারিত না হওয়ায় মূল অনুষ্ঠানের সময় গড়ায় আগামী অক্টোবরে। আজ কুমিল্লা ক্লাবের শততম এজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এজিএম ঘিরেও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই সদস্যদের মাঝে। কারণ এজিএমের আলোচনায় ওঠে আসবে ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের তিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার নানাদিক। শতবর্ষ আগে কুমিল্লার ঐতিহাসিক বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও পাঠগারের (টাউনহল) পূর্ব পার্শ্বে ছিল বাংলো প্যার্টানের টিনের চৌচালা বিশিষ্ট একটি ঘর। নাম ছিল তার ‘দি ত্রিপুরা ক্লাব’। অভিজাত শ্রেণির লোকজনের চিত্ত বিনোদনের জন্য ১৯১৭ সালে এ ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন ত্রিপুরা মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর। সময়ের পরিক্রমায় সেই চৌচালা টিনের ঘর এখন তিনতলা এবং পাঁচতলা বিশিষ্ট নান্দনিক সৌন্দর্যের এক স্বপ্নপুরী। যার নাম কুমিল্লা ক্লাব। দেশ বিভাগ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ কুমিল্লা ক্লাব। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান সমাজ কল্যাণ বিভাগের রেজিষ্ট্রেশন অনুযায়ি দি ত্রিপুরা ক্লাব থেকে এটির নামকরণ হয় দি কুমিল্লা ক্লাব। বিলিয়ার্ডে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নের জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে দখলে ছিল কুমিল্লা ক্লাবের। ১৯৯২ সালে টিনসেডের চৌচালা ক্লাব ঘরটি ভেঙ্গে আধুনিক মানের ক্লাব ভবন গড়ে তোলা হয়।
বর্তমানে কুমিল্লা ক্লাব অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে। ক্লাবের বাইরের সৌন্দর্য যেমন সব মানুষের নজর কাড়ে তেমনি ভেতরের সৌন্দর্য আরও মনোমুগ্ধকর। ক্লাবের অত্যাধুনিক সভাকক্ষ, বিলিয়ার্ড রুম, টেবিল টেনিস রুম, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল, গেস্টহাউজ, কেন্টিন, পার্টিসেন্টার, কার্ডরুম, কনফারেন্স রুমসহ আরও অনেক কিছু ঘিরে ক্লাব সদস্য ও তাদের পারিবারিক সদস্যদের জন্য যেনো এক স্বপ্নপুরী। তিন ক্যাটাগরীতে বর্তমানে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৬০৯ জন। পদাধিকার বলে সভাপতির পদে রয়েছেন বর্তমান জেলা প্রশাসক মো: জাহাংগীর আলম। বর্তমানে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিপ্রেমী আবদুল হান্নান। তিনি এনিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুইবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক হাসান ইমাম মজুমদার ফটিকসহ কুমিল্লার ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ আরফানুল হক রিফাত দুইবার ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও বিলিয়ার্ড ব্যক্তিত্ব মরহুম জাহাঙ্গীর আলম খানসহ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল থেকে ক্লাবের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।  
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান জানান, ‘ইতিহাস ঐতিহ্যের দিক থেকে কুমিল্লা ক্লাব কুমিল্লার অহংকার। কুমিল্লা ক্লাব কেবল সদস্যদের চিত্ত বিনোদনেই সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে দেশের দুর্যোগ কালীন পরিস্থিতিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া সমাজের অসহায় দুস্থদের পাশে দাঁড়ায়। দেশ বিদেশের অভিজাত ক্লাবগুলোর সাথে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ক্লাবের রয়েছে সুসম্পর্ক। আগামী অক্টোবরে আমরা ক্লাবের শতবর্ষ জাঁকজমকভাবে উদযাপন করবো। কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহার ক্লাবের একজন সম্মানিত সদস্য। ওনার দিক নির্দেশনায় ও পরামর্শে কুমিল্লা ক্লাব আজকে নান্দনিক সৌন্দর্যের জায়গায়। শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে প্রধান অতিথি করার ব্যাপারে আমাদের এমপি সবধরণের চেষ্টা ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠানে ভারতের ত্রিপুরার কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। একশ’ বছরে পদার্পণ ঘিরে আমরা গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিক থেকেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। তারমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে স্লুকার টুর্নামেন্ট সম্পন্ন করেছি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা। ক্লাব সদস্য ও তাদের পরিবার নিয়ে দেশ-বিদেশে আনন্দ ভ্রমণ চলছে। চলতি বছরের অক্টোবরে শতবর্ষ উদযাপনের মূল অনুষ্ঠান হবে তিনদিন ব্যাপী। আর এ তিনদিন থাকবে বর্ণিল সব আয়োজন। আজকে ক্লাবের শততম বার্ষিক সাধারণ সভাটিও শতবর্ষ উদযাপনের গুরুত্ব বহন করছে। সবমিলে আমরা অপেক্ষার প্রহর গুনছি ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের মূল অনুষ্ঠান ঘিরে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ