পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুলানায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আবাসিক এলাকায় বিক্রি হচ্ছে মাদক : মাদকাসক্তের সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিক
আবু হেনা মুক্তি : বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে সংঘটিত অপরাধের অর্ধেকের বেশি করছে তরুণরা। স্কুল-কলেজপড়–য়া এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। মাদকের মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে এসব তরুণ-যুবক চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি এমনকি খুনের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে হরহামেশা। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ার আগেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় শিক্ষাব্যবস্থাসহ আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চরম হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। দেশে এত প্রকল্প চালু হচ্ছে, কিন্তু কি কারণে স্কুল-কলেজগামী ভবিষ্যতের কা-ারী ছাত্রছাত্রীরা বিপথগামী হচ্ছে তার অনুসন্ধান যেমন হচ্ছে না, তেমনি প্রতিরোধে নেয়া হচ্ছে না কোনো বাস্তবধর্মী প্রকল্প। অভিজ্ঞজনেরা এ নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো গবেষণা করছেন না। প্রতিরোধের উপায় খুঁজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারকে দিচ্ছে না কোনো দিকনির্দেশনা। ফলে যুবসমাজ এখন চরম অবক্ষয়ের মুখোমুখি। একে এই মুহূর্তে অভিজ্ঞ মহল দেশের জন্য দুর্যোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা ৩০ লাখ। যার মধ্যে খুলনা অঞ্চলে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মাদকাসক্ত রয়েছে। এর মধ্যে শুধু খুলনা মহানগরীতে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। মাদক সেবনকারী বেশির ভাগই তরুণ-যুবক। তালিকায় তরুণীরাও রয়েছে। মাদকের বাজার ধরে রাখতে বিক্রেতারা এখন স্কুল-কলেজকে বেছে নিয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের স্কুলব্যাগে করে মাদক বহন ও বিক্রি করতে পারে। যে কারণে মাদক বিক্রেতাদের এখন প্রধান টার্গেট শিক্ষার্থীরা। মাদকের মধ্যে ইয়াবা ও ফেনসিডিল সেবনকারীর সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, রাজনীতিক, সরকারি চাকরিজীবী, এমনকি চিকিৎসকরাও মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েছেন। একাধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এ খবর জানা গেছে।
একাধিক সূত্র জানায়, খুলনায় সাধারণত গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিল সেবনকারীর সংখ্যা বেশি। তবে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ইয়াবা নামের টেবলেট (মাদক) মাদকের মার্কেট দখল করে নিয়েছে। মাদকের রাজ্যে ইয়াবাই এখন সর্বনাশা নীল নেশার রাজা। বিশেষ করে অভিজাত ধর্ণাঢ্য পরিবারের তরুণ-তরুণীদের কাছে ইয়াবা নামের মাদক খুবই জনপ্রিয়। খয়েরি রঙয়ের ছোট আকারের ট্যাবলেট যা’ ইয়াবা বা বাবাসহ নানা নামে পরিচিত। খুলনায় তিন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যায়। গায়ে ‘ওয়াই’ লেখা ইয়াবা খুচরা বাজারে প্রতি পিস ১৮০-২০০ টাকা, ‘আর সেভেন’ লেখা ইয়াবা ৫০০-৫৫০ টাকা। হেরোইন এক পোটলা ৫০ টাকা, গাঁজা এক পোটলা ৫০ টাকা এবং ফেনসিডিল ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ‘এম-কে’ এবং ‘এসপি’ লেখা দুই ধরনের ফেনসিডিল বাজারে পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, মাদক নির্মূলে প্রশাসনকে সততার সাথে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেকটি সভা-সমাবেশে কথা বলতে হবে। এ ব্যাপারে দল-মতের ঊর্ধ্বে সবাইকে এক কাতারা আসতে হবে। সূত্রমতে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সব পথেই অবৈধভাবে মাদক প্রবেশ করছে। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলে যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ফেনসিডিল ও হেরোইন আসছে এবং উদ্ধারের ঘটনাও ঘটছে। বাসে ও ট্রেনে মাদকদ্রব্য বিভাগ ও জেলা শহরগুলো থেকে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করছে। অজ্ঞান করার ওষুধ হিসেবে আমদানি করা প্যাথেডিন, মরফিনজাতীয় দ্রব্য মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অবাধে ও প্রকাশ্যে। খুলনা অঞ্চলে প্রতিবছর সীমান্তের চোরাপথে অবৈধভাবে প্রায় হাজার কোটি টাকার মাদক আসছে। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে মাদকাসক্তের সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিক। মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, আইসপিলসহ নানা ধরনের মাদকে সয়লাব। খুলনা অঞ্চলের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সর্বনাশা মাদক ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এ কথা এখন পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অকপটে স্বীকার করছেন। হাত খরচের টাকা বেশি পাওয়া ছেলে-মেয়েরাই এখন ইয়াবা নেশায় আসক্ত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধভাবে আসা মাদকের শতকরা ১০ ভাগ উদ্ধার করতে পারে এবং শতকরা ৯০ ভাগ মাদকই মাদকসেবীদের উদরে চলে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকাসহ একাধিক স্থানে বিক্রি হচ্ছে মাদক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় অসাধু সদস্যের যোগসাজশে মাদক বিক্রি হলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। প্রথমদিকে ইয়াবা সীমাবদ্ধ ছিল উচ্চবিত্তদের মধ্যে। এখন সমাজের সব শ্রেণির মানুষই এই নেশায় আসক্ত। বিস্তারের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে প্রশাসনের রহস্যময় নীরবতা। এ ছাড়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে কথিত রাজনীতিকদের অনেকের নামই উঠে এসেছে, যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।