Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অবৈধভাবে দুই গ্রাহককে ৪২২ কোটি টাকা ঋণ এবি ব্যাংকের

বিধি লঙ্ঘন করায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী খেলাপি ঋণকে নতুন ঋণে রূপান্তরের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক আইন-কানুন তোয়াক্কা না করে মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া ঋণ খেলাপি দেখায়নি, বরং দুই গ্রাহককে অবৈধ সুবিধা দিতে বকেয়া ঋণগুলো একীভূত করে ৪২২ কোটি টাকার নতুন মেয়াদি ঋণে রূপান্তর করেছে। এ ধরনের অযাচিত সুবিধায় ব্যাংক-কোম্পানি আইন লঙ্ঘিত হওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখার গ্রাহক মেসার্স হুন্দাই মোটর্স লিমিটেডের তিনটি বকেয়া টাইম লোনকে একীভূত করে ২৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি একটি টার্ম লোনে রূপান্তর করা হয়েছে। একইভাবে মেসার্স ব্রিটিশ মোটর্স বাংলাদেশ লিমিটেডের আটটি বকেয়া টাইম লোনকে একীভূত করে ১২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার অপর একটি টার্ম লোন অনুমোদন করা হয়েছে। এসব টাইম লোন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকিং বিধি অনুসারে, মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের তিনটি হিসাব সন্দেহজনক এবং একটি মন্দ মানে খেলাপিযোগ্য। অর্থাৎ টার্ম লোনে রূপান্তরের পূর্বেই টাইম লোনগুলো খেলাপি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঋণগুলো খেলাপি না করে নতুন ঋণে রূপান্তর করা হয়েছে। যা ব্যাংক-কোম্পানি আইনের ১৯৯১ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত) ২৭কক(৩) ধারা এবং বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ১৪/২০১২-এর নির্দেশনার লঙ্ঘন।
এ প্রসঙ্গে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রেসিডেন্ট শামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার করপোরেট অ্যাফেয়ার্স এস এম আবুল কালাম আজাদ ইনকিলাবকে জানান, এমডি দেশের বাইরে আছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এবি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ৫৯৪তম সভায় ১২৭টি অ্যাজেন্ডা ছিল। এর মধ্যে দু’টি অ্যাজেন্ডায় ৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ফান্ডেড নতুন ঋণ, ১৫টি অ্যাজেন্ডার মাধ্যমে ২৪৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার ফান্ডেড ও ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার নন-ফান্ডেড ঋণের বিদ্যমান সীমা নবায়ন, ৯টি অ্যাজেন্ডার মাধ্যমে দুই হাজার ৫৫৬ কোটি ১০ লাখ টাকার ফান্ডেড ও এক হাজার ৯১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার নন-ফান্ডেড বৃহদাঙ্কের ঋণ, চারটি অ্যাজেন্ডার মাধ্যমে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পুনঃতফসিলিকরণ এবং একটি অ্যাজেন্ডায় ১৮৩ কোটি ২১ লাখ টাকার ঋণ অবলোপন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
পরিচালনা পরিষদের সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হুন্দাই মোটর্স ও ব্রিটিশ মোটর্স বাংলাদেশের খেলাপি ঋণকে নতুন ঋণে রূপান্তরের আপত্তি জানিয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার তিনটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিলির শর্ত ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, মোস্তফা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্টস, এসআর করপোরেশন এবং গ্লোব ইন্টারন্যশনালের ৯৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বকেয়া ঋণ এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ পাঁচ বছর মেয়াদি ৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট প্রাপ্তিসাপেক্ষে পুনঃতফসিলির অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদনপত্রে সুদসহ বকেয়া ঋণের ওপর ডাউনপেমেন্ট নির্ধারণের শর্ত দেয়। কিন্তু ব্যাংকের পরিষদ সভায় পুনঃতফসিলিকরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত ভেঙে সুদবিহীন আসল অংশের ওপর ডাউনপেমেন্ট নির্ধারণের অনুমোদন দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ