পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বহির্বিশ্বে এবং দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি পঁচাত্তরের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, ১৫ আগস্ট যখন ঘটেছিল তখন বাংলাদেশে খাদ্যাভাব ছিল না, সবকিছু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এসেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এগিয়ে যাবে এটা অনেকে ভাবতেই পারেনি। ঠিক তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল।
শেখ হাসিনা সব সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এখনো আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু ওই প্রশংসা শুনে মন গলা এটা আমার স্বভাব না। সেখানে সন্দেহের কিছু আছে কিনা এটা আমাদের দেখতে হবে। দেশ এভাবে এগিয়ে যাবে এটা অনেকে নিতে পারে না। আমাদের শত্রু বাইরে না। ঘরের শত্রু বিভীষণ। কীভাবে দেশের ক্ষতি করবে সেই চিন্তাতেই তারা থাকে, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় থেকে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, তাদের কাছে ক্ষমতাটাই সব। দেশ গোল্লায় যাক। কীভাবে দেশের ক্ষতি করবে, সেই চিন্তায় তারা থাকে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিগত সময়ে সহিংস আন্দোলন ও জঙ্গিবাদ সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অনেক দেশই এখানে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। কোনোভাবেই আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হতে দিব না। আমার সব সময় চিন্তা হয়, যখনই বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকে, স্বস্তিতে থাকে, উন্নতি হয়, তখনই যেন ষড়যন্ত্র আরও বেশি শুরু হয়। তারা ২০১৩, ১৪, ১৫-এর মতো আবারও কিছু করবে না, এই আশঙ্কা থেকেই যায়।
জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কোনো এক দেশের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ছিলÑ এ ঘটনা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেটা পারলাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। তাতে মনে হলো, কেউ কেউ খুশি হতে পারল না। এ রকম হবে, আমরা তাদের কাছে আকুতি করব, অমুকের কাছে চাইব, এটা চাইব। কিন্তু আমরা বাঙালি, এখনো তারা চিনতে পারেনি যে আমরা পারি।
হলি আর্টিজানে নিহত পুলিশ সদস্যদের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুজন পুলিশ জীবন দিয়ে গেছে। কিন্তু তারা অনেকগুলো মানুষকে বাঁচিয়ে গেছে, দেশের সম্মান বাঁচিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে কর্তব্যবোধ। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আপনারা দায়িত্ব পালন করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা যেন সুন্দর থাকে, সেদিকে নজর দিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে জনগণকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ মূল শক্তি। জনগণের মাঝে একটা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, মিথ্যা কথা বলে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কোমলমতি শিশুদের এখান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকা-ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে, এটা কখনো গ্রহণযোগ্য না। প্রতিটি এলাকায় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে হবে।
সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম হত্যাকা-ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার না হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট-খাটো ঘটনা হলেই দেখি হাউকাউ শুরু হয়ে যায়। একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করার পর কোনো মানবাধিকার সংগঠন বা কেউ এ ব্যাপারে কোনো শব্দ করে না। যারা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে হত্যা করল, মসজিদে আগুন দিল, মানুষ পোড়াল, তাদের বিরুদ্ধে অত বেশি সোচ্চার হতে দেখি না।
গাইবান্ধায় সাংসদ হত্যাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার বাসা থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কেন পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হলো? তার বিরুদ্ধে একটা অপবাদ দিয়ে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র তার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হলো। মনে হলো একেবারে পরিকল্পিতভাবে ছেলেটাকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেয়া হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে শুরু করে সাঘাটা, এসব এলাকায় ২০১৩ সালে চারজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, ফিশপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা যেখানে ঘটেছিল, সেখানে একজন সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে কোন পত্রিকায় কী লিখল, সেটা দেখে, সঠিক খবর না নিয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হলো? যার জন্য একজন সংসদ সদস্যকে জীবন দিতে হলো।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পুলিশের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া দিয়ে কথা বলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আরও দশটি অতিরিক্তি মহা-পরিদর্শকের পদ সৃষ্টির অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এসব দাবি-দাওয়ার বিষয়ে বলেন, পুলিশের কার্যক্রম পর্যালোচনা, মূল্যায়ন এবং আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের জন্যই এ বৈঠক করা হয়। কিন্তু এখানে বক্তৃতা ও দাবি-দাওয়া উত্থাপন ছাড়া কিছুই করা হয়নি। আগামীতে এই সভা রুদ্ধদ্বার করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখন দুটি বিভাগ হয়েছে; পদও বেড়েছে। সামঞ্জস্য রেখে যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, তা সরকার করবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলামও নতুন পদ সৃষ্টির পাশাপাশি আলাদা পুলিশ বিভাগ গঠনের কথা বলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম উন্নত প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশে একটি ‘দেশীয় সংস্করণ’ রয়েছে। তারা বেহেশতের লোভ দেখিয়ে তরুণদের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করে। তবে আমরা তাদের মেরুদ- অনেকটাই ভেঙে দিয়েছি।
মনিরুল ইসলাম পূর্ণাঙ্গ কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, কাউন্টার রেডিকালাইজেশন দরকার। দীর্ঘ সময় ধরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অভিযানে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বাহিনীর জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অতিরিক্তি ডিআইজি হাবিবুর রহমানও প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশীদ যানবাহনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে আমাদের নাগরিকদের সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা নিরাপত্তা দেবে। প্রয়োজন অনুসারে পুলিশ বাহিনীকে যানবাহন সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ছয় হাজার ৮৫৬টি গাড়ি কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।