Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সরকার শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখতে চায় না-প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে শিক্ষাঙ্গনে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার সরকার ক্যাম্পাসে কোন প্রকার অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছাত্রলীগ নেতাদের কথা বলবÑ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন প্রকার অস্ত্রের ঝনঝনানি আমরা দেখেতে চাই না। এ ধরনের কোন অনভিপ্রেত ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে ঘটুক, আমরা তা চাই না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অতীতে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তাদের ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানির জন্যই অনির্ধারিত বন্ধে বছরের পর সেশন জট ছিল। ছাত্র সমাজ তখন দুঃসময় কাটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেখা গেছে- সেশন জটের জন্য অনেকেই পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করেই চাকরির বয়স শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার গণভবনে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়কালে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
গণভবনের সবুজ ঘাসের লনের এই অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনও বক্তৃতা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ডায়াসে উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এবং দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।
’৯৬ সালে প্রথমবারের মত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর সেশন জট কমাতে তার সরকারের উদ্যোগ প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়মিত পরীক্ষা গ্রহণ, সেমিস্টার পদ্ধতির প্রচলন এবং জিপিএ সিস্টেম চালু করার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু লেখাপড়া করলেই চলবে না জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে এবং এসবের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি চাই তোমরা নিজ নিজ এলাকায় যাও বা যেখানেই যাও সেখানে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি নিয়ে জনমত সৃষ্টির জন্য কাজ করবে। সরকারের এই সামাজিক ব্যাধি এবং জঙ্গি উচ্ছেদ কার্যক্রমে এ সহযোগিতা করা হবে।
দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় থাকলেই কেবল কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব হবে, বলেন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিজেদেরকে একজন সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠায় সচেষ্ট হবার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি চাই তোমরা মনোযোগের সঙ্গে লেখাপড়া করে যথাসময়ে পরীক্ষায় পাস করবে। তোমরা সৎপথে থেকে জনগণের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের শিক্ষার পাশাপাশি নেতৃত্বেও গুণাবলী অর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের মধ্য থেকেই আগামীর নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে ২০১৩, ১৪, ১৫Ñ এই তিন বছর ভয়াবহ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে অভিযুক্ত করে বলেন, সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে তারা অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। শত শত নারী, শিশু, এমনকি স্কুলের ছাত্ররা পর্যন্ত তাদের আগুন সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে, তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস দমন ও জঙ্গি উচ্ছেদে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে বলেন, তার সরকার এই সামাজিক ব্যাধি দূর করতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোরহস্তে এগুলো দমনের উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সাথে সাথে আমরা দেশবাসী-মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলছি।
ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনে নিজের সম্পৃক্ততার ঘটনাগুলো তুলে ধরে বর্তমান প্রজন্মকে আদর্শচ্যুত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শতকের ষাটের দশকে স্বাধিকার আন্দোলনের উত্তুঙ্গ পর্বে কীভাবে বিদ্যালয়ের প্রাচীর টপকে মিছিলে যেতেন, তা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।   
নিজের সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ’৬২ সাল থেকে যখন আজিমপুর স্কুলে পড়তাম, স্কুলের হেডমাস্টার সাহেব খুব কড়া ছিলেন। তাই অনেক সময় দেয়াল টপকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতাম মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দিতে। ওই সময়ের মিছিলের সঙ্গে এখনকার মিছিলের পার্থক্যও বলেন তখনকার ছাত্রলীগের সংগঠক শেখ হাসিনা। এখন তো মিছিলের জায়গা খুবই কম। আমরা মিছিল করতাম সেই পুরান ঢাকায়। ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের সামনে থেকে আমরা মিছিল নিয়ে যাবই, যাতে যারা কারাগারে আছে, তাদেরকে উৎসাহিত করা যায়। চকবাজার, মৌলভীবাজার, নবাবপুর হয়ে পুরো এলাকা আমরা ঘুরতাম তখন। লম্বা পথ পাড়ি দিতাম মিছিল করতে করতে। সারাদিন আমরা মিছিলে থাকতাম। এভাবেই কিন্তু আমরা সংগ্রাম গড়ে তুলেছি।
সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদে থাকা শেখ হাসিনা ছাত্রলীগে বিভিন্ন পদে ও ছাত্র সংসদের দায়িত্বে থাকার কথাও বলেন। আমি ছিলাম ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী। বদরুন্নেছা কলেজ যেটা; সে সময় ছিল ইডেন ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ, সেই কলেজে আমি নির্বাচিত ভিপি ছিলাম। ছয় দফা দেবার পর যখন আব্বা, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সবাই কারাগারে বন্দি। ঠিক ওই সময় নির্বাচন করাটা কঠিন ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছিলাম। ওই কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
বিভিন্ন পদে ও ছাত্র সংসদের দায়িত্বে থাকলেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোনো পদ না পাওয়ার ‘দুঃখের’ কথাও শোনান শেখ হাসিনা। সে সঙ্গে তিনি বলেন, সত্য কথা বলতে কি, পদ পেলাম আর না পেলাম, সে চিন্তা করে রাজনীতি করিনি। আমরা রাজনীতি করতাম জনগণের জন্য, দেশের জন্য, ছাত্রদের সমস্যা আমরা তুলে ধরতাম।
ছাত্রলীগের দীর্ঘ সংগ্রামের ঐতিহ্য তুলে ধরে বর্তমান নেতাদের উজ্জীবিত করেন শেখ হাসিনা। আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন; সব কিছুতেই ছাত্রলীগের ছেলে জীবন দিয়েছে। অনেক আত্মত্যাগ করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের কল্যাণ ও সেবার করার পরামর্শ দিয়ে ছাত্রনেতাদের তিনি বলেন, তোমরা যারা রাজনীতি করছো, নেতৃত্ব দিচ্ছ, যে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছ, সেই সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে। বর্তমানের নানা কর্মকা-ের জন্য সমালোচিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা
একটা কথা মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে তোমরা পড়াশোনা কর, নিজের জায়গা, আপন জায়গা; প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে তার ব্যবস্থা করবে। প্রত্যেককে অন্তত তিনটি করে গাছ লাগানো, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোর খোঁজ নেওয়া, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। মতবিনিময়ের শুরুতেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে পরিচিত হন শেখ হাসিনা
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন এবং সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Aasma Kabiir Sworna ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০৬ পিএম says : 0
    সরকার থাকলে তো দেখতে চাইবে না। সরকার কই। সব জায়গায় তো আওয়ামীলীগে ভরা। দূরবীণ দিয়াও খুইজ্জা পাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • Parvez Islam ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০৭ পিএম says : 0
    If it is true , then BAN BCL
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ৬:১৪ পিএম says : 0
    If government has good intention this satrolig should has been close long time ago because of what it has done in the educational institution & all over the country, total terrorize ........
    Total Reply(0) Reply
  • ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:৫৩ পিএম says : 0
    করতে পারলে ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১০:৫৫ পিএম says : 0
    আমি নেত্রী হসিনার বরাবর বহুবার এই ছাত্র সংগঠন নিয়ে লিখেছি এবং বলেছি আপনি নিজ হাতে রশি না ধরলে ছাত্রলীগ ঠিক হবে না। আজ আমি খুবই আনন্দিত যে আমার নেত্রী হাসিনা তার ডান হাত ওবায়দুল কাদেরকে পাঁশে রেখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সহ সকল নেতাদের নিয়ে যে বক্তব্য রাখলেন এরপর আর কোন কথা হতে পারেনা। এখন পুলিশেরো আর কোন সংকোচ থাকলো না তারাও এখন থেকে এই ছাত্রলীগের কাওকে চাঁদাবাজি কিংবা অস্ত্রবাজী করতে দেখলে কিংবা জানতে পারলে সাথে সাথে এর প্রতিকার করতে পারবে। আর যদি পুলিশ নাকরে তবে তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করার অপরাধে অপরাধী হবে এটাই সত্য। পুলিশ এবং দলীয় নেতারাও যদি একযোগে নেত্রী হাসিনার দেখানো পথে হাটে তাহলে আওয়ামী লীগের উপর জনগণের যে বিদ্বেষ জন্ম হয়েছে সেটা কেটে যাবে এবং তাদের সহানুভূতি আওয়ামী লীগ পাবে। এখন আমি এবং দেশবাসী দেখতে চাই আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন কি ব্যাবস্থা নেয় তাদের দলের উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার জন্য এবং কিভাবে তারা আস্ত্রের ঝনঝনানি বন্দ করে। আর এটা বন্ধ করতে পারলে বাকি সন্ত্রাস মূল কর্মকান্ড এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে এটা নিশ্চিত। আল্লাহ্‌ এদেরকে নেত্রী হাসিনার দেখানো পথে চালার জন্য সহায়তা দান করুন। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • nasir uddin (al attiya market, doha qatar) ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫৮ পিএম says : 0
    SURE?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ