পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করছেন প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ। নিয়মানুযায়ী সার্চ কমিটির সদস্যদের দেয়া নামগুলো থেকে প্রেসিডেন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ সন্তোষ প্রকাশ করলেও সরকারবিরোধী দল বিএনপি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
গতকাল বুধবার সার্চ কমিটি ঘোষণার পর এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নতুন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গঠিত ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চায়। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট আলোচনা শুরুর পর একটি আশার আলো দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে, চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের কমিটি। কারণ, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি এগুলো সরকারের নিয়োগ।
অপরদিকে প্রেসিডেন্টের সার্চ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, এ সার্চ কমিটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো প্রশ্ন নেই।
এর আগে গতকাল দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সার্চ কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটিতে নাম দেয়ার এখতিয়ার শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টের। এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো নাম প্রস্তাব করা হয়নি। তিনি বলেন, কাকে কাকে তিনি (প্রেসিডেন্ট) মনোনয়ন দেবেন, সেটা তো একান্তই প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার। আমরা কোনো নাম দিচ্ছি না এবং আমরা এটাও প্রত্যাশা করছি না যে, আমাদের দলীয় কোনো ব্যক্তি এই সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
সার্চ কমিটিতে থাকছেন যারা : নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দু’টি সূত্র জানিয়েছে, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি ছাড়াও সার্চ কমিটিতে থাকছেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি শিরীন আখতার।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দু’টি সূত্র জানিয়েছে, সার্চ কমিটি গঠন করতে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের ফর্মুলা বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদও অনুসরণ করেছেন। তবে সুশীলসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং নারী প্রতিনিধি হিসেবে শিরীন আখতারকে অন্তর্ভুক্ত করে এর আকার বাড়িয়েছেন।
এ বিষয়ে কম্পোট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার কাছে মোটামুটি স্বাভাবিক বিষয়। এটি গুরুদায়িত্ব। এখানে একটি বিষয় আছে সেটা হলো, এই কমিটি যাদেরকে নির্বাচন করবেন তাদের হাতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনগুলো হবে। সুতরাং যাদেরকে নির্বাচন করা হবে, আইন যেমনই থাকুক না কেন তারপরও যাদেরকে আমরা নির্বাচন করব তাদেরকে ব্যক্তিগত সংস্কৃতি এবং তাদের যে আদর্শ সেটি অবশ্যই নির্বাচন পরিচালনাকালে কিছুটা হলেও কাজে লাগাতে হবে।
সার্চ কমিটিতে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শিরীন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, এই দায়িত্বকে সুন্দর এবং পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করছি। আশা করি, সুষ্ঠুভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারব। তিনি বলেন, আমার প্রতি অর্পিত সব দায়িত্বকেই আমি পবিত্র দায়িত্ব মনে করি। কারণ, এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমাদের দেশ পরিচালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি কোনো দায়িত্ব আমাদেরকে দেন, সেটিকে অবশ্যই আমি আমার অত্যন্ত পবিত্র দায়িত্ব বলেই সম্পাদন করতে সচেষ্ট হবো।
১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই শিরীন আখতার আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের সঙ্গে রয়েছেন। ২০১৪ সালে হলুদ দলের প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া জীবনবৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, শিরীন আখতারের বাবা মৃত আফসার কামাল চৌধুরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
সার্চ কমিটি কোন পর্যায়ে রয়েছে : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটির চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। সেখান থেকে একটি সারসংক্ষেপ আকারে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর সেটি আবার প্রেসিডেন্টের কাছে যাবে। প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পর ওই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি গঠনসংক্রান্ত গেজেট আজকের মধ্যেই হবে বলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেসিডেন্টের চিঠি : প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের জন্য গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শিগগিরই একটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করবে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে কমিশনের সদস্যদের নাম সুপারিশ করবে। এই নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। এতে ৫ জনের বেশি কমিশনার থাকবেন না, যারা আগামী ৫ বছর তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
নতুন কমিশন গঠন নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ মোট ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে সার্চ কমিটি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। ওই সূত্র আরো জানায়, সময়ের অভাবে এবার নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন বা অধ্যাদেশ জারি করছেন না প্রেসিডেন্ট। এর আগে ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। একজন কমিশনার বাদে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।